আজ বিশ্ব খাদ্য দিবস, উৎপাদনে জোর সরকারের
আজ বিশ্ব খাদ্য দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়, ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন’।
পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবস খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর পর বিশ্ব যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ঠিক তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পাল্টে গেছে বিশ্ব পরিস্থিতি। পুরো বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। খাদ্যের সংকটকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে সারা বিশ্বে খাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ার আভাস দিয়েছে জাতিসংঘ ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত কিছু দিন ধরেই তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে, সংবাদ সম্মেলনে এবং দলীয় ফোরাম ও সরকারি বিভিন্ন সভায় খাদ্য উৎপাদনে জোর দেওয়ার উপর বার বার আহ্বান জানাচ্ছেন।
জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ডেভিড বিসলি বলেছেন, ‘বর্তমানে খাদ্য পণ্যের মূল্য যে হারে বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্য সংকট শুরু হবে। ফলে শিগগিরই বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এ আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্তত ৮২টি দেশের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে। তাদের মধ্যে অন্তত ৩৪ কোটি ৫০ লাখ চুড়ান্ত খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’
বিশ্বকে সতর্ক করে ডেভিড বিসলি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে শিগগিরই এই সংখ্যার সঙ্গে আরও ৭০ কোটি মানুষ যুক্ত হবেন। তাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের অবিলম্বে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, ‘এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্তত ৪৫টি দেশে দুর্ভিক্ষ পরিস্থতির সৃষ্টি হয়েছে। মহামারির আগ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার যে ঢেউ ছিল, মহামারির প্রভাবে তা সুনামিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে খাদ্য পণ্যের মূল্য যে হারে বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্য সংকট শুরু হবে। ফলে শিগগিরই বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগের প্রধান মার্টিন গ্রিফিথ জানান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেন, সোমালিয়া, আফগানিস্তানসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কিছু দরিদ্র দেশে খাদ্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ইতিমধ্যে মানবিক বিপর্যয় পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
সোমালিয়ায় ইতিমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। অন্য দেশগুলোর অবস্থাও খুব সঙ্গীন। সেসব দেশে লাখো মানুষ একবেলাও ঠিকমতো খেতে পারছে না।
এদিকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মানুষের মধ্যে অভাব দেখা না গেলেও নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষ যে কষ্টে আছেন সেই কথা সরকারের প্রায় প্রত্যেক মন্ত্রী বিভিন্ন সভা-সেমিনারে একাধিকবার বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীও বার বার দেশবাসীকে সতর্ক করছেন।
অবশ্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক গত ১১ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে বলেন, দেশে এ মুহূর্তে চালের মজুত আছে প্রায় ১৬ লাখ টন। ধান ৩৭ হাজার টন এবং গম ১ লাখ ৬৯ টন। এটা আমরা সাধারণত আশা করি ১০-১২ লাখ টন থাকার। কার্তিক-আশ্বিন মাসে প্রায় ১৮ লাখ টন মজুত, খুবই ভালো বলে আমি মনে করি। কাজেই এ নিশ্চয়তা দিতে পারি, দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই’।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের খাদ্যের মজুদ পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো অবস্থায় রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বর্তমানে দেশে খাদ্য শস্যের মজুদ আছে ১৬ লাখ ৬৯ হাজার টন। এর মধ্যে চাল হচ্ছে ১৪ লাখ ৭৪ হাজার টন। গমের মজুদ আছে এক লাখ ৭৩ হাজার টন এবং ধানের মজুদ ৩৫ হাজার টন।
একই সময়ে অর্থাৎ ১২ অক্টোবর পর্যন্ত আমদানি পরিস্থিতির তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, বর্তমানে চাল আমদানি হয়েছে সরকারিভাবে ৭৮ হাজার টন, গম দুই লাখ ৪৩ হাজার টন। বেসরকারিভাবে আমদানি করা চালের পরিমাণ ৮১ হাজার টন। সব মিলিয়ে আমদানি করা খাদ্য শস্যের পরিমান হচ্ছে চার লাখ দুই টন।
সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত চালের বাজার হচ্ছে- প্রতি কেজি মোটা চাল পাইকারি পর্যায়ে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা এবং খুচরা বাজারদর হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৭ থেকে ৫০ টাকা। একই সময় পর্যন্ত প্রতি কেজি আটা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা।
এদিকে প্রতিবছরের মতো এ বছরও কৃষি মন্ত্রণালয় বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপন করবে। তবে ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস হলেও দেশে এটি পালন হবে ১৭ অক্টোবর। কৃষি মন্ত্রণালয় দিবসটি উদযাপনের জন্য বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১৭ তারিখ সকাল ১০টায় বিশ্ব খাদ্য দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কৃষিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিশেষ অতিথি হিসেবে খাদ্যমন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মতিয়া চৌধুরী, এফএওর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন প্রমুখ ।
দুপুর ১২ টায় একই স্থানে কারিগরি সেশন ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।
এসআইএইচ/এএস