ড. মোমেনের যত বেফাঁস মন্তব্য!
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আব্দুল মোমেনের বেফাঁস কথাবার্তায় হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। দলের ভেতরে বাইরে তিনি সমানে সমালোচিত হচ্ছেন। বিরোধীরা বলছেন, পরাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করেছেন। আর নিজ দল আওয়ামী লীগের নেতারা বেলছেন, মোমেন দলের কেউ না।
সর্বশেষ চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘ভারতকে বলেছি শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে ভারতের যা যা করার দরকার করতে অনুরোধ করেছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনেকেই আমাকে ভারতের দালাল বলেন। কারণ অনেক ইস্যুতে স্ট্রং স্টেটমেন্ট দেই না। আমি বলেছি, কিছুদিন আগে আপনাদের দেশেও এক ভদ্রমহিলা কিছু কথা বলেছিলেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটি কথাও বলিনি। বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে, আমরা বলিনি।’
তার এমন বক্তব্যে দেশের রাজনীতিতে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কাউকে ভারতকে অনুরোধ করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
এদিকে, শনিবার (২০ আগস্ট) আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, মোমেন আওয়ামী লীগের কেউ না।
অপরদিকে, সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তুলোধুনো করতে ছাড়ছে না। কেউ কেউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানাচ্ছেন।
আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো তাকে ব্যাপক ট্রল হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরে।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন যে এবারই প্রথম বেফাঁস কথা বলেছেন তা কিন্তু নয়। ২০১৮ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি এ রকম বেশ কয়েকবার বেফাঁস কথা বলে আলোচনায় আসেন। ।
এর আগে গত ১২ আগস্ট সিলেটে এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও আমি বলব, ‘বাংলাদেশের মানুষ সুখে আছে, বেহেশতে আছে।’
তার এই বক্তব্যে তীব্র সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করে বলেন, জ্বালানি তেল, গ্যাস, পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের যখন হাঁসফাঁস অবস্থা তখন তার এই বক্তব্য পরিহাসের মতো শোনায়।
সমালোচনার পর অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ‘ট্রু সেন্সে’ বেহেশতে কথা বলেননি। কথার কথা বলেছেন। গণমাধ্যমের কারণে তার বক্তব্য এমনভাবে এসেছে।
এ সময় ড. মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, আপনাদের মিডিয়া অনেক সময় এই অস্থিরতা বাড়ানোর জন্য অনেক বানোয়াট খবর-টবর দেয়। এটা খুব দুঃখজনক। আপনারা তো
‘আমারে খায়া’ ফেললেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। সেই সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেই বৈঠকে তিনি ব্লিঙ্কেনকে বলেন, আমি সবসময় আপনাদের কাছে ঋণী, কারণ আমি যখন গৃহহীন, বেকার এবং রাষ্ট্রহীন ছিলাম, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাকে একটি বাড়ি এবং একটি চাকরি দিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য এখনো মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে আছে। এটি নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয় তখন। তার ওই বক্তব্য প্রচারের পর নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। মন্ত্রী কবে, কেন রাষ্ট্রহীন ছিলেন এই প্রশ্নও তোলেন অনেকে। যদিও এই প্রশ্নের জবাব মোমেন কখনোই দেননি।
ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে ওই বৈঠক সম্পর্কে বলতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনের আনার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন।
তার এই বক্তব্য নিয়েও নিজ দলের ভিতরে-বাইরে তুমুল বিতর্ক হয়। তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কথা তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেননি।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালেই দেশটিতে অবস্থানরত ভারতীয় অভিবাসীদের একটি সমাবেশে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। এসময় তিনি জানান, র্যাবের কিছু অফিসারদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি ভারতের সহায়তা চেয়েছেন।
তারপর দেশে ফিরেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারত বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উত্থাপন করবে। যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ লাখ ভারতীয় বসবাস করে। তারা খুবই শক্তিশালী। তারাও সরকারকে বলেছে। এটি হয়েছে শুধু ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র বলে।’
২০১৯ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুদেশের সম্পর্ক খুবই গভীর। অনেকটা স্বামী-স্ত্রীর মতো।’
আরইউ/এনএইচবি/এমএমএ/