ফিরে দেখা ২০২১
সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে সরব শিক্ষার্থীরা

সড়ক নিরাপত্তা ও গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়ে আন্দোলন ছিল ২০২১ সালের অন্যতম আলোচিত বিষয়। হাফ ভাড়ার দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন জারি করার পর সড়ক ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।
৩ নভেম্বর সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ায়। এর ফলে প্রতিলিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১৫ টাকা বাড়ে।
এই ঘটনা পুঁজি করে বাস মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানায়। এ দাবিতে তারা দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘট ডাকে। এতে প্রায় অচল হয়ে যায় দেশ।
বাস মালিকদের এমন দাবির মধ্যেই শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ার দাবি জানা। বাস মালিকরা এ দাবি প্রত্যখ্যান করে। তুমুল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কতৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
এ আন্দোলনের মধ্যেই গত ২৪ নভেম্বর দুপুর পৌনে ১২টায় গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় নটর ডেম কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হন। নাঈমকে ধাক্কা দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্যবাহী গাড়ি। গাড়িটির মূল চালক গাড়ি না চালিয়ে ‘ভাড়াটে চালক’কে দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
মুহূর্তে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ডিএসসিসির নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। ওই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস উপস্থিত হন এবং ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
মেয়রের এই আশ্বাসের কয়েকদিন পরই বর্জ্য বিভাগের সাতজনসহ মোট নয়জন চালককে রবখাস্ত করে ডিএসসিসি। এসব চালক নিজেরা গাড়ি না চালিয়ে ‘ভাড়াটে চালক’ দিয়ে গাড়ি চালাতেন বলে ডিএসসিসির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে।
নাঈমের মৃত্যুর চারদিন পর ২৯ নভেম্বর রামপুরায় বাসচাপায় মারা যান একরামুন্নেসা স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী মাঈনুদ্দীন। এসময় গ্রিন অনাবিল পরিবহণের ঘাতক বাসটিকে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।
এর ফলে সড়ক নিরাপত্তা এবং হাফ ভাড়ার আন্দোলন লাগাতার আকার ধারন করে। দাবি না মানা হলে শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে না বলে জানিয়ে দেয়।
তুমুল আন্দোলনের এক পর্যায়ে বাস মালিকরা প্রথমে ঢাকা শহরে শর্তসাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার বিষয়টি মেনে নেয়। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে সারাদেশেই হাফ ভাড়া কার্যকরের দাবি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায়।
এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দেন বিভিন্ন পেশাজীবী। অবশেষে সিটি সার্ভিস বাসের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে হাফ বাড়ার বিষয়টি মেনে নেয় বাস মালিকরা। দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রযোজ্য নয় বলে জানানো হয়।
গত ১৩ ডিসেম্বর পাঁচটি শর্তে মেট্রো এলাকায় চলাচলরত (সিটি সার্ভিস) বেসরকারি বাসের শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ধারা ৩৪ (২) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
শর্ত পাঁচটি হলো-বিদ্যমান ভাড়ার ৫০ শতাংশ কম ভাড়া, শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা ছবিযুক্ত হালনাগাদ বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। এছাড়া এ হাফ ভাড়া কার্যকর হবে সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির দিনে এ হাফ ভাড়া প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া দূরপাল্লার বাসে হাফ ভাড়া কার্যকর হবে না।
হাফ ভাড়া ঢাকা মহানগরে ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে এবং অন্যান্য মহানগর মেট্রো এলাকায় ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। ঘরে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।
আরইউ/
