ছুটি নিয়ে জেলে গিয়েছিলেন আইসিবি ডিজিএম!

মাথার ওপর ঝুলছিল টাকা আত্মসাতের মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তৈরি হয়েছিল জেলে যাওয়ার শঙ্কা। তাই অফিসে আবেদন করেন অর্জিত ছুটির (ইএল)। ছুটি নিয়েই হাজির হন আদালতে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। ছুটি শেষে জামিন নিয়ে তিনি এখন অফিস করছেন।
তিনি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আব্দুল মোত্তালিব। তিনি আইসিবির রাজশাহীর শাখা প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। তার ছুটি নিয়ে জেলে যাওয়ার ঘটনাটি টেরই পায়নি আইসিবি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মোত্তালিব বলেন, ‘এটি ব্যক্তিগত বিষয়। কোনো অসুবিধা দেখলে পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে কথা বলারও কিছু নেই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কানোপাড়া সাজুরিয়া গ্রামের মৎসচাষি আব্দুল বারিক মণ্ডলের নামে ২০১১ সালে আইসিবি থেকে ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল। তবে নথিপত্র জাল করে প্রথম কিস্তির ২৭ লাখ টাকা তুলে নেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার মঙ্গলপাড়া গোবিন্দপাড়া গ্রামের গোলাম মোর্শেদ হক। এ কাজে সহায়তার অভিযোগ ওঠে রাজশাহী শাখা প্রধান আব্দুল মোত্তালিব ও প্রধান কার্যালয়ের এজিএম আহম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তিনজনের নামে মামলা করেন বারিক মণ্ডল।
মামলাটি তদন্ত করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম। তিনি ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পলাতক থাকেন মোত্তালিব। অবশেষে মামলার নির্ধারিত দিন গত ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি রাজশাহী বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। ২৮ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত তাকে ছয় মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন দেন। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আব্দুল মোত্তালিব কারাগারে যাওয়ার দিনটিতেও হাজিরা খাতায় সই করেছেন। দিনটি ছিল ১৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার। পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সরকারী ছুটি। আব্দুল মোত্তালিব রবিবার অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ দিনের অর্জিত ছুটির আবেদন দেন। ১৪ সেপ্টেম্বর এ আবেদন দিয়েছেন তিনি। ছুটির সময় সহকারী মহাব্যবস্থাপক আকরাম হোসেন দায়িত্ব পালন করবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন আবেদনপত্রে।
হাজিরা খাতায় দেখা গেছে, ১৯ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আব্দুল মোত্তালিবের স্বাক্ষরের ঘরে লাল কালিতে ‘ইএল’ লেখা আছে। তার ছুটির আবেদনের কপিও পাওয়া গেছে। এতে পৈত্রিক জমিজমা ভাগ-বাটোয়ারা, খাজনা পরিশোধ এবং সীমানা প্রচীর নির্মাণসহ পারিবারিক কাজে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। গ্রামে না গিয়ে তিনি আদালতের মাধ্যমে গিয়েছিলেন কারাগারে।
আব্দুল মোত্তালিবের গ্রামের বাড়ি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামে। পরিবার নিয়ে তিনি রাজশাহী নগরীর উপশহরে থাকেন। ১৯৮৪ সালে তিনি ক্যাজুয়াল সুপারভাইজার হিসেবে আইসিবিতে চাকরি পান। ২০১৭ সালে তিনি ডিজিএম হন। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে। দুদকের তদন্তে গ্রাহকের ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি আইসিবিরও ৬০ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি উঠে এসেছে।
আব্দুল মোত্তালিবের বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কিসমাতুল আহসান বলেন, ‘ছুটি নিয়ে জেলে যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেছে কি-না তা আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
এসএসকে/এএন
