আজ বরিশাল মুক্ত দিবস

আজকের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বরিশাল মুক্ত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বরিশাল।
মুক্ত দিসব উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় স্মৃতি ৭১, নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমি ওয়াপদা কলোনির স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ ছাদেকুল আরেফিন, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান, জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম।
পরে আওয়ামী লীগ বরিশাল জেলা ও মহানগর সকাল ৯ টায় স্মৃতি ৭১, নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমি ওয়াপদা কলোনির স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ আরও অনেকে।
এ ছাড়া ৫টায় বিজয় বিহঙ্গ চত্বরে বরিশাল মুক্ত দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বরিশাল জেলা সংসদ ও বরিশাল নাটকের আয়োজনে মোমবাতি প্রজ্বালন, আলোচনা, আবৃত্তি, সংগীত অনুষ্ঠিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে বিকাল ৪টায় সিঅ্যান্ডবি রোড, চৌমাথায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম শিশু পার্ক উদ্বোধন করা হবে।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী গণহত্যা শুরুর পর মুক্তিযোদ্ধারা তৎকালীন পুলিশ সুপার ফখরুল ইসলামের কাছ থেকে চাবি নিয়ে বরিশাল পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগার ভেঙে গুলি, রাইফেল নিয়ে যায়। ২৬ মার্চ মেজর এম এ জলিলকে উজিরপুরের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়। সকালে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্যোগে পরিস্থিতি মোকাবিলায় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক নুরুল ইসলাম মঞ্জুকে বেসামরিক প্রধান ও মেজর এম এ জলিলকে সামরিক প্রধান করে বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণাঞ্চলীয় স্বাধীন বাংলা সরকারের সচিবালয়। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করা হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অন্তর্ভুক্তি ও ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা হতো।
১৮ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদাররা আকাশ পথে বরিশালে প্রথমে হামলা চালায়। পরে ২৫ এপ্রিল জল, স্থল ও আকাশ পথে দ্বিতীয় দফা আক্রমণ হয়। আর হানাদার বাহিনী চালায় হত্যাযজ্ঞ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রথমে অশ্বিনী কুমার হলে অবস্থানের পর জিলা স্কুলে এবং সর্বশেষ ওয়াপদায় (বর্তমান আঞ্চলিক পানি উন্নয়ন বোর্ডের কম্পাউন্ড) তাদের হেড কোয়ার্টার গড়ে তোলে। এখানে বাংকার খুঁড়ে ভারী অস্ত্রের সমাবেশ ঘটায় তারা। এখানেই তৈরি করা হয় নির্যাতন কক্ষ। ৯ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল ক্যাপ্টেন শাহজাহানকে বরিশাল সাব সেক্টরের দায়িত্ব দিয়ে বরিশাল পাঠান।
এ সময় তার নতুন নামকরণ করা হয় ক্যাপ্টেন ওমর। নভেম্বর মাস থেকে মুক্তিযোদ্ধারা থানাগুলোতে আক্রমণ চালাতে শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ বরিশালে কারফিউ ঘোষণায় মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তবে সড়ক পথ চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় পাকিস্তানি হানাদাররা পালানোর পথ হিসেবে জল পথকে বেছে নেয়। ৮ ডিসেম্বর ভোরের মধ্যে তারা বরিশাল ছাড়ে। সে পথেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় মুলাদীর কদমতলা নদীতে লঞ্চ, চাঁদপুরের মেঘনা মোহনায় কিউ জাহাজসহ গানবোট ও কার্গো ধ্বংস হয়েছিল। ৮ ডিসেম্বর প্রথমে সুলতান মাস্টার মুক্ত বরিশাল শহরে ঢুকে কোতোয়ালি থানা দখল করেন। এভাবে একে একে বরিশাল শহরের বিভিন্ন স্থাপনা দখলে নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।
এসএন
