টাকা দিলেই দ্রুত হাতে আসে ড্রাইভিং লাইসেন্স

মোহাম্মাদ জাবেদুলের বাসা ডেমরা। নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে ডেমরা থেকে মিরপুর বিআরটিএ অফিসে এসেছেন সেই সকালে। দুপুর গড়িয়ে গেলেও তিনি লাইনেই দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু লাইন মোটেও সামনের দিকে আগাচ্ছে না। পরে অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়েই তিনি লাইসেন্স ডেলিভারির কক্ষে (১২০ নম্বর) ঢুকে রাশেদ নামে এক স্টাফকে লাইসেন্সের কথা জিজ্ঞাসা করতেই রাশেদ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বলেন, ‘যান লাইনে দাঁড়ান, সময় হলেই পেয়ে যাবেন’।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে মিরপুর বিআরটিএ অফিসে ঢাকাপ্রকাশ-এর কাছে অভিযোগের সুরে এই কথাগুলো তুলে ধরে জাবেদুল বলেন, বিআরটিএ অফিসে আসলে দিনটায় মাটি হয়ে যায়। এখানে টাকা দিলে সকল ধরনের সেবা পাওয়া যায়। টাকা না দিলে সেবা মিলে না।
শুধু জাবেদুল নয়, আরও অনেক ভুক্তভোগীদেরও একই অভিযোগ। বিআরটিএ-এর কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালদের মধ্যে যোগসাজশের কারণে সেবাগ্রহীতাদের এসব ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ভোক্তভুগীরা বলছেন, দালাল ছাড়া লাইসেন্স পাওয়ার চেষ্টা করাটাও যেন এক ধরনের পাপ।
মোহাম্মদপুর থেকে বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স ডেলিভারি নিতে এসেছেন সৈয়দ আব্দুল্লাহ। তিনি প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর লাইসেন্স হাতে পেয়েছেন।
আব্দুল্লাহর অভিযোগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে কাগজপত্র কাউন্টারে জমা দিলে অনেক দেরিতে লাইসেন্স দিচ্ছে।
তিনি বলেন, দেখা গেছে অনেক সময় ১০০ বা ২০০ টাকা কাউন্টারে ধরিয়ে দিলে খুব কম সময়ের মধ্যে তারা লাইসেন্স নিতে আসাদের ডেকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে বিআরটিএ থেকে পাওয়া এসএমএস দেখে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন খালেদ মাহমুদ। তার অভিযোগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে এসে বিভিন্ন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। আমি নিমজুর মানুষ। কাজ না করলে খাব কি? অথচ এখানে সময় নষ্ট হচ্ছে, নিজের কাজেরও ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া কাউন্টারের কর্মকর্তাদের ১০০-২০০ দিলেই আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে গেলে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
তন্ময় নামে একজন জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পেয়েছি, কিন্তু লাইসেন্সের মেয়াদ আছে আর দুই বছর। তিন বছর বিআরটিএ খেয়ে ফেলছে। করোনার আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার কথা ছিল, সেটা আজ পেলাম। এই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে আমার লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমি কাউন্টারের একজনকে ১০০ টাকা দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করেছি।
তিনি বলেন, ‘বিআরটিএ অফিসে দালালের উৎপাত এবং কর্মকর্তাদের সেবার মান কখনো বাড়বে না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি থেকেই যাবে। সরকারি এই অফিসটা এখনো ঠিক হয়নি।
সরেজমিন জানা যায়, বিআরটিএ মিরপুর অফিসে সক্রিয় রয়েছে কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ জন দালাল। তাদের মধ্যে মনির, নেকবর, শামীম, হাবিব, নজরুলসহ বেশ কয়েকজন দালল খুব প্রভাবশালী।
সরেজমিনে মিরপুর বিআরটিএ-এর হালচাল দেখতে গিয়ে জানা যায়, আজই ১০ জন দালালকে আটক করেছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর বিআরটিএ অফিসে কর্মরত সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সাধারণ মানুষের অভিযোগগুলো পুরোপুরি সঠিক না। ভেতরে আমাদের কোন অসঙ্গতি নেই। নিয়ম অনুযায়ী সবাই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে থাকেন। অনেকে মনে করেন টাকা দিলে অনেক কিছু হয়। এখন আর বিআরটিএতে এসব চলে না। তিনি বলেন, বিআরটিএ-এর বর্তমানে সেবার মান অনেক উন্নত করেছে। বিআরটিআর ভেতরে এখন কোনো দালাল চক্র নেই।’
আর মিরপুর বিআরটিএ অফিসে কর্মরত আনছার কমান্ডার মো. শাহিন বলেন, আজও আমাদের অফিসের মধ্যে এবং বাইরে থেকে ১০ জন দালাল গ্রেপ্তার হয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/
