রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

বছর জুড়ে আলোচিত যারা

আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ, হেলেনা জাহাঙ্গীর

কখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদেশ সফর সঙ্গী। আবার কখনো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে ছবি। আবার কখনো টিভি উপস্থাপক কখনো বা প্রবাসীদের নিয়ে লাইভ করে আলোচনায় ছিলেন ব্যবসায়ী নেতা হেলেনা জাহাঙ্গীর। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে জয়যাত্রা টিভির কর্ণধার দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র পদ হারান।

শুধু তাই না `আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে নতুন সংগঠন করে আবারও আলোচনায় আসেন এই বিতর্কিত ব্যবসায়ী নেতা। সব পদ হারান। পদ হারিয়েই শেষ নয় বিচারের মুখোমুখিও হতে হয় হেলেনা জাহাঙ্গীরকে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক মাস জেলও খাটেন। তাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে আইপিটিভির নিবন্ধনের বিষয়টি সামনে চলে আসে। তখন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয় লাইসেন্স ছাড়া কোন আইপি টিভি সংবাদ প্রচার করতে পারবে না।

জয়যাত্রা টেলিভিশনের চেয়ারপারসন হেলেনা নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দিতেন। তিনি আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য পদে ছিলেন। এছাড়া কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেরও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন তিনি।

হেলেনা জাহাঙ্গীর সিস্টার হেলেন নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি জয়যাত্রা টিভি খুলে সেই গণমাধ্যমের নামে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডও ব্যবহার করতেন। তার সেই অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিয়েও অনেক আলোচনা হয়। নিজেরে টিভিতে নিজেই গান গাইতেন আবার প্রবাসীদের নিয়ে নানা ইস্যুতে লাইভ অনুষ্ঠানও করতেন। এভাবে একের পর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দিয়ে আলোচনায় ছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর।

সব হারালেন মেয়র জাহাঙ্গীর

২০২১ সালে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র এই জনপ্রতিনিধি যিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে মেয়র পদ হারিয়েছেন। বছরের শেষ প্রান্তে এসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া জাহাঙ্গীর অনেক চেষ্টা করে, কান্নাকাটি করেও নিজের পদ রক্ষা করতে পারেননি। গত ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করেন। সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।

মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে উঠেন জাহাঙ্গীর আলম। গত সেপ্টেম্বর মাসে মেয়র জাহাঙ্গীরের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে তিনি কারো সঙ্গে কথোপকথনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদকে নিয়ে কটু মন্তব্য করেন।

অডিও ফাঁসের পর গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলেন। তার বিরুদ্ধে গাজীপুরে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান জাহাঙ্গীরকে। গত ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়। তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়।

দল ও পরিবারকে বিব্রত করেন আলোচনায় মির্জা কাদের

সত্যবচন নিয়ে আলোচনায় আসেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। একের পর এক আওয়ামী লীগের নেতাদের সমালোচনা করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর ছোট ভাই মির্জা কাদের। তার আলোচনায় বাদ যাননি নিজের ভাই-ভাবী। বিভিন্ন সময় ভাবীকে উদ্দেশ্য করে কুটক্তিমূলক কথাও বলেছেন মির্জা কাদের।

মির্জা কাদের আলোচনায় আসে মূলত ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরভবন চত্বরে পৌর নির্বাচনে নিজের ইশতেহার ঘোষণার সময় হঠাৎ বিস্ম্ফোরক বক্তব্য দেন তিনি। সেই আলোচনায় তিনি বলেন, 'সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নোয়াখালীর এমপিরা পালানোর দরজা খুঁজে পাবেন না'।

কখনো ভাই, কখনো ভাবী, আবার কখনও দলের কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মির্জা কাদের। বিদায়ী ২০২১ সালের ১৬ জুলাই বসুরহাট পৌরসভা ভবনের সামনে দরিদ্রদের মধ্যে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণকালে এক বৃদ্ধ লোককে ঘুষি মেরে ফের আলোচনায় আসেন আবদুল কাদের মির্জা।

তার এই আলোচনায় আবারও গরম হতে থাকে রাজনীতির মাঠ। এভাবে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে নিজ দল ও পরিবারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন আবদুল কাদের মির্জা। পরে পরিবার থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে পড়েন তিনি।

শতবছরের পুরোনো আইনে কারাবন্দী সাংবাদিক

বিদায়ী ২০২১ সালব্যাপী সাংবাদিক নির্যাতন বা সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেয়ার নানা ঘটনা ঘটেছে। এসব বাধার বেশিরভাগই হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করে। আর শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা তো আছেই। তবে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে যে মামলায়, সেটি হয়েছে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে।

শত বছরের পুরোনো এই আইনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা ওই মামলায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কারাগারে আটক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সচিবালয় থেকে সরকারি 'নথি চুরির' অভিযোগ আনা হয়।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ও তার মুক্তির দাবিকে কেন্দ্র করে তখন সাংবাদিক সমাজের মধ্যে থাকা রাজনৈতিক দেয়াল ওই এক সপ্তাহের জন্যে হলেও অদৃশ্য হয়েছিল। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশেই সাংবাদিকরা আন্দোলন করছিলেন তখন সাংবাদিক রোজিনার মুক্তির দাবিতে। শুধু সাংবাদিক মহল নয়, তাকে সচিবালয়ে কয়েক ঘণ্টা আটক করে রাখা ও পরে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা ঠুকে জেলে পাঠানোর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

গত ২৩ মে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এর আগে ১৯ মে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লা পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা ও পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে রোজিনা ইসলামের জামিন মঞ্জুর করেন।

মাঠ ও মাঠের বাইরে সাকিব

২২ গজে সাকিব যেমন নৈপুণ্যের দ্যুতিতে নিজেকে আলোকিত করে রাখেন, তেমনি মাঠের বাইরেও! তবে মাঠের বাইরে থাকেন বিতর্কিত হিসেবেই। মাঠে ও মাঠের বাইরে ২০২১ সালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

২০২১ সালের শুরু ছিরো সাকিবের ফিরে আসা। ২০১৯ সালে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন রাখার জন্য আইসিসি তাকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে  নিষিদ্ধ করেছিল দুই বছরের জন্য। তবে তা ছিল শর্ত সাপেক্ষে। সাজাকালীন আইসিসির দেয়া শর্তগুলো পূরণ করলে তার সাজা এক বছর কমে আসবে। সাকিব শর্ত মানেন, তার  নিষেধাজ্ঞা এক বছরে  কমে আসে। সেই হিসেবে ২০২০ সালের  ২৮ অক্টোবর তার  নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়।  কিন্তু করোনার কারণে কোনো খেলা না থাকাতে সে বছর তিনি  আর মাঠে নামতে পারেননি। এ বছরের শুরুতেই ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে তিনি আবার মাঠে  ফেরেন। ফিরেই সিরিজ সেরা হন ব্যাটে-বলের দ্যুতিতে।

মাঠে সাকিব দ্যুতিময়, তবে মাঠের বাইরে বিতর্ক থেকে যেন তিনি নিজেকে দূরে রাখতেই পারেন না। তাইতো দেখা যায় প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট লিগে, মোহামেডানের হয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে, আম্পায়ারের একটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে, তিনি স্ট্যাম্প লাথি মেরে ফেলে দেন। আম্পায়ারের সাথে তর্কেও লিপ্ত হন। ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বমূলক আম্পায়ারিংয়র প্রতিবাদে সাকিবকে অনেকেই সমর্থন করলেও ক্রিকেটীয় আইনে ছিল অগ্রহণযোগ্য। যে কারণে লিগে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা  শেষে তিনি আবার লিগে মোহামেডানের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তবে সুপারলিগ না খেলেই চলে গিয়েছিলেন আমেরিকাতে।

বিতর্ক এখানেই  শেষ নয়। টেস্ট ক্রিকেটে সাকিবের অনীহা নতুন কিছু নয়!  নানা কারণে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। তারপরও তাকে দলে পাওয়া বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।

ক্রিকেটের পাশাপাশি সাকিব নিজেকে অনেক আগে থেকেই ব্যবসায় জড়িত হয়েছেন। বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার আছে। এবার সেখনে নতুন করে যোগ হয়েছে ব্যাংকের মালিকানা। পিপলস ব্যাংকের পরিচালক হয়েছেন তিনি। তার সাথে তার মায়ের নামেও একটি পরিচালক পদ আছে। এভাবেই গোটা বছর জুড়ে সাকিব মাঠে ও মাঠের বাইরে নিজেকে আলোচনায় রেখেছিলেন। 

 

পরীমনির নানা কাণ্ড

মিডিয়াপাড়ায় চলতি বছরের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র চিত্রনায়িকা পরীমনি। বোট ক্লাব কাণ্ড, বাসায় র‌্যাবের অভিযান, মামলা, রিমান্ড, গ্রেপ্তার, জামিন, মুক্তি। এমন সব ঘটনার সঙ্গে জুন থেকে ডিসেম্বর বারবার উচ্চারণ হয়েছে পরীমনির নাম। শুরুটা হয়েছিল ৮ জুন রাতে। সেদিন রাতে পারিবারিক বন্ধু নিয়ে যান আশুলিয়ার একটি ক্লাবে পরীমনি। সেখানে জোর করে তার মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে বলে জানান তিনি। এর পর ৪ আগস্ট পরীমনির রাজধানীর বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে আটক করেছে র‌্যাব। অভিযান চালানোর সময় ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে ফেসবুকে লাইভে এসে পরীমনি থানাপুলিশ ও ডিবির কর্মকর্তা এবং তার পরিচিতজনদের কাছে ফোন করে তাকে বাঁচানোর আহ্বান জানান।

৫ আগস্ট পরীমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। সেদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই মামলায় তাকে আদালতে তোলা হয়। তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করে পুলিশ। এর মধ্যে ৭ আগস্ট এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করে পরীমনির সদস্যপদ স্থগিতের কথা জানায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। চার দিনের রিমান্ড শেষে ১০ আগস্ট আরও দুই দিনের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয় পরীমনিকে।

পরীমনির জামিন আবেদন নাকচ করে ১৩ আগস্ট তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। তাকে রাখা হয় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে। ১৯ আগস্ট পরীমনিকে তৃতীয় দফায় ১ দিনের জন্য রিমান্ডে নেয় সিআইডি। ২২ আগস্ট পরীমনির পক্ষে তার আইনজীবীরা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। পরে ৩১ আগস্ট তার জামিন হয়। ১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি ২৬ দিন বন্দি ছিলেন।

এ বছরে তার ‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমা মুক্তি পেলেও সেটি দর্শক টানতে পারেনি। তবে ‘প্রীতিলতা’, ‘কাগজের বউ’ সিনেমাগুলোতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। মুক্তির মিছিলে আছে তার ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘মুখোশ’ সিনেমাগুলো।

 

মামুনুলের মানবিক বিয়ে

বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ব্যক্তি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের বহিস্কৃত যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। সরকারের বিরুদ্ধে নানা কটুক্তিকর বক্তব্য দিয়ে বার বার আলোচনায় আসেন এই ধর্মীয় নেতা। ২০২০ সালের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেন মামুনুল হক। তার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলাম মুখোমুখি অবস্থান নেয়।

ভাস্কর্য ইস্যু শেষ হতে না হতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। সেই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন মামুনুল হক। গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। সেই বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। ওই সংঘাতে প্রাণ হারান অন্তত ১৮ জন।

মোদি ইস্যুতে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন মামুনুল হক। শুরু হয় নতুন বিতর্ক।

মামুনুল হক এর মাঝখান দিয়া অন্য কিছু মনে কইরো না কথাটা পরে ভাইরাল হয়ে যায়। তার মানবিক বিয়ে এবং মাঝখান দিয়ে অন্য কিছু মনে কইরো না ব্যাপক আলোচিত ছিল। পরিস্থিতি যখন ঘোলাটে তখন নিজের ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল হক বলেন, আমি তাকে (ঝর্না) বিয়ে করেছি। বিয়েটাকে মানবিক বিয়ে বলে দাবি করেন তিনি।

পরে তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা সোনারগাঁ থানা পুলিশ সূত্র জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। সেই মামলায় ২০২১ সারের ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পরে ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। গত ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিসুর রহমান এ অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে মামুনুল হকের বিচার শুরু হয়। এছাড়া মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দুইটি মামলা করা হয়। গত ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা ও নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক বাদী হয়ে ঢাকার আদালতে মামলা করেন।

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে দল থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাভোগ করছেন।

জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী

আলোচনায় এসেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ধান গবেষক ও জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী। বছরে পাঁচবার ফলন দেবে এমন ধানের গাছ উদ্ভাবন করেছেন তিনি।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রাম। পেশাগত কারণে বিদেশে থাকলেও তার গ্রামে গড়ে তুলেছেন খামার। এই খামারেই দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে এমন ধান উদ্ভাবন করেছেন, যা একবার রোপণে এ ধানের গাছে বছরে পাঁচবার ফলন এসেছে।

বোরো হিসেবে লাগানো ধানের গাছে প্রথম ধান পেকেছে ১১০ দিন পর। ওই গাছেই পর্যায়ক্রমে ৪৫ দিন পরপর একবার বোরো, দু'বার আউশ এবং দু'বার আমন ধান পেকেছে। এক গাছে পাঁচ ফলনের ঘটনা বিরল। বছরের যে কোনো সময়ে এ ধান রোপণ করা যায়।

জানা গেছে, চারটি জাত একই গাছ থেকে পাঁচবার ফলন দিচ্ছে। এই চারটি জাতের ওপর ১০ বছর ধরে চলছে গবেষণা।

কুলাউড়ার কানিহাটি গ্রামের সন্তান আবেদ চৌধুরী কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। পড়াশুনা শেষে চাকরি নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানকার জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধানবিজ্ঞানী হিসেবে ধানের জিন নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ পর্যন্ত উদ্ভাবন করেছেন প্রায় ৩০০ রকমের নতুন ধান।

বছরজুড়ে আলোচনায় রাসেল

বছরছুড়ে আলোচনায় ছিলেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলক। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ই-কমার্স উদ্যেক্তা হওয়া রাসেল গত বছরে (২০২০) একদফা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তলবের মুখে পড়েন।

কিভাবে ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ মূল্যছাড়ে পন্য সরবরাহ করছে ইভ্যালী, আর এতো মূল্যছাড়ের পর প্রতিষ্ঠানটি কোন কৌশলে লভ্যাংশ সংগ্রহ করছে- এমন সব প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। তবে সে দফায় গানিতিক নানা হিসেব দেখিয়ে পার পেয়ে যান ইভ্যালির কর্ণধর। কিন্তু পরের বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে রাসেলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।

অনেক গ্রাহক সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়েদেন- রাসেলকে যদি গ্রেপ্তারই করা হবে, তাহলে প্রথম দফায় তলব করেই কেনো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না। অবশ্যই এরপক্ষে গ্রাহকরা যুক্তি তুলে ধরেন, যেহেতু রাসেলকে সেই দফায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে, সেহেতু গ্রাহকরা ধরে নিয়েছেন ইভ্যালির সার্বিক কার্যক্রম সঠিক নীতি অনুসরণ করেই পরিচালিত হচ্ছে। এরপর গ্রাহকদের ইভ্যালির ওপর আস্থা আরো বেড়ে যায়। বেড়ে যায় বিনিয়োগও। তারপর যতদিনে রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়, ততদিনে ইভ্যালিতে গ্রাহকদের বিনিয়োগ আরো বেড়ে যায়।

আলোচিত চরিত্র মুরাদ হাসান

বছর জুড়ে আলোচনায় ছিলেন সরকারের সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এক নায়িকার সঙ্গে অশ্লীল কথা বলার ফোন আলাপ ফাঁস হয়ে যাওয়া এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমান সম্পর্কে অশালীন ও বর্ণবাদী কথা বলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ডিসেম্বর প্রতিমন্ত্রীর পদ হারান ডা. মুরাদ হাসান।

শুধু মন্ত্রীত্বই নয়, আওয়ামী লীগের দলীয় পদও হারিয়েছেন। এখন তিনি কোথায় আছেন কীভাবে আছেন তা কেউ বলতে পারছে না।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুরাদ হাসান। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। দায়িত্ব পান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে।

কিন্তু স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী থাকার সময়ে নানা বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে তারা দূরত্ব তৈরি হয়। ২০১৯ সালে একবার একটি বেসরকারি হাসপাতালে একজন রোগীকে দেখতে গিয়ে ওই হাসপাতালের নিরাপত্তকর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে যান তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। এ ঘটনা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হারান তিনি।

২০১৯ সালের ১৯ মে ডা. মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। প্রায় ১৭ মাস তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অভিযোগ আছে, এ সময়ে মুরাদ হাসান ‘ধরা কে সরা জ্ঞান’ করেছেন। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। মন্ত্রণালয়ে তার দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেছেন। এমনকি নিজ দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের নাজেহাল করেছেন, গায়ে হাত দিয়েছেন। তার খারাপ আচরণ ও দুর্ব্যবহারের কারণে অনেকেই তার দপ্তর ছেড়ে চলে গেছেন অন্য মন্ত্রণালয়ে।

গত ৬ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুরাদ হাসানের সঙ্গে চিত্র নায়ক মামনুন হাসান ইমন ও নায়িকা মাহিয়া মাহীর একটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়। এ দুটি ঘটনা দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয়। সরকার বিব্রত হয়। তীব্র সমালোচনার মুখে সরকারও মুরাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। ৬ ডিসেম্বর রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বার্তায় জানান, মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পর মুরাদ হাসান দেশ ছাড়তে চেষ্টা করেন। তিনি এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে তিনি কানাডায় প্রবেশ করতে পারেননি। ১২ ডিসেম্বর রাতে তিনি আবারও এমিরেটসেরই একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরত আসেন।

 এসএম/এমএ/এনএইচবি/এমপি/কেএফ/এসএন/এএস/জেডএকে

Header Ad

গোপনে দুইজনকে বিয়ে, কাউকেই অধিকার বঞ্চিত করেননি জান্নাতুল

ছবি: সংগৃহীত

একইসঙ্গে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করছেন জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী। স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেননি দুই স্বামীর কাউকেই। গোপনে মন জয় করে চলছিলেন দুই স্বামীর। প্রায় দুই বছর দুই স্বামীর সংসার করার পর অবশেষে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে হলফনামার মাধ্যমে গোপনে বিয়ে করেন রাজবাড়ী সদরের আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের আবু হানিফ শেখের ছেলে ইউটিউবার সাগর শেখ ও আলীপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাবা, মা ও ভাই প্রবাসে থাকায় বাবার বাড়িতে একাই বসবাস করতেন জান্নাতুল। সেখানে যাতায়াত করতেন স্বামী সাগর শেখ। সংসার জীবন ভালোই চলছিল এ দম্পতির। হঠাৎ জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় শ্বশুরবাড়ি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সাগরের। এরই মধ্যে প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে পরিবারের সিদ্ধান্তে অন্য এক যুবককে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জান্নাতুল।

এদিকে স্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের বাড়িতে তুলে না নেয়ায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। প্রথম স্বামী সাগরের দাবি, প্রায় দুই বছর ধরে তার সঙ্গেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক রেখে চলছিলেন জান্নাতুল।

স্ত্রীর পরিবার তাকে মেনে না নেয়ায় তার বোনের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে একান্তে সময় কাটাতেন স্বামী-স্ত্রী। চলতি মাসের ২ নভেম্বর তারা একসঙ্গে নিজেদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন বলেও দাবি করেন সাগর।

তবে দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় স্বামীর ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে পারেন সাগর। আর এতেই বাঁধে বিপত্তি। তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন জান্নাতুল। এখন দ্বিতীয় স্বামী নিয়েই সংসার করতে আগ্রহী তিনি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে ফিরে পেতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি আদালতে মামলা করেছেন সাগর।

সাগর শেখ বলেন, জান্নাতুল ও আমার বিয়ের বিষয়টি জান্নাতুলের মা ও বোন জানতো। বিয়ের পর আমাদের সংসার জীবন ভালোই কাটছিল। তবে হঠাৎ করে জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় তাদের বাড়িতে আমার যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বিয়ের চার মাসের মাথায় আমি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির কাজে কয়েকদিনের জন্য রাজবাড়ীর বাইরে যাই।

কাজ থেকে এসে শুনি আমার স্ত্রী জান্নাতুল অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। আমি আমার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি। ওই ছেলের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক হয়নি। আমি তোমার স্ত্রী আছি, তোমারই থাকবো। আমার আম্মু দেশে আসলে আমি তোমার কাছে চলে আসবো।’

সাগর বলেন, ‘আমি জান্নাতুলদের বাড়ি যাতায়াত করতে না পারার কারণে বিভিন্ন সময় আমরা রাজবাড়ী শহরে আমার বোনের বাসায় ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতাম। ওর কলেজে আনা-নেয়াসহ সবকিছু আমিই করতাম। এমনকি গত ২ নভেম্বরও আমরা আমার বোনের বাসায় আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছি।

তবে বিবাহ বার্ষিকী পালনের দুদিন পরে আমি জানতে পারি জান্নাতুলের সঙ্গে ওই ছেলের (দ্বিতীয় স্বামীর) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চলছে। ওই ছেলে নিয়মিত জান্নাতুলের বাবার বাড়িতে এসে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাচ্ছে। এ বিষয়ে আমি জান্নাতুলকে প্রশ্ন করলে সে আমাকে গালাগালি করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে সে আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলেও জানায়।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি জান্নাতুলের মা প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছে। তিনিও এখন আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে অস্বীকার করছেন। অথচ তার মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেম থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত সবকিছুই তিনি জানতেন।

এখন বাধ্য হয়ে আমি আমার স্ত্রীকে ফিরে পেতে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গত ১১ নভেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছি। এছাড়া ১৭ নভেম্বর রাজবাড়ীর বিজ্ঞ ১নং আমলি আদালতে মামলা করেছি।’

সাগর আরও বলেন, ‘আমাকে ডিভোর্স না দিয়ে আমার স্ত্রী অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে আমাকেও ম্যানেজ করে চলেছে, একইভাবে তার দ্বিতীয় স্বামীকেও ম্যানেজ করে চলেছে।

এটা আইন ও ধর্মীয় দুই দিক থেকেই অপরাধ। এছাড়া আমি এ পর্যন্ত আমার স্ত্রীর পেছনে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। তারপরও আমি আমার স্ত্রীকে ফেরত চাই। তাকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।’

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজী হননি জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। তবে তার দাবি, জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে তিনি জানতেন। সাগরের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি জানতেন না।

জান্নতুলের দ্বিতীয় স্বামীর বাবা বলেন, ‘কোন এক সূত্রে আমার শ্বশুর জান্নাতুলদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তাকে পছন্দ করে। পরে আমি গিয়ে তার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বিয়ের দিন ধার্য হয়। বিয়ের আগের দিন সাগর নামে এক ছেলে আমার ছেলেকে ফোন করে বলে জান্নাতুলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক আছে।

সে জান্নাতুলের সঙ্গে নিজের একটি ছবিও আমার ছেলেকে পাঠায়। এরপর আমি ওই এলাকায় আমার আত্মীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের কোন সম্পর্ক ছিল না। এছাড়া জান্নাতুলকেও আমি সরাসরি প্রশ্ন করলে সেও সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে।

পরে ঘরোয়া আয়োজনে জান্নাতুলের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে হয়। এখন সাগর নামে ছেলেটি জান্নাতুলকে তার স্ত্রী হিসেবে দাবি করছে। আমি যতদূর জেনেছি সাগরের স্ত্রী ও সন্তান আছে। এখন বিষয়টি আইনগতভাবেই সমাধান হবে।

আর জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে কথা বলতে তার বাবার বাড়িতে গেলে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি।’

বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তার মা হাচিনা বেগম বলেন, ‘সাগরের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল৷ তবে বিয়ের দুই মাসের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার মেয়ে তো ছোট বুঝে নাই, যে কারণে সেসময় ওরা ডিভোর্সের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছে। এর ৪/৫ মাস পরে আমার মেয়ের আবার বিয়ে হয়েছে। সাগর আমার মেয়েকে চাপে ফেলে এতোদিন তার সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য করেছে।’

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক জানান, ‘সাগর ও জান্নাতুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তার নোটিশের একটি কপি ইউনিয়ন পরিষদে আসার কথা। এরকম কোন কপি কখনো পাননি তারা।’

তিনি বলেন, ‘সাগর আমার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছে। আমিও খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সাগর জান্নাতুলের প্রথম স্বামী। সে সাগরকে তালাক না দিয়েই বিয়ের চার মাসের মাথায় অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে। প্রায় দুই বছর সে চালাকি করে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করেছে। সাগরের কাছ থেকে জান্নাতুল অনেক টাকা-পয়সা খেয়েছে বলেও আমি জানতে পেরেছি।’

আবু বক্কার বলেন, ‘সাগরের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি জান্নাতুলের বাবাকে নোটিশের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকি। তবে নোটিশ পেয়ে তিনি তার ছোটভাই ও তাদের এলাকার ইউপি সদস্য আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে এসে বলেন, আমি যেন পরিষদে বসে বিষয়টি সমাধান করে দেই। তবে এর ১/২ দিন পরে তিনি জানান, এ বিষয়ে তারা বসতে চান না।

আইনগতভাবে তারা বিষয়টি সমাধান করতে চান। পরে আবার তারা বসতে সম্মত হলে জান্নাতুল ও তার বাবা এবং তাদের এলাকার ইউপি সদস্য আবুল কালামসহ পরিষদের অন্য সদস্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদে বসেছিলাম। সাগরও সেখানে ছিল। তবে সেখানে জান্নাতুল বলে দিয়েছে সে কোনভাবেই সাগরের সঙ্গে ঘর সংসার করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা নির্যাতিত হয়। কিন্তু ছেলেরা যে কতোটুকু নির্যাতিত হয় তা এই সম্পর্কের জের দেখলে বোঝা যায়। আমাদের সমাজে ছেলেরা আরও বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। সেটা নীরবে নিভৃতে ছেলেরা সহ্য করে যাচ্ছে। আমি আশা করবো আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা বিষয়টি তুলে ধরবেন।

আপনাদের সংবাদের মাধ্যমে মানুষ যাতে সচেতন হতে পারে। আজকে আমার ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটেছে। আর কোন ইউনিয়নে যেন এমন ঘটনা কোনদিন না ঘটে।’

Header Ad

শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

২৪ এর গনঅভূ্থানে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী, শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে যান বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন।

এ সময় মোবাইল ফোনে লাউডস্পিকারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান বলেন, আব্দুল্লাহ দেশের জন্য মানুষের জন্য মানবতার কল্যাণের জন্য জীবনকে উৎস্বর্গ করে আল্লাহর দরবারে চলে গেছেন, আল্লাহ তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করুন। শহীদরা মরে না। তারা আল্লাহর জীম্মায় জীবন্ত থাকে। এ সময় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বড় আঁচড়া গ্রামে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন আব্দুল্লাহর বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের খোঁজ খবর নেন,কবর জিয়ারত করেন এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।

এর আগে তিনি নাভারণ দারুল আমান ট্রাষ্টে ওলামা সম্মেলনে যোগদান করেন। পরে ২০১৬ সালে গুম হওয়া ইসলামি ছাত্র শিবিরে নেতা রেজোয়ানের বাড়িতে যান এবং খোঁজ খবর ও সমবেদনা জানান।

এসময় তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মৃত্যু বরনকারী সকলে ন্যায় বিচার পাবেন বলে পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেন। এবং গনঅভূ্থানে নিহত সকল পরিবারের সাথে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম আছে থাকবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোরের জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম রসূল, সাবেক জেলা আমীর মাওলানা হাবীবুর রহমান, জেলা জামায়াতের নেতা মাওলানা আবু জাফর, মাওঃ শিহাব উদ্দিন শার্শা থানা আমীর রেজাউল ইসলাম, সেক্রেটারী মাওলানা ইউসুফ আলী ও ঝিকরগাছা থানা আমীর মাওলানা আসাদুল আলম প্রমূখ।

Header Ad

বিরামপুরে আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

দিনাজপুরের বিরামপুরে বিশনি পাহান (৫৫) নামের এক আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের ময়না মোড় এলাকার ধানক্ষেত থেকে ওই নারীর হাতবাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত বিশনি পাহান উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের বেণুপুর গ্রামের সাধন পাহানের মেয়ে।

নিহতের ভাই চরকা পাহান বলেন, আমার ছোট বোনের স্বামী বিশনি পাহানকে ছেড়ে চলে গেছেন। সে প্রতিরাতেই নেশা করতো। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমার বাড়িতে থাকতো আমার বোন। আমার বোন এলাকায় মানুষের জমিতে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। শুক্রবার বিকেলে এলাকার এক ব্যক্তির জমিতে ধান কাটার কাজ শেষ করে আর বাড়িতে ফেরেননি। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে ধানক্ষেতে হাতবাঁধা অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, এলাকাবাসীর দেওয়া খবরে ঘটনাস্থল থেকে আদিবাসী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে তাকে কে বা কাহারা হত্যা করেছে। তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গোপনে দুইজনকে বিয়ে, কাউকেই অধিকার বঞ্চিত করেননি জান্নাতুল
শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন
বিরামপুরে আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার
বিএনপির কাঁধে অনেক দ্বায়িত্ব: তারেক রহমান
'জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত'- তোফায়েল আহমেদ
৩ মাসে জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা : জ্বালানি উপদেষ্টা
জুটি বাধলেন মিঠুন চক্রবর্তী-আফসানা মিমি
দেশ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই : তারেক রহমান
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের আশঙ্কা
অক্টোবরে সড়কে প্রাণ গেছে ৪৭৫ জনের
গায়ানায় দলের সঙ্গে যোগ দিলেন সাকিব
আইপিএল নিলামের আগেই নিষিদ্ধ হলেন ভারতের ২ ক্রিকেটার
গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া
পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ
মাকে হত্যার পর থানায় হাজির ছেলে
৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জনকে নিষিদ্ধ করলো বিসিবি