অক্টোবরেও মুক্তি মেলেনি লোডশেডিং থেকে

লোডশেডিং সম্পর্কে রাজু আহমেদ নামে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একজন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘পঞ্চমবারের মতো সন্ধ্যা ৭টায় তিনি আবারও গেলেন! আগে ছিলেন না ৩ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট!’
ধানমন্ডির বাসিন্দা আলমগীর হোসেন লিখেছেন, ‘খুব সহসা আবার বিদ্যুতের দাম বাড়বে। না বাড়িয়ে নাকি উপায় নেই। সকাল থেকে তিনবার বিদ্যুৎ গেল। এসব কি গ্রাহকদের সহ্য সীমা পরীক্ষার রিহার্সাল চলছে?’
ফেসবুকের নিউজফিডজুড়ে লোডশেডিং নিয়ে এরকম আরও অনেক প্রতিক্রিয়া ঘুরছে। যদিও আগস্টের প্রথম দিকে লোডশেডিং সম্পর্কে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, অক্টোবরে লোডশেডিং থাকবে না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগ, লোডশেডিং তো কমেইনি বরং বেড়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বর্তমানে মোট চাহিদার চেয়ে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে প্রতিষ্ঠানটি।
রাজধানীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে দুটি প্রতিষ্ঠান- ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। প্রতিষ্ঠান দুটির প্রকাশ করা লোডশেডিংয়ের সময়সূচি ও পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাজধানীতে এখন দৈনিক ২-৩ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের বেশি দেওয়া হচ্ছে না।
অথচ এখন মাঝরাতেও অনেক এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। যদিও ডিপিডিসি ও ডেসকোর ঘোষণা অনুযায়ী, রাত ১১টার পর লোডশেডিং থাকার কথা নয়।
খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহীন বাবু বলছেন, গত রাতে ৩ টায় গিয়ে একঘণ্টা পর ৪টায় ফিরেছে, আজ বেলা ১২ টায় গিয়ে ১ টায় এবং বিকাল ৩ টায় গিয়ে ফিরেছে ৪ টায়। বলার কিছু নাই। এত টাকা এই খাতে বিনিয়োগ হলো তবে সেটা টেকসই হচ্ছে না।
গ্রিনরোডের বাসিন্দা আজাদ বুধবার (৫ অক্টোবর) রাতে লোডশেডিং প্রসঙ্গে ফেসবুকে লিখেছেন, রাত ৩ টায় লোডশেডিং। পাশের বিল্ডিং থেকে ভেসে আসছে শিশুর চিৎকার।
পূর্বাভাস ও প্রকৃত লোডশেডিংয়ের পার্থক্যের বিষয়ে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী বলছেন, ভবিষ্যতে লোডশেডিংয়ের সময়সূচিতে রাতের সময়টাও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
যদিও লোডশেডিংয়ের এমন বাস্তবতা মানতে নারাজ বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। শুক্রবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীতে নিজ বাসভবনে এ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, লোডশেডিং আগের চেয়ে কমেছে। তবে এখনো দিনে ৫০০-৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।
যদিও কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই মুহূর্তে মোট ২৫ শতাংশ অর্থাৎ এক-চতুর্থাংশ কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও তেল সাশ্রয়ের জন্য লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের দেশে লোডশেডিংয়ের শেষ নাই, বারবার সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়। যেখানে বড় ব্যবসা নাই, বড় কমিশন বা দায় নাই, সেসব ক্ষেত্রে উদ্যোগ জরুরি হলেও কোনো উদ্যোগ নাই। ব্যবস্থাপনা, লাইন, কর্তৃত্ব, সমন্বয় সবকিছুতেই গন্ডগোল।
এনএইচবি/এসজি
