পরিবেশ অধিদপ্তর: শর্ষের মধ্যে ভূত দেখছে টিআইবি

ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে মৌলিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ‘শর্ষের মধ্যে ভূত দেখতে পাচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কারণে উল্টো পরিবেশ দূষণ বাড়ছে’।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) ‘পরিবেশ অধিদপ্তরে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল ওয়েবিনারে তুলে ধরে টিআইবি।
অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শহর ও গ্রামীণ জনপদে বসত বাড়ির পাশে গড়ে ওঠা গবাদি পশুর খামার এবং খামারবর্জের কারণেও পরিবেশ দূষিত হয়, কোনভাবে তা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ ফেলো নেওয়াজুল মাওলা। তিনি গবাদি পশুর খামার ও খামারবর্জের কারণে ব্যাপক হারে পরিবেশ দূষণের কথা উল্লেখ করেন।
খামারে গবাদি পশুকে বিশেষ কিছু খাওয়ানো হয়, যে কারণে এত বেশি দুর্গন্ধ হয় বলে জানান তিনি। তবে টিআইবির গবেষণার আওতায় গবাদি পশুর বিষয়টি ছিল না বলে জানান তিনি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে বিষয়টি গবেষণার আওতায় আনা হবে বলেও জানান এই গবেষক।
টিআইবির গবেষণা পত্রে বলা হয়, ৬৬ শতাংশ শিল্পকারখানাকে পরিবেশগত ছাড়পত্র পেতে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। এই অর্থের পরিমাণ শ্রেণিভেদে ৩৬ হাজার থেকে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। তা ছাড়া আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা স্থাপনের আইনি বিধান না থাকলেও ৭২ শতাংশ কারখানার অবস্থান আবাসিক এলাকায়।
সংস্থাটি বলছে, পরিবেশ অধিদপ্তর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া ও নবায়ন দুর্নীতির বড় ক্ষেত্র। তা ছাড়া পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে।
ওয়েবিনারে উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে দেখা যায়, কমলা-খ ও লাল শ্রেণিভুক্ত কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্রের সময় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (ইএমপি) জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু ৫৭ শতাংশ কারখানা ইএমপি ছাড়াই পরিবেশ ছাড়পত্র পেয়েছে। অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র পেতে সব কারখানাকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দিতে হয়। কিন্তু ১৭ শতাংশ কারখানা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এনওসি ছাড়াই ছাড়পত্র পেয়েছে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, কর্মীদের একাংশের অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বড় অঙ্কের নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন ও তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতিতে পরিবেশ অধিদপ্তরে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে। প্রতিটি জেলায় এক বা একাধিক পরিবেশ আদালত থাকার কথা। যদিও সারা দেশে মাত্র তিনটি পরিবেশ আদালত রয়েছে। অধিদপ্তরের কাছে পরিবেশ দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কোনো তালিকাও নেই। অধিদপ্তরের অনুমোদিত পদের ৫৯ শতাংশে জনবল নেই।
ওয়েবিনারে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইনগত দুর্বলতার কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছে না। যতটুকু আইনি সক্ষমতা রয়েছে, তাও কাজে লাগানো হচ্ছে না। সুশাসনের প্রতিটি সূচকে ঘাটতিতে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে। অধিদপ্তরের দুর্নীতির কারণে আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে।
এমএ/এমএমএ/
