শিক্ষাকতা ছেড়ে কেন আমলা হয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার

কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা দিয়ে। এরপর করেছেন শিক্ষাকতা। পরবর্তীকালে হয়ে যান পুরোদস্তুর সরকারি কর্মকর্তা (আমলা)। সদ্য প্রয়াত সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নিজের কর্মজীবনের বর্ণনায় বলেছেন কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে আমলাতন্ত্র বেছে নিয়েছিলেন।
তার লেখা ‘বঙ্গভবনে পাঁচ বছর’ বইয়ে মাহবুব তালুকদার লেখায় উঠে এসেছে। ১৯৬৮ সালে একটি ফিয়টি ৬০০ মডেলের গাড়ি ছিল কবি মাহবুব তালুকদারের। কিন্তু অনেক ঘুরেও তিনি একটা ড্রাইভিং লাইসেন্স যোগাড় করতে পারেননি।
এরপর ১৯৭২ সালে তিনি যখন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর স্পেশাল অফিসার পদে নিয়োগ পান, প্রথম যে কাজটি তিনি করেন, তা হলো-ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া সবকিছু লাইসেন্স করিয়ে নেওয়া। তার ভাষায়, ‘এদেশে আসলে মানুষের দুটো জাত। একটি সরকারি মানুষ, অন্যটি বেসরকারি মানুষ।’
ঝামেলা ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার স্বপ্নই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে আমলাতন্ত্রের পথে নিয়ে আসে। পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি ছিলেন বঙ্গভবনে, খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাংলাদেশের স্পর্শকাতর সময়ের চারজন রাষ্ট্রপতিকে।
তার লেখায় পাঠককে তিনি নিয়ে গিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদটার পর্দার আড়ালে। খাতাকলমে তিনি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও, বাস্তবে তার হাতে ন্যূনতম ক্ষমতা। এই ক্ষমতাহীনতা প্রথম রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে করে তোলে চরম বিষণ্ণ। এক সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি শক্তি বা পাওয়ার চাই না। আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই। আমাকে এ পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিদেশে পাঠান।’
বঙ্গবন্ধু সবকিছু বুঝলেও তিনি তার এই অনুরোধে সায় দিলেন না। এরপর কিছুদিন পর তিনি পদত্যাগ করেন।
তার লেখা বইতে মাহবুব তালুকদার রাগঢাক না করে অনেক কথাই বলেছেন। আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে স্বাধীনতা পরবর্তী শাসন ব্যবস্থা নিয়ে অনেক কথাই রীতিমত ভাবিয়ে তোলে।
বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিল লেখকের বেশ ভালোই সখ্যতা। কাজ করতে গিয়ে যা দিন দিন হয়ে বেশ আন্তরিকতার। ১৪ই আগষ্ট লেখক শেখ মুজিবের পরেরদিন ভাষণ প্রস্তুত করছিলেন। তা ছাড়া বঙ্গবন্ধু তাকে নিজের আত্নজীবনী লেখার দায়িত্বও দেন। কিন্তু এরপরের দিন থেকে সব যেন ঘটতে থাকে খুব দ্রুত গতিতে। লেখক যেভাবে বর্ণনা করেছেন এরপরের কয়েকদিনের ঘটনাপঞ্জী, তা হার মানায় খুব সুন্দর করে লেখা কোন সিনেমার গল্পকেও।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পরের ঘটনাকে লেখক বর্ণনা করেন এভাবে, ‘সন্ধ্যা থেকে ছ’ঘন্টারও অধিকাল বঙ্গভবনে কাটালাম। কেউ বঙ্গবন্ধুর নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করল না। এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, তার কোনো প্রতিবাদ নেই, প্রতিক্রিয়া নেই কোনো খানে। যারা নতুন শাসন ক্ষমতায় এলেন, তারা গতকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নামে পাগল ছিলেন, তার একটু সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য কি ব্যাকুল ছিলেন তারা। অথচ এখন সবার কাছে তিনি মন্দ হয়ে গেলেন। রাতারাতি এদের এই পরিবর্তন বিস্ময়কর। রাজনীতি! তোমার অন্য নাম নিষ্ঠুরতা।’
এরপর মোশতাক, সায়েমের অধীনে তিনি কিছুদিন কাজ করেন। বিবেক তাড়নায় হোক আর বাধ্য হয়েই হোক, তিনি এক সময় বঙ্গভবনের চাকরি ছেড়ে দেন। কিন্তু এর মাঝে বইটিতে বলেছেন ইতিহাসের অনেক মূলব্যান দৃশ্যপট!
এসএম/এমএমএ/
