ঢাকা-ব্রুনেই ৫ চুক্তি-সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ব্রুনেইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদদৌল্লাহর ঢাকা সফরের সময় ঢাকা-ব্রুনেইয়ের মধ্যে পাঁচ চুক্তি-সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
ব্রুনেইয়ের সুলতান তিন দিনের সফরে ১৫ অক্টোবর ঢাকায় আসছেন। এটা হবে তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন তার দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
ব্রুনেইয়ের সুলতানের সফরে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচল, ব্রুনেইয়ে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ, সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত নাবিকদের সনদ দেওয়াসহ পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি আমদানির বিষয়ে ব্রুনেইয়ের সঙ্গে আলোচনা করছি। এই আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বর্তমানে ব্রুনেইয়ে কাজ করছেন। ব্রুনেইয়ে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়টি দেশটির সুলতানের আসন্ন সফরে প্রাধান্য পাবে।
এ সফরকালে ব্রুনেইয়ের সুলতান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তার সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে ব্রুনেই সফর করেছিলেন। সে সময় দুই দেশের মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। ব্রুনেইয়ের সুলতানের বাংলাদেশ সফরে এই সমঝোতা স্মারকগুলো কার্যকরের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলেও জানা গেছে।
আব্দুল মোমেন জানান, ব্রুনেই এর সুলতানের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২১-২৩ এপ্রিল ব্রুনেই সফর করেন। ওই সফরে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারকরণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, ব্রুনেই ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে ব্রুনেই-এ বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন পুনঃস্থাপনের পর থেকে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বিগত এক দশকে ব্রুনেই এর সাথে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানী, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন সহ নানাবিধ ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে।
ব্রুনেই তাদের ‘ভিশন ২০৩৫’-এর আওতায় গৃহীত উন্নয়ন কর্মসুচি বাস্তবায়নে বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে অর্থনীতির বহুমুখীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, স্বাস্থ্য সেবা ও জ্বালানি ইত্যাদি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী। জ্বালানি সম্পদে সমৃদ্ধ উচ্চ আয়ের দেশ ব্রুনেই-এর সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা স্থাপনের মধ্যে দিয়ে দু’দেশই লাভবান হতে পারে।
সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা, মাদক ও মানব পাচার, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ব্রুনেই এক ও অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকে এবং জাতিসংঘ, ওআইসি, এআরএফ, কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক ফোরামে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে।
আব্দুল মোমেন জানান, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী এবং সুলতানের মধ্যে আলোচনা হবে।
এ ছাড়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সংগঠন আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনার’ হওয়ার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব সহকারে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
আরইউ/এনএইচবি/এমএমএ/
