২০২৪ এর আগস্টেই শেষ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণকাজ

যমুনা নদীর উপর নির্মাণাধীন রেলসেতু দেড় কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তর পাশে যমুনা রেল সেতুর ১২টি স্প্যান ইতিমধ্যে বসানো সম্পন্ন হয়েছে। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আশা আগামী বছরের আগস্টের মধ্যেই এই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে।
বর্তমান যমুনা নদীর উপর থাকা বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। যার মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন করেছে।
রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু পূর্ব স্টেশনের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। এখান থেকে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতে একটি ট্রেনের অন্তত ২০ থেকে ২২ মিনিট সময় লাগে। নতুন রেল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে এবং সেতু চালু কোনো রকম বাধা ছাড়াই ৬ থেকে ৭ মিনিটে সেতু পার হওয়া যাবে।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরের পর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দেখতে সরেজমিন যমুনা সেতুর পূর্ব পারে গিয়ে দেখা যায়, দ্রুত গতিতে কাজ চলছে।
রেল মন্ত্রণালয় এবং বঙ্গবন্ধু রেল সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার রেল সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রকল্প ২০১৬ সালের ১২ জুন। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। পরে প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে প্রথম সংশোধন করা হয় ২০২০ সালের ৩ মার্চ। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্পের প্রথম অনুমোদনের সময় এর নির্মাণ কাজের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সংশোধিত প্রকল্পে সেই মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। এর লায়াবিলিটি কাল আরও এক বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
যমুনা নদীতে রেল সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে মোট ৫০ টি পিয়ারের (পিলার) উপর। বসবে ৪৯ টি স্প্যান। ইতিমধ্যে ১২ টি স্প্যান বসানো সম্পন্ন হয়েছে। দুটি প্যাকেজে নির্মাণাধীন সেতুর ৫০টি ফাউন্ডেশন ড্রাইভিং (স্টিল পাইপ শিট পাইল-এসপিএসপি) পিয়ারের মধ্যে ৪১টির ড্রাইভিং কাজ শেষ হয়েছে। এই ৪১টি পিয়ারের মধ্যে ৩৩টি পিয়ারের এসপিএসপি ইনসাইড কংক্রিটং এবং ৮ টি পিয়ারের ইনসাইড কংক্রিটিংয়ের কাজ চলছে। ২৯টি পিয়ারের টপ স্ল্যাব কংক্রিটংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ৩২ থেকে ৫০ নম্বর ১৯টি পিয়ার ক্যাপের কংক্রিটিং কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে আরও জানা গেছে, ইতিমধ্যে পসেতুর উভয় অংশের এ্যাপ্রোচের কাজ চলছে। এ ছাড়া, ৪৯টি স্প্যানের মধ্যে ২৪টি স্প্যান প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছেছে। বাকী ২৫টি স্প্যানের কাজ চলছে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন রাজশাহী থেকে সরাসরি যমুনা বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর পশ্চিম প্রান্তে সিরাজগঞ্জ অংশে পৌঁছেন। সেখান থেকে স্পিডবোটে করে সেতুর কাজ দেখতে দেখতে পূর্বপ্রান্তে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর প্রান্তে আসেন।
বিকালে সেখানে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে। আগামী বছরের শেষের দিকে সেতুটি ট্রেন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে তাহলে যথাসময়েই কাজ শেষ হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে, নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, সেতুর পূর্ব প্রান্তে প্রথম প্যাকেজের কাজ দ্রুত চলছে। কিন্তু দ্বিতীয় প্যাকেজের কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথম প্যাকেজটি যারা করছেন তাদের ইকুইপমেন্ট তৈরি ছিল।
আর দ্বিতীয় প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সবকিছু সংগ্রহ করতে হয়েছে। এ কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে এখন কাজ দ্রুত চলছে। এখন আর কোন সমস্যা নেই।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। এই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হচ্ছে চার হাজার ৬৩১ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। জাইকার অর্থাশন হচ্ছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি ১৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।
এনএইচবি/এমএমএ/
