চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন
দিনভর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে নিহত ৩
চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দিনভর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। কিছু স্থানে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, সংঘর্ষ, গুলি এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঠাকুরগাঁও, পটুয়াখালী ও সিলেটে তিনজন নিহত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সহিংসতায় আহত হয়েছেন আরও ৫৩ জন।
তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়েছি বিভিন্নভাবে। সব মিলিয়ে এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে, জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল। তাই ভোটারদের উপস্থিতি আমরা ৭০ শতাংশের বেশি আশা করছি।’
তিনি আরও জানান, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত থাকার কারণে ১৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোট বন্ধ করা হয়। ভোট গ্রহণের সময় প্রার্থীদের সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় ২৯ জন আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় ৬৩ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সংঘর্ষে নিহত ৩
সিলেটের গোলাপগঞ্জে ফুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় আবদুস সালাম (৪৫) নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। তিনি লক্ষিপাশা ইউপির রামপা দক্ষিণ ভাগ এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত ৮টার দিকে পরাজিত একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকেরা বৈটিকর এলাকায় সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে চাইলে অবরোধকারীরা পুলিশের ওপর চড়াও হন। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি গুলি ছোড়ে। এ সময় সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় আবদুস সালামকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহতের ছেলে জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার বাবা মৃত্যুবরণ করেছেন।’
গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ গোলাম কবির বলেন, ‘ওই ব্যক্তি কার গুলিতে মারা গেছেন, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
এ বিষয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ গোলাম কবির বলেন, “একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তবে তিনি কার গুলিতে মারা গেছেন, সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”
এ বিষয়ে জানতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরীর মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।
ঠাকুরগাঁওয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধ এবং এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে হামিদুল ইসলাম (৬৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার রুহিয়া থানার রাজাগাঁও ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হামিদুল ইসলাম রাজাগাঁও ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামের মৃত তছির উদ্দীনের ছেলে।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া থানার রাজাগাঁও ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আসাননগর কাদেরিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা ভোটকেন্দ্রের ফলাফলকে কেন্দ্র করে রাত ৮টার দিকে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন।
রুহিয়া থানার ওসি চিত্ত রঞ্জন বলেন, ‘ঘটনাস্থলেই একজন মারা গেছেন। বিস্তারিত পরে জানানো হবে। আহতরা ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল খালেক (৪৫) নামে এক মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে চরমন্তাজ ইউনিয়নে নয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। তবে কার গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন সে বিষয়ে এখনও দায়িত্বশীল কোনো পক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, নিহত ব্যক্তি মেম্বার প্রার্থী জিয়ার সমর্থক। নির্বাচন পরবর্তী ভোট গণনা নিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে।
রাঙ্গাবালী থানার ওসি জগলুল বলেন, আমি এখনও কিছু বলতে পারছি না। চরমোন্তাজ পৌঁছানোর পর বিস্তারিত জানাতে পারব।
এ বিষয় জানতে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এসএ/