৫ম ধাপের নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ৮
পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে সাতজন। বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় বগুড়া, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, গাইবান্ধা, ও চাঁদপুরে এ প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে।
বগুড়া: বগুড়ার গাবতলীতে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা না করায় ব্যাপক হামলা এবং ভাঙচুর এবং গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এ ছাড়া উপজেলার রামেশ্বরপুরে ইউপি নির্বাচনে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
রামেশ্বরপুরে নিহত ব্যক্তির নাম জাকির হোসেন (৩৫)। নিহত জাকির হোসেন জাইগুলি উত্তরপাড়া এলাকার মৃত লয়া মিয়ার ছেলে। গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউপি নির্বাচনে দুপুর ২টার দিকে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আহত হন। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে মৃত্যু হয়।
এ দিন সন্ধ্যায় গাবতলীর বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাই হাটা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা না করা নিয়ে পুলিশ, বিজিবি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রের গাড়িতে হামলা চালায় নৌকা মার্কার কর্মী-সমর্থকরা। এ সময় ব্যাপক ভাংচুর করে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে।
ভোট গণনা শেষে কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা না করে উপজেলা সদরে ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়ার পর ঘোষণা দিতে চায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। এতে আপত্তি জানান নৌকা মার্কার প্রার্থী ইউনুছ আলী ফকির ও তার সমর্থকরা। এক পর্যায় তারা ভোট কেন্দ্র ঘেরাও করে। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নৌকা মার্কার কর্মীদের সংর্ঘষ শুরু হয়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, গুলির ঘটনা শুনেছি। লোকজন ব্যাপক তছনছ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে।
রামেশ্বরপুরে নিহত জাকির হোসেন একজন রং মিস্ত্রি। শখের বসে তিনি এলাকার বিভিন্ন সমস্যাসহ তার ফেসবুকে তুলে ধরতেন এবং ভিডিও করতেন। জাকির লাইভটিভি নামে তার একটি আইপটিভিও আছে। সকাল থেকে তিনি নির্বাচনের বিষয় নিয়ে লাইভ করছিলেন। এ ছাড়া জাকির হোসেন নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আনোয়ারায় দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে এক যুবক নিহত হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের সিংহরা এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়।
আনোয়ারা থানার পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান জানান, নিহত যুবকের নাম অংকুর দত্ত (৩৫)। তিনি সিংহরা দত্তবাড়ি এলাকার নেপাল দত্তের ছেলে। সকালে সিংহরা রামকানাই উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার সময় তিনি সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন।
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় ভোটকেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ দৃশ্য দেখে এক নারী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। মারা যাওয়া ওই নারীর নাম সুমেলা খাতুন (৫০)। তিনি স্থানীয় চরডালুটিয়া গ্রামের মো. মাহাতাব আলীর স্ত্রী।
গাইবান্ধা: জেলার সাঘাটা উপজেলায় একটি ভোটকেন্দ্রের পাশে আবু তাহের নামে এক মেম্বার প্রার্থীর সমর্থককে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
বুধবার পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার জুম্মাবাড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জুম্মাবাড়ি আদর্শ কলেজ কেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। ভোট চলাকালে কেন্দ্রের বাইরে টিউবওয়েল প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী আইজল মিয়ার সমর্থক আবু তাহেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী পাখা প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী রাসেল আহমেদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মামুদপুর গ্রামের মো. ওমর আলীর ছেলে আবু তাহেরকে একা পেয়ে রাসেলের কর্মীরা হাসুয়া দিয়ে তার কলা কেটে দেয়। গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তাহেরের মৃত্যু হয়।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন সাংবাদিকদের বলেন, জুম্মারবাড়ির একটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী সহিংসতায় আবু তাহের নিহত হয়েছেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
চাঁদপুর: জেলার কচুয়া ও হাইমচরে প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। কচুয়ায় ভোট কেন্দ্রের বাইরে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে একজন নিহত হন।
অন্যদিকে, হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের বাইরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আরও একজন নিহত হয়েছেন।
এমএমএ/