মোতাহার ও ফিরোজ রশীদের বক্তব্য প্রত্যাহার করা হবে: স্পিকার

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সরকার ও বিরোধী দলীয় দুই সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন ও কাজী ফিরোজ রশিদের অসংসদীয় বক্তব্য প্রত্যাহার করা হবে।
আগের দিনের বক্তব্যের সূত্রধরে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সংসদ অধিবেশনের শুরুতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হকের দেওয়া বক্তব্যের পর স্পিকার বিষয়টি জানান।
এ সময় স্পিকার বলেন, গতকাল (সোমবার) রাষ্ট্রপতির ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন বক্তব্য দানকালে রাষ্ট্রপতির ভাষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, এমন যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন এমন সব অপ্রাসঙ্গিক কথা এক্সপাঞ্চ করা হবে। একইসঙ্গে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ যে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেছেন তাও প্রত্যাহার করা হবে।
এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাড়িয়ে মুজিবুল হক বলেন, মোতাহার হোসেন সাহেব বলেছেন, এরশাদ সাহেবকে ভোটে হারিয়েছি এবং জামানত বাজেয়াপ্ত করেছিলাম। এই মিথ্যা ও বানোয়াট কথা প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটা মহাজোট হয়েছিল। জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল এবং সব সময় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সংসদের ভেতরে ফাইল ছোড়াছুড়ি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, পার্লামেন্ট বর্জন, অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করা, এমর খারাপ প্রাকটিসে জাতীয় পার্টি নেই। আমরা প্রমাণ করেছি, একটি কার্যকর বিরোধী দল হবার ও একটি ভালো কালচার সৃষ্টির চেষ্টা করছি।
জাপা মহাসচিব বলেন, ২০১৪ সালে এক পর্যায়ে জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করে। শেষ মুহূর্তে পার্টির চেয়ারম্যান সমস্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এ নির্বাচনে বিএনপিসহ কোনো দলই আসেনি। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না আসলে বাংলাদেশে একটি সাংবিধানিক শুন্যতার সৃষ্টি হতো, অসাংবিধানিক অবস্থার সৃষ্টি হতো। এমতাবস্থায় বেগম রওশন এরশাদ এবং আমাদের কয়েকজন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মোহম্মদ এরশাদের সঙ্গে বিট্রে করে, বেঈমানি করে বিদ্রোহ করে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচন করেছিলাম।
সে নির্বাচনে এরশাদ সাহেব লালমনিরহাট, রংপুরসহ কয়েকটি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন এবং পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তিনি রংপুরেও নির্বাচন করতে চাননি, আমরা শুধুমাত্র লিগাসি মেইনটেন করার জন্য, এই সংসদে এরশাদ সাহেবের মতো লোক আছেন সেটা দেখানোর জন্য, সেদিন আমরা চেষ্টা করে রংপরে এরশাদ সাহেবকে বিজয়ী হবার ব্যবস্থা করেছিলাম।
এ সময় এমপি মোতাহার হোসেনের দিকে আঙ্গুল তুলে মুজিবুল হক বলেন, ২০১৪ সালে যদি আমরা নির্বাচনে না আসতাম তাহলে উনি প্রতিমন্ত্রী তো হতে পারতেন না, এমনকি এমপিও হতেন না। তিনি প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন আমরা নির্বাচনে এসেছিলাম বলে। এরশাদ সাহেব লালমনিরহাটে নির্বাচন তো করেননি। প্রত্যাহার করেছিলেন। তার মতো লোক কীভাবে বলে এরশাদ সাহেবকে তিনি পরাজিত করেছিলেন। আমি কি বলতে পারি প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনে আমি ফেল করিয়েছি। এত বড় দুঃসাহস তার হয় কী করে?
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনের বক্তব্যে সংসদ অধিবেশনে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিগত সংসদ নির্বাচনে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত সংক্রান্ত এক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। তখন সংসদ অধিবেশন পরিচালনা করছিলেন ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু। মাইক ছাড়াই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে অধিবেশন কক্ষে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর তিনি অধিবেশন পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এনএইচবি/এমএমএ/
