রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে দুই ইসলামি দল
নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে চলমান সংলাপের দশম দিন বুধবার (৫ জানুয়ারি) রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। ইসলামী দল দুটি আইন প্রণয়নসহ নির্বাচনকালে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ইসিকে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করেছে।
সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রথমে অংশ নেয় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। দলের চেয়ারম্যান মাওলানা এ.এ. মান্নান ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। পরে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়।
সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন এক ব্রিফিংয়ে বলেন, দল দুটি আলোচনাকালে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নসহ তাদের প্রস্তাবনা পেশ করেন। ইসলামি ফ্রন্টের প্রতিনিধিরা নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগের সহযোগিতা নিশ্চিত করারও প্রস্তাব দেন।
তারা নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগের সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দেন।
বঙ্গভবনে তাদের স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা অপরিহার্য।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ভোটারদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, এজন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস সচিব জানান, রাষ্ট্রপতি এখন পর্যন্ত ১৫টি রাজনৈতিক দলের সাথে ১০ দিনে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন।
গত ২০ ডিসেম্বর চলমান সংলাপের প্রথম দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনায় বসেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। এর মধ্যে তিনটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে অংশ নেয়নি। এগুলো হলো: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
আবেদীন জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সহ আরও দশটি রাজনৈতিক দলকে বঙ্গভবনে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। ৬ জানুয়ারি গণফ্রন্টের সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটির্র (এলডিপি) সাথে সন্ধ্যা সাতটায় সংলাপের কথা রয়েছে।
এদিকে, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাথে ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এর সঙ্গে ওই দিন সন্ধ্যা সাতটায় আলোচনা হবে। ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় সংলাপ হবে জাতীয় পার্টি (জাপা) এর সঙ্গে এবং সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এর সঙ্গে। ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় সংলাপ হবে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে এবং ঐদিন সন্ধ্যা সাতটায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) এর সঙ্গে।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে ১২ জানুয়ারি বিকেল চারটায় এবং ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির সঙ্গে একই দিনে সন্ধ্যা ছটায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি 'সার্চ কমিটি'র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
বাসস/এপি/এএস