সামুদ্রিক শৈবাল চাষে বিপুল সম্ভাবনা
বিপুল সম্ভাবনাময় সামুদ্রিক শৈবাল চাষে সহায়তা দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী দিনের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে এই সামুদ্রিক শৈবাল চাষ।
সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে শৈবাল চাষের ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই এ খাতের সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা দেওয়ার উদ্যোাগ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট।
উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে আগ্রহী ও যোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাকে বাংলাদেশের শৈবালের সম্ভাবনাময় বিবিধ খাতে কার্যকরী বিনিয়োগ ও অংশগ্রহণ করানো। এই কার্যক্রম সফল করার লক্ষ্যে যোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট দেবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, এই খাত বিপুল সম্ভাবনাময়। স্থানীয় পর্যায়ে কিছু এনজিও কাজ করছে। এছাড়া দুটি বড় ফুড ইন্ডাস্ট্রিও হয়েছে কক্সবাজারে। তারা স্থানীয় চাষিদের প্রণোদনা দিয়ে শৈবাল চাষ করাচ্ছে। পটুয়াখালীর খেপুপাড়াতে একটি এ সংক্রান্ত গবেষণাকন্দ্রও স্থাপন করা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডস এই শিল্পের বিকাশে বারবার তাগাদা দিচ্ছে জানিয়ে ড. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের এই খাতের বিপুল সম্ভাবনা দেখে নেদারল্যান্ডস দুই বছর আগে থেকে আমাদের তাগাদা দিচ্ছে। সর্বশেষ এখাতের গবেষণায়ও দেশটি অর্থায়ন করেছে।
বাংলাদেশে এমন প্রজাতিরও শৈবাল আছে যেগুলো ১০০ গ্রামের দাম ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা এমনটা জানিয়ে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বহু সংখ্যক প্রজাতির শৈবালের মধ্যে কয়েকটি প্রজাতির ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আমরা ইতিমধ্যে একটি প্রযুক্তিও মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করেছি।
ব্যাপক প্রচারের গুরুত্ব তুলে ধরে ড. শফিকুর রহমান বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রাণলয় এ বিষয়ে কাজ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে। আগামী মাসে দুটি মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা কম সেসব এলাকায় শৈবাল চাষ করা সম্ভব।
সামুদ্রিক শৈবালে প্রচুর প্রোটিন রয়েছে জানিয়ে সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান জানান, মাছ ও পশু খাদ্য ছাড়াও কিছু প্রজাতির শৈবাল ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও কাজে লাগে। এছাড়া শৈবালে আগার রয়েছে যা ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে আগার আমদানি করে ফুড ইন্ডাস্ট্রিগুলো। এছাড়া কসমেটিক্স শিল্পে সামুদ্রিক শৈবাল ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
সম্ভাবনাময় সামুদ্রিক শৈবাল
সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার ১৪৭টি উপজেলায় বসবাসকারী প্রায় তিন কোটি মানুষের অধিকাংশই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের সঙ্গে জড়িত। এ পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়ার অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের উপকূলে শৈবাল চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
বাংলাদেশে শৈবালের উৎপাদন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে অতি সহজেই করা সম্ভব। এর চাষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। উপকূলীয় জনগণের জন্য সহজ ও নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীকর্মীর সহজ কর্মসংস্থান হতে পারে। তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই দেখা যাবে এখাত দেশের অর্থনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
পাঁচ শিল্পে ব্যবহৃত হয় সামুদ্রিক শৈবাল
নতুন এই গবেষণায় বাংলাদেশে যেসব প্রজাতির শৈবাল পাওয়া গেছে সেগুলো মোটা দাগে পাঁচটি শিল্পে ব্যবহার উপযোগী। বর্তমানে আমদানি করে কার্যক্রম চালায় ইন্ডাস্ট্রিগুলো।
মাছের খাবার: বাংলাদেশে প্রাপ্ত কিছু প্রজাতির শৈবালে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে যা ফিশ ফিড মাছের মাছের খাবার তৈরি শিল্পে কাজে লাগতে পারে। বর্তমানে ফিশ ফিড ইন্ডাস্ট্রি ফিশ অয়েল আমদানি করে। শৈবাল এক্ষেত্রে খুব ভাল বিকল্প হতে পারে।
পশুখাদ্য: পশুখাদ্য বা এনিমেল ফিড ইন্ডাস্ট্রিতে শৈবালের অনেক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত কিছু প্রজাতির শৈবালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা এনিমেল ফিডের মান বৃদ্ধিতে ও প্রাণির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে এনিমেল ফিডের বিশাল বাজার রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ফুড সাপ্লিমেন্ট: বাংলাদেশে প্রাপ্ত কিছু প্রজাতির শৈবালে প্রচুর পরিমাণ আগর-আগর রয়েছে। বাংলাদেশের ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে বর্তমানে আগর-আগর আমদানি করে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া সামুদ্রিক শৈবাল সরাসরি বা প্রক্রিজাত করে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করছে। তাই বাংলাদেশের ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রক্রিয়াজত শৈবাল ও আগর-আগরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কসমেটিক উপাদান: বাংলাদেশের শৈবালে প্রচুর জেলিং এজেন্ট রয়েছে যা বাংলাদেশের কসমেটিস্ক ইন্ডাস্ট্রিতে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে আমদানি করে ব্যবহৃত হচ্ছে।
উচ্চমাত্রার কসমেটিক উপাদান: বাংলাদেশের শৈবালে প্রচুর পরিমাণে উচ্চমাত্রার উপাদান রয়েছে যা স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টসহ বহুবিধ কসমেটিক প্রোডাক্ট তৈরিতে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সামুদ্রিক শৈবাল থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন ও পরিচালনার জন্য হ্যাচারি, ফার্মিং, প্রসেসিং প্লান্ট প্রয়োজন হবে। এসব বিষয়েই মূলত সহায়তা দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আরইউ/