পরিবেশ দূষণে দেশে ৩২ শতাংশ মানুষের মৃত্যু

পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে ৩২ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া বায়ু দূষণের কারণে বছরে ক্ষতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৯ শতাংশ।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংক কান্ট্রি ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করে।
বিশ্বব্যাংকের টেকশই উন্নয়নবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক জন রুম অনুষ্ঠানের মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বছরে ক্ষতি হয় ১ বিলিয়ন ডলার। মোট জিডিপির যা প্রায় শূন্য দশমিক ৭ ভাগ। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে অর্থায়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন এসডিজির সাবেক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ এবং পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়ান সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্টের জন রুমী। মূল আলোচক ছিলেন— ফ্রেন্ডশিপের নির্বাহী পরিচালক রুনা খান, এসকেবি টেক ডেভেলপমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বশির কবীর, নেদারল্যান্ড অ্যাম্বাসির ফাস্ট সেক্রেটারি ফর্করেট জিজেডি জগার এবং কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট অফিসের ক্লাইমেট অ্যান্ড এনভারমেন্টের টিম লিডার অ্যানেক্স হারভে। বক্তব্য দেন বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান চেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্য মেয়াদে জলবায়ু বিনিয়োগ ব্যয়ের জন্য প্রাক্কলিত কমপক্ষে ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের জন্য সরকারি বেসরকারি অর্থায়নের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা জোরদার করা প্রয়োজন।
সীমিত আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় সরকারি অগ্রাধিকার পুর্নবিন্যাস করতে হবে। বাজেটের ২০ শতাংশ জলবায়ু সম্পর্কিত বিনিয়োগের জন্য নির্ধারণ করলে জিডিপির ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। জলবায়ু অর্থায়ন বাড়াতে সরকারকে ভর্তুকি বিলোপ, গ্যাসের দাম যৌক্তিক করা, বিভিন্ন পথে জ্বালানি পরিবহনের উপর অভিন্ন মূল্য সংযোজন এবং পর্যায়ক্রমে কার্বন কর আরোপ করতে হবে। এতে যানজট কমাবে এবং পুর্নবণ্টন জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমের জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে সহায়ক হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের ইতোমধ্যে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাকেন্দ্রিক প্রভাবসহ বেশিরভাগ দরিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষের ওপর বৈরিভাবে তীব্র প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া পরিবেশ দূষণ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে উন্নত বায়ুর মান থেকে জলবায়ু কার্যক্রমের সবচেয়ে সুদূর প্রসারীসহ সুবিধা আসতে পারে। মূলত জলবায়ু ঝুঁকির প্রতি সহনশীলতা বাড়িয়ে এ সব উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অনেক সুযোগ রয়েছে। দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র বিমোচনের ধারা অব্যাহত রাখতে এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় বিনিয়োগ বাড়ানো এবং সংস্কার ত্বরান্বিত করাই হবে মৌলিক কাজ।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এ সব ঝুঁকি ও সুযোগ চিহিৃত করেছে এবং এগুলো মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার দরকার রয়েছে। এই কান্ট্রি ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট রিপোর্ট (সিসিডিআর) নিকট মেয়াদের নীতি এবং বিনিয়োগ অগ্রাধিকারগুলো চিহিৃত করেছে, যা বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের প্রতি সহনশীলতা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
উন্নয়ন অর্জনের জন্য অধিকতর সবুজ, সহনশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি মডেলে রুপান্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। নগর উন্নয়নে জরবায়ু-বান্ধব আঞ্চলিক কৌশল একটি অগ্রাধিকার। বাংলাদেশকে অবশ্যই একই সঙ্গে দারিদ্র্র হ্রাস এবং কৃষি, পানি এবং জমির ব্যবহার পদ্ধতিতে বিশেষ করে উচ্চ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চল এবং নগর ও গ্রামীণ এলাকায় সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ (বিডিপি ২১০০) বাস্তবায়ন পানি, বাস্তুসংস্থান, পরিবেশ এবং ভূমি সম্পদের টেকসই উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে। স্থানীয়ভাবে অভিযোজিত এবং স্থানীয় সমাধান সহনশীলতা গড়ে তুলতে অপরিহার্য হবে। দীর্ঘমেয়াদি নিম্ন কার্বন রুপান্তর কর্মসংস্থানের ও সামাজিক ব্যয়ের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। উভয় বিষয়েই সতর্কতার সাথে ব্যবস্থাপনার দরকার হবে।
আরও বলা হয়েছে, জ্বালানি, পরিবহন, শিল্প এবং কৃষি থেকে কার্বন নিঃসরণ তুলনামূলক কম খরচে করা যেতে পারে এবং বায়ু দূষণ, স্বাস্থ্য সেবা ব্যয় এবং কর্মসংস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্যসহ সুবিধা বয়ে আনতে পারে। বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে কার্বন নির্গমন কমানোর উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে, যা উন্নয়ন সুবিধা বয়ে আনবে, কার্বন-নিবিড় বিনিয়োগ সীমিত করবে এবং পতিত সম্পদের ঝুঁকি প্রশমন করবে। সব খাতে জ্বালানি দক্ষতা এবং সংরক্ষণ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব এবং একটি অগ্রাধিকার। পরবর্তী এক দশকে পরিবহন খাত ১৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের কারণ হতে পারে, ফলে এ খাতে কার্বন নির্গমন কমানোর পদ্ধতিগত পরিবর্তন দরকার।
দ্রুত নগরায়ণ, আয় বৃদ্ধি এবং খাদ্যাভাস পরিবর্তন অধিকতর দক্ষ, নিম্ন-কার্বন কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা এবং একইসঙ্গে সহিষ্ণুতা ও গ্রামীণ আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করবে।
মূল প্রবন্ধে জন রুমী বলেন, জলবায়ু কার্যক্রমের জন্য আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার উন্নতি এবং বিদ্যমান নীতি ও কার্যক্রমের কার্যকর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে জরুরি চ্যালেঞ্জ। পরিবেশ পণ্য ও সেবায় ট্যারিফ ও বাণিজ্য সংক্রান্ত অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা হ্রাস এ ধরনের পণ্য ও সেবার বৈশ্বিক ভ্যালু চেইন বাংলাদেশের অংশগ্রহণে সহায়তা করতে পারে। জলবায়ু কার্যক্রমে বেসরকারি খাতের ভূমিকা বাড়ানোর উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। আর্থিক খাত সবুজায়নের নীতি বাস্তবায়নসহ এ খাতের বিদ্যমান দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। জরুরি প্রয়োজনীয়তা, মাত্রা ও জটিলতা বিবেচনায় জলবায়ু পরিবর্তন কার্যক্রম পরিচালনা এবং মনিটরিংয়ের জন্য এনজিওদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের প্রয়োজন হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা রাজনৈতিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছি। আমাদের আগামী প্রজন্ম তরুণদের দক্ষ জনশক্তি হিসাবে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার ব্যাপক সচেতন রয়েছে। কয়েকদিন আগে সিত্রাং ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করা হয়েছে। তারও আগে করোনা মোকাবিলা করা হয়েছে।
আরএ/
