ইউপি নির্বাচন: ভোটের আগেই ৪৮ জন চেয়ারম্যান
দেশের মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়নগুলোতে চলছে ভোট গ্রহণ। পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোটের আগেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ৪৮ জন।
এ ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৯৩ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪৮জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৩৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ১১২ প্রার্থী রয়েছেন।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) পঞ্চম ধাপে দেশের ৪৮ জেলার ৯৫টি উপজেলার ৭০৮টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর মাধ্যমে ৪০ ইউপিতে ভোট হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই ধাপে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদে মোট ৩৬ হাজার ৪৫৭ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন।
ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানিয়েছেন, সামনের নির্বাচনগুলো আরও ভালো হবে।
এ ধাপের ইউপি ভোটের প্রস্তুতির বিষয়ে ইসির যুগ্ম-সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ভোট সামগ্রী কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। পঞ্চম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে ১৯৩ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪৮জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৩৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ১১২ প্রার্থী রয়েছেন।
তিনি বলেন, এ ধাপে ৭০৮ ইউপিতে ভোটগ্রহণ চলছে। এই ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ২৭৪, সংরক্ষিত আসনে ৭ হাজার ৯৫০ ও সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ২৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তিনি আরও জানান, এই ধাপে ৭ হাজার ১৩৭টি ভোটকেন্দ্রের ৩৯ হাজার ৩৯১টি ভোটকেন্দ্রে ১ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ১৯৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭০ লাখ ৬০ হাজার ১৪০ জন, মহিলা ভোটার ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৩১ জন এবং ২১ জন হিজড়া ভোটার রয়েছে।
এদিকে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। আইন অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা পূর্বে নির্বাচনী প্রচার কাজ বন্ধ করতে হয়। ভোটগ্রহণ শুরু হবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টায়। তার ৩২ ঘণ্টা পূর্বে অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টার পর থেকে প্রচার চালানো যাবে না। শুধু তাই নয়; এই সময়ে কোনো মিছিল, বিজয় মিছিল, মশাল মিছিল, আনন্দ র্যালিও করা যাবে না।
যেসব ইউনিয়নে ভোট চলছে সেগুলোতে সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সকাল ৬টা পর্যন্ত ৫৪ ঘণ্টার জন্য মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে।
ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান জানান, মোটরসাইকেলের পাশাপাশি মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে বুধবার (৫ জানুয়ারি) রাত ১২টা পর্যন্ত সব যন্ত্রচালিত যান চলাচলও বন্ধ থাকবে। ইসির অনুমোদান নেওয়া গাড়ি এই সংক্রান্ত নির্দেশনার বাইরে থাকবে। এজন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনি এজেন্ট, দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিলযোগ্য।
এছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি/বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
অন্যদিকে জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরূপ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে নির্বাচনি এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। কেন্দ্রে পুলিশ, আনসারের সমন্বয়ে ভোটের দিন নিয়োজিত থাকবে ২২ জনের ফোর্স। এ ছাড়া ভোটের এলাকায় পুলিশ, আনসার ও ব্যাটালিয়ন আনসারের একটি করে টিম মোবাইল ফোর্স হিসেবে এবং প্রতি ইউপির জন্য ১টি করে টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে।
অন্যদিকে প্রতি উপজেলায় র্যাবের ২টি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং টিম মোতায়েন রয়েছে। বিজিবির মোবাইল টিম রয়েছে দুই প্লাটুন ও এক প্লাটুন সদস্য নিয়োজিত আছে স্ট্রাইকিং টিম হিসেবে। একই হারে কোস্ট গার্ডও মোতায়েন করা হয়েছে। আর প্রতি ইউপিতে অন্তত একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্বে রয়েছেন।
ইতিমধ্যে চার ধাপের ইউপি ভোট সম্পন্ন করেছে ইসি। ষষ্ঠ ধাপে ২১৯ ইউপিতে ভোট হবে ৩১ জানুয়ারি এবং সপ্তম ধাপে ১৩৮ ইউপিতে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ করবে ইসি।
এসএম/টিটি