ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ
স্থায়ী আইনসহ ৭ প্রস্তাব ন্যাপের
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে চলমান সংলাপের তৃতীয় দিনে সংবিধান অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট আইনি কাঠামো তৈরিসহ সাত প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রবিবার (২৬ মার্চ) বিকাল চারটায় বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে এই প্রস্তাব দেন ন্যাপের নেতারা। ন্যাপের দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্যকরী সভাপতি আইভি আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেন।
সংলাপ শেষে আইভি আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, 'নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা আইন করার প্রস্তাব দিয়েছি রাষ্ট্রপতিকে। সরকার থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। আইন প্রণয়ন করতে হবে।' তিনি বলেন, ‘ভোটধিকার প্রয়োগ করতে আমরা যেন সবাই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারি। সেখানে যেন কোনও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য প্রভাব খাটাতে না পারে। এ ধরনের প্রস্তাবগুলো আমরা দিয়েছি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইভি আহমেদ বলেন, ‘সার্চ কমিটি গঠনে আমাদের কাছে কোনো নাম চাওয়া হয়নি। তাই আমরাও কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথাও হয়নি।’
সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, সংলাপে ন্যাপ স্বাধীন, কার্যকরী অগ্রহণযোগ্য ইসি গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সাত দফা দাবি পেশ করেছে। ন্যাপের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা, ইসি গঠনে ক্ষেত্রে যোগ্য, দক্ষ, নির্মোহ, সৎ ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নিয়োগ দেওয়া, জবাবদিহিমূলক নির্বাচন কমিশন গঠন করা এবং স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী ব্যক্তি ও রাজনীতি দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।
সংলাপে অংশ নেওয়া ন্যাপের প্রতিনিধিরা হলেন, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, কাজী সিদ্দিকুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আহমেদ খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পার্থসারথি চক্রবর্তী ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনিল চক্রবর্তী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন।
প্রেস সচিব জানান, বঙ্গভবনে ন্যাপের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনই সংলাপের আলোচনার মূল লক্ষ্য।' তিনি আশা প্রকাশ করেন, পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি দক্ষ, শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রপ্রধান দেশের ইসি গঠনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
গত ২০ ডিসেম্বর প্রথম দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। গত ২২ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং সন্ধ্যা ৬টায় খেলাফত মজলিসের সঙ্গে, ২৮ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে, ২৯ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ-এর সঙ্গে এবং ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে আলোচনা হবে ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায়। ২ জানুয়ারি বৈঠক হবে গণফোরামের সঙ্গে সন্ধ্যা ৬টায় এবং বিকল্প ধারা বাংলাদেশ-এর সঙ্গে সন্ধ্যা ৭টায়। আগামী ৩ জানুয়ারি সংলাপ হবে গণতন্ত্রী পার্টির সঙ্গে সন্ধ্যা ৭ টায় এবং বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সন্ধ্যা ৭টায়। তবে কমিউনিস্ট পার্টি পার্টি সংলাপে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।
বাসস/এপি/এএন