উন্নত দেশের মতো বিমান বাহিনী চায় সরকার: প্রধানমন্ত্রী
বর্তমান সরকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে একটি উন্নত দেশের বাহিনীর মতো দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক ফাইটার প্লেন, এয়ার ডিফেন্স রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কেননা সরকার চায় এটি একটি উন্নত দেশের বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠুক। আমরা বিমান বাহিনীকে একটি উন্নত দেশের বাহিনীর মতো দেখতে চাই।’
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যশোরস্থ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ‘শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ ২০২১’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই নতুন ঘাটি (উইং), ইউনিট এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনের পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান, এয়ার ডিফেন্স রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে আমরা জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়ন শুরু করি। বিমান বাহিনীকে একটি শক্তিশালী ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ইতোমধ্যে বিমান বাহিনীতে সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম। স্থাপন করা হয়েছে নতুন নতুন ঘাঁটি, ইউনিট এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ধরনের বিমান, রাডার ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহলিং-এর লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু এরোনটিক্যাল সেন্টার।’
তিনি বলেন, এই সেন্টারের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিজস্ব প্রযুক্তি ও জনবলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিমান ও হেলিকপ্টার ওভারহোলিং করছে। মহাকাশ গবেষণা, বিমান বাহিনীর উন্নয়ন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল সেক্টরকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’।
প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ এবং ফ্লাইপাস্ট প্রত্যক্ষ করেন। তাঁকে কুচকাওয়াজ রাষ্ট্রীয় অভিবাদনও জানায়।
বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এরআগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তিনি কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ক্যাডেটদের মাঝে সোর্ড অব অনার, বিমানবাহিনী প্রধান ট্রফি, কমানডেন্ট ট্রফি প্রদান করেন। একই সঙ্গে তিনি ফ্লাইং ব্যাজও প্রদান করেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সেই সময় আমরা বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিমান বাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান মিগ-২৯ সংযোজন করা হয়, এজন্য বিএনপি সরকার তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলাও দেয়, বলেন তিনি। এছাড়া সুপরিসর সি-১৩০ পরিবহন বিমান এবং উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার স্থাপন করা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নততর এবং যুগোপযোগী উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ সুনিশ্চিত করার জন্য তাঁর সরকার বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক ফ্লাই-বাই-ওয়্যার এবং ডিজিটাল ককপিট সম্বলিত ইয়াক-ওয়ান থ্রি জিরো কমব্যাট ট্রেইনার, কে-এইট ডব্লিউ জেট ট্রেইনার, এল-ফোর ওয়ান জিরো ট্রান্সপোর্ট ট্রেইনার, এডব্লিউ-ওয়ান ওয়ান নাইন কেএক্স হেলিকপ্টার ট্রেইনার এবং বিভিন্ন ধরনের সিমুলেটর সংযোজন করেছে।
এ ছাড়া, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য সার্টিফাইড টায়ার-থ্রি ডাটা সেন্টার ক্রয় করা হয়েছে। বর্তমানে এর স্থাপন কাজ চলমান রয়েছে। এই ডাটা সেন্টারের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম প্রথাগত পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদন করা সম্ভব হবে। অতি সম্প্রতি বিমান বাহিনীর জন্য ক্রয় করা হয়েছে ভিস্যাট হাব ও টার্মিনাল স্টেশন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সহায়তায় এই ভিস্যাট হাব ও টার্মিনাল স্টেশনের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি ও ইউনিটসমূহের মধ্যে স্যাটেলাইটভিত্তিক যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে, বলেন তিনি।
তা ছাড়া শিগগিরই বিমান বাহিনীতে আরো বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংযোজনের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আমাদের বিমান বাহিনী করোনাকালীন এবং যে কোন দুর্যোগে মানুষের পাশে থেকেছে এবং উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের অর্পিত দায়িত্ব দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পালনের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ তিন বছর কঠোর প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে কাক্সিক্ষত কমিশন পেতে যাওয়া ক্যাডেটদের আনন্দঘন মুহূর্তে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘মনে রাখবে তোমাদের কর্মক্ষেত্র শুধু বাংলাদেশই নয়, এখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের বিমান বাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। অনেক ক্রিটিক্যাল জায়গায় যেখানে অন্য দেশের বাহিনী যেতে সাহস পায় না সেখানেও আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং বিমান বাহিনী গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। কাজেই, আমি মনে করি, ভবিষ্যতের জন্য তোমাদের নিজেদেরকে সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দায়িত্ব পালনকালে তোমরা সবসময় দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালবাসবে এবং দেশের জন্য তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সততার সঙ্গে পালন করবে। শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার যে বিরাট দায়িত্ব তোমাদের কাঁধে অর্পণ করা হলো-তা নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পালন করবে বলে আমি আশা করি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা সামরিক একাডেমিতে প্রথম শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণের একটি অংশের উদ্বৃতি তুলে ধরেন।
জাতির পিতা বলেন, ‘আজ তোমরা তোমাদের ট্রেনিং শেষ করলে। কিন্তু তোমাদের মনে রাখতে হবে, এটা এক পর্যায়ের শেষ, আর এক পর্যায়ের শুরু। পরের পর্যায়ে দায়িত্ব অনেক বেশি। আজ তোমরা ট্রেনিং সমাপ্ত করে সামরিক বাহিনীর কর্মচারী হতে চলেছ। এখন তোমাদের ওপর আসছে দেশ এবং জাতির প্রতি দায়িত্ব, জনগণের প্রতি দায়িত্ব, যে সমস্ত সৈনিকদের তোমরা আদেশ-উপদেশ দেবে, তাদের প্রতি দায়িত্ব, তোমাদের কমান্ডের প্রতি দায়িত্ব এবং তোমাদের নিজেদের প্রতি দায়িত্ব।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তোমাদের পূর্বসূরিদের দূরদর্শিতা, পেশাদারিত্ব ও কঠোর পরিশ্রমে বিমান বাহিনী আজ যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, তাকে তোমাদের মেধা, পেশাদারিত্ব ও দেশপ্রেম দিয়ে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বাসস/এমএমএ/