‘সতর্কবার্তা’কে ছাপিয়ে বিআরটিএ জুড়ে দালালদের দৌরাত্ম্য

‘দালাল, টাউট ও প্রতারক হতে সাবধান’। এমন সতর্কবার্তা সম্বলিত সাইনবোর্ড চোখে পড়বে রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ সড়ক পবিরবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গেট দিয়ে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই।
শুধু প্রবেশ ফটকেই নয়, এমন সতর্কবার্তা লেখা আরও অনেকগুলো সাইনবোর্ড সাঁটানো আছে মিরপুর বিআরটিএ এর বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে দেয়ালে। কিন্তু এই সতর্কবার্তাকে ছাপিয়ে, বলা যায় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দালালদের দৌরাত্ম্যই পুরো বিআরটিএ জুড়ে।
অবশ্য দালালরা বলছে, বিআরটিএ-এর লোকজনের সহযোগিতায় তারা বিআরটিএ-তে দালালির কাজ করছেন। এজন্য তাদেরকে খুশিও করতে হয়।
দালালদের উপস্থিতি এতটাই বেশি যে, সেবা নিতে যাওয়া মানুষরা তাদের হাতেই জিম্মি। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ না করে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে বলে অভিযোগ ভোগান্তি ও প্রতারণার শিকার লোকজনের।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে বিআরটিএ’তে সরেজমিনে এসব চিত্র দেখা যায়।
দুপুর ১২টার মিরপুর বিআরটিএ-এর কার্যালয়ের যে কাউন্টারে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারের সামনে একটি ঘরে অন্তত জনা দশেক মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদেরকে অনেকটা খাঁচায় বন্দী প্রাণীদের মতো লাগছে।
কাছে গিয়ে আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলতেই জানা গেল, তারা বিআরটিএ’তে ‘দালালি করে খান’। অর্থাৎ তাদের জীবিকার উপায় হলো বিআরটিএ’তে দালালি করা। এ কারণে তাদের ধরে আটকে রেখেছে বিআরটিএ। যদিও তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ তাদের বিআরটিএ-এর বাইরে থেকে আটক করেছে ।
আটককৃত দালালের একজন কামরুল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিআরটিএ-এর যারা আমাদের ধরেছেন আমরা তো তাদেরকেই ঘুষ দিয়ে দালালি করি। টাকা একটু কম দিলেই তারা আমাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযান চালান। রকিব নামে আরেক দালালও একই কথা বললেন।
এক প্রশ্নের জবাবে রকিব ও কামরুল বলেন, টাকা দিলেই ছেড়ে দেবে। সন্ধ্যার আগেই কিছু টাকা নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেবে এরা।
টাঙ্গাইল থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার জন্য এসেছেন মাসুদ। আগে ঢাকায় থাকতেন, তাই এখানেই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এখন টাঙ্গাইল অফিসে ট্রান্সফারও করতে পারছেন না। তাই তাকে মাঝে মাঝেই লাইসেন্সের জন্য ঢাকায় আসতে হয়। এভাবেই তিনি ঘুরছেন বলে অভিযোগ করেন।
মাসুদও দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে অভিযোগ করে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমি শুধু ঢাকা-টাঙ্গাইল-ঢাকা ঘুরছি। কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না, তাই এক দালাল ধরেছিলাম। যাতে কাজটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। দালালকে ৪ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু দালাল টাকা মেরে দিয়েছে। আমার ফোন নম্বর ব্লক করে দিয়েছে। এখানে এলেও পাই না।
জানতে চাইলে বিআরটিএ-এর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, অনেক কিছুর সমাধান হয়েছে। এখনো অনেক কিছু সমাধানের চেষ্টা করছি। মাঝে মাঝেই অভিযান চালানো হয়। যদি আপনাদেরও কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে আমাদের জানান। আমরা ব্যবস্থা নেব।
এনএইচবি/এসজি
