জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন

জন্মের পরপরই জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার বিধান রেখে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২২ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে মন্ত্রিসভা আইনটি রিভিউ করে পুনরায় উপস্থাপন করতে বলেছে।
এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে রিভিউ করার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার (১০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে নিবন্ধন আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, আইনটি না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান আইনে জন্মনিবন্ধন করা যাবে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এখন থেকে জন্মের পরপর সবার নিবন্ধন হবে। আর নিবন্ধনের ওই ইউনিক আইডিই হবে জাতীয় পরিচয়পত্র।
তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২২ এর একটি খসড়া সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে মন্ত্রিসভায় তোলা হয়েছিল। তাতে বিদ্যমান জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০১০ এর ৩২ টি ধারাকে কমিয়ে ১৫টিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাতে করে আইনটিতে বেশ জটিলতা দেখা দিয়েছে।
উদাহরণ তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেমন ধরেন বিদ্যমান আইনে ছয় বা সাতটা অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা সাজা ছিল। কিন্তু নতুন আইনের খসড়ায় সবগুলোকে একসঙ্গে করে সাত বছরের সাজা বা দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রিসভা বলেছে এগুলোকে আলাদা করে রেখে দিতে।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা আইনটি নীতিগত অনুমোদনের সিদ্ধান্ত দিয়ে বলেছে, বিদ্যমান আইনের ৩২টি ধারা রেখে প্রয়োজনে আরো দু'একটি ধারা যুক্ত করে বা বাদ দিয়ে নতুন করে প্রস্তাব নিয়ে আসতে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে আইনটি রিভিউ করতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
আনোয়ারুল ইসলাম জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র সুরক্ষা সেবা শাখার অধীনে হবে। এনআইডি নির্বাচন কমিশনের চেয়ে সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা বেশি প্রয়োজন। কারণ নির্বাচন কমিশন সবক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। সেজন্য এটা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যারা পাসপোর্ট হ্যান্ডেল করে। এটি এখন আলটিমেটলি একটা ইউনিক আইডিতে চলে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, আজকে মন্ত্রিসভা বৈঠকেও সিদ্ধান্ত হয়েছে- জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যে রেজিস্ট্রেশনটি হবে, আলটিমেটলি আজ থেকে ৫-৬ বছর পর ওই নম্বরটাই সব জায়গায় যাবে। সেজন্য পাসপোর্টের সঙ্গে একটু সিনক্রোনাইজ করে জন্মের সময় নম্বরটা দিয়ে দেওয়া হবে। আগামীতে হয়তো ৩-৪ বছর পর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট, চোখের আইরিশ, মুখচ্ছবি সবই দিয়ে দেওয়া হবে এবং মডিফিকেশন হবে। এজন্য এটা সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু এ আইনটা একটু রিভিউ করা দরকার বলেও মনে করছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কারণ আগের আইনে ৩২টি ধারা ছিল, সেটা থেকে কমিয়ে ১৫ করা হয়েছে, অনেকগুলো ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে মন্ত্রিসভা সম্মত হয়নি। বলেছে, এটাকে রিভিউ করার জন্য।
এনআইডি কবে নাগাদ সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে আসবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এখন যেভাবে আছে, সেভাবেই চলতে থাকবে। নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকবে।
নতুন ব্যবস্থায় কারা ভোটার আইডি পাবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটার আইডি ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের দেওয়া হয়। এখন একটা ডাটাবেজ করে, ইন্টার-অপারেটিভলি (আন্তঃকার্যক্রম), ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে যাবে। তারা (নির্বাচন কমিশন) চাইলে নিতে পারবে, আলাদা ডাটাবেজও করতে পারবে। পাসপোর্ট বা অন্য যেকোনো কিছু করার জন্য সবার (অন্যান্য সরকারি সংস্থার) ওই ডাটাবেজে ওয়ার্কিং এন্ট্রি থাকবে।
জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থাও কি সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে চলে যাবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাই মিলে আলোচনা করে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করতে বলা হয়েছে। জন্মের সময় যে রেজিস্ট্রেশন হবে, সেই নম্বরটা যাতে সব জায়গায় থাকে। আইন ও বিধি হলে এ বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে। আপাতত যেভাবে আছে সেভাবে চলবে। কিন্তু নিজেরা বসে ইন্টার-অপারেটিবিলি থাকে, ডুপ্লিকেশন না হয়, কেউ যাতে বাদ না পড়ে- সেটা দেখে কাজ করতে বলা হয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/এসজি
