ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ডোপ টেস্টেও ভোগান্তি!

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে বা নবায়ন করাতে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে সরকার-অধিভুক্ত হাসপাতালে ল্যাবরেটরি থেকে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে। এই ডোপ টেস্ট ছাড়া পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছে না কেউ। তবে নতুন রূপে ডোপ টেস্ট থাকায় লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের মধ্যে বেশ কিছুটা সন্তুষ্ট দেখা গেছে।
বেশ কয়েকজন চালক অভিযোগ করে বলেন, ডোপ টেস্টের কারণে অনেক ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। লাইসেন্স পেতে দেরি হচ্ছে প্রক্রিয়াগত সমস্যার কারণে। আমাদের অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুর বিআরটিএ অফিসে সরেজমিনে গিয়ে চালকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
অনেক চালকেরা বলছেন, এই টেস্টের মাধ্যমে নেশা করা চালক ও অসৎ চালকদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। যার কারণে ভালো ড্রাইভার এবং এই পেশায় স্বচ্ছ মানুষরা এগিয়ে আসবেন। সেই সঙ্গে সড়কে দুর্ঘটনাও কমে আসবে। এটা বিআরটিএ’র ভালো সিদ্ধান্ত।
এ সময় চালকদের অভিযোগ, ডোপ টেস্ট করে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে একটু দেরি হচ্ছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে নানান ধরনের জটিলতাও রয়েছে এবং থাকে। তাড়াতাড়ি ডোপ টেস্ট ও ড্রাইভিং করে দ্রুত যাতে লাইসেন্স পাওয়া যায় সে বিষয়টি বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের নজরে আনা উচিত।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে প্রাইভেটকার ভাড়া চালান চালক জয়নাল মিয়া। জয়নাল মিয়া বলেন, ‘আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল দশ বছরের ডেটও ছিল, সেটি শেষ হয়ে গেছে। এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে এসেছি বিআরটিএ’র অফিস থেকে আমাকে জানানো হয়েছে ডোপ টেস্টের জন্য। ভালো বুঝতে পারছি না। ডোপ টেস্ট করতে গিয়েছি রেজাল্ট দিয়েছে কিন্তু বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আমাকে লাইসেন্স দেয়নি। তারা বলছে পরে আসেন।’
মিরপুর বিআরটিএ অফিসের মধ্যে কথা হয় সরকারি একটি অফিসের বাস চালক আলতাফ উদ্দিনের সঙ্গে। আলতাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমি দশ বছর ধরে সরকারি গাড়ি চালায়। মন্ত্রণালয়ের একটি স্টাফ বাসে চাকরি করি। ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, নতুন করে নবায়ন করতে এসেছি এবং ডোপ টেস্ট করেছি। আজকে আমার রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে আমি স্বাচ্ছন্দ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পেয়েছি।’
এ সময় বিআরটিএ অফিসের সামনে বেশ কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ডোপ টেস্ট একটি ভালো উদ্যোগ তবে পেশাদার এবং অপেশাদার উভয় ক্ষেত্রে এটি করা প্রয়োজন ছিল।
মিরপুর বিআরটিএর অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে এসেছেন ট্রাক চালক তোফায়েল। এ সময় তোফায়েল অভিযোগ করে বলেন, আমরা যারা গাড়ি চালাই তারা সবাই তো চালক। সবাইকে ডোপ টেস্টের আওতায় আনা উচিত। চালকদের একেকজনের ক্ষেত্রে একেক নিয়ম এটা ঠিক হয়নি।
মিরপুরের কালশি থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে এসেছেন মাহরুফ হোসেন। এ সময় মারুফ বলেন, ‘ডোপ টেস্ট এর কারণে অনেক ধরনের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের সার্ভিস আরও বৃদ্ধি করা। সব কিছু অনলাইন করা এবং মানুষকে যথাযথ সময়ে সেবা দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ কেউ বিআরটি অফিসের সেবা নিতে গেলে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ তাদের সময়ের ক্ষতি করছে। টেস্ট হোক বা অন্য কোনো ব্যবস্থা হোক, সবকিছু দূরত্ব করে গ্রাহকদের সেবার মান বাড়ানো বিআরটিএ’র কাজ। কিন্তু এখানে অনেক সমস্যা আছে এসব সমস্যার সমাধান হয়নি, কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে। বাকিগুলো সমাধান করা জরুরি।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ডোপ টেস্টের মাধ্যমে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। এই ডোপ টেস্ট করতে তেমন কোনো ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে না। প্রথমে এটি অনেকে বুঝতে পারে না, যার কারণে নানান অভিযোগ করেন।’
তিনি বলেন, ‘ডোপ টেস্টের ফলাফল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটু দেরি করতো এখন এক সপ্তাহের মধ্যে দিয়ে দেয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টেস্টের একটি কপি আমাদের মেইল করে আরেকটি কপি লাইসেন্স সেবামুখী মানুষদের প্রদান করেন। পরে আমরা দুই কপি সমন্বয়ে নেগেটিভ-পজেটিভ বুঝে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে থাকি।’
কেএম/এমএমএ/
