সম্পদশালীদের কর আদায় নিশ্চিতের দাবি স্যাপির

ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও অসমতা দূর করতে সম্পদশালীদের কাছ থেকে কর আদায় নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সাউথ এশিয়া অ্যালায়েন্স ফর পভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি)।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশ থেকে এই দাবি জানায় স্যাপি।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) নির্বাহী পরিচালক ও স্যাপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর এম এম আকাশ, জনউদ্যোগের আহবায়ক ডা. মুশতাক হোসেন, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন ও রুহুল আমিন, জনউদ্যোগের সমন্বয়কারী তারিক হোসেন মিঠুল, ইনসিডিন বাংলাদেশের অপারেশন চিফ মুশফিকুর রহমান সাব্বির প্রমূখ। বিএনপিএস’র পরিচালক শাহনাজ সুমির পরিচালনায় সংহতি সমাবেশের প্রতিবাদী গান করে গানের দল ‘মাদল’।
সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন- ‘দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠী জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈষম্যের শিকার। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীজুড়েই ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য বেড়েই চলেছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো যাচ্ছে না। অথচ করোনার সময় মুষ্টিমেয় ব্যক্তি আরো ধনী হয়েছে। বাংলাদেশে শ্রমিক ও নারীরা তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। এটা মানবাধিকার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, নারী আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী। ওর্য়াল্ড ইকোনোমিক ফোরামের মত ফোরামগুলো ধনীদেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। আমরা এ ধরণের অর্থনৈতিক আলোচনাকে প্রত্যাখ্যান করি। ধনীদের ওপর যদি উপযুক্ত কর আরোপ করা যায় তাহলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা সম্ভব হবে।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, বিশ্ব জনসংখ্যার যে অর্ধেক অংশ চরম দরিদ্র, তাদের নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের মোট সম্পদের মাত্র দুই শতাংশ। অন্যদিকে, বিশ্ব জনসংখ্যার যে ১০ শতাংশ মানুষ সবচেয়ে ধনী তাদের দখলে বিশ্বের ৭৬ শতাংশ সম্পদ। অতিমারীসহ নানান সংকটের ফলে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ যখন নতুন করে দরিদ্রে পরিণত হয়েছে, ঠিক সেই সময়ে অল্প কিছু সংখ্যক মানুষের হাতে বেশিরভাগ সম্পদ কুক্ষিগত হয়েছে। বিশেষত, সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ অতিমারিকালে এটি সবচাইতে বেশি ঘটেছে। তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে ডলার সংকট তৈরি হয়েছে। ভারসাম্যহীনতার কারণে শীর্ষ এক শতাংশের হাতে সকল সম্পদ কুগিত হচ্ছে। এই ভারসাম্যহীনতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে ধনীদের সম্পদের ওপর কর আরোপ করতে হবে।
শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকের সবাই দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। অথচ মালিকেরা শ্রমিকের সস্তা শ্রম ও লুটপাটের মাধ্যমে তাদের সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশকে ঢেলে সাজাতে হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে হবে। ধনীদের ওপর প্রগতিশীল সম্পদ কর আরোপ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে হবে।
সমাবেশ অন্য বক্তারা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এবং অন্যান্য বিশ্বের সরকারসমূহকে ধনী এবং দরিদ্রদের মধ্যকার ব্যবধান কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, মজুরী বৈষম্য কমানো, সকলের জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীকে সুরা প্রদানের মাধ্যমে জলবায়ূ পরিবর্তনের বিপর্যয় রোধ করার দাবি জানান।
এনএইচবি/এএস
