ফিরে দেখা ২০২১
ছোট দলের বড় হুঙ্কার মোকাবিলায় ব্যস্ত ছিল আওয়ামী লীগ
করোনা অতিমারির মধ্যে আরও একটি বছর বিদায় নিচ্ছে। বিদায়ী বছরে রেখে যাচ্ছে কিছু আলোচিত ঘটনা। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিল মৃদু উত্তাপ। বিগত কয়েক বছর রাজনীতির মাঠে সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারছে না বিএনপি। টানা তিন মেয়াদে সরকারে থাকায় আওয়ামী লীগও ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
তবে এতে কিছুর মধ্যেও কিছু ঘটনা আওয়ামী লীগকে তাঁতিয়ে তুলেছে। যা বলতে গেলে পচা শামুকে পা কাটার মতো। বিএনপি মাঠে না থাকলেও সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মাঠে ছিল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
গেল বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের শুরুর দিকে করোনার চোখ রাঙানিতে সেভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল না। শুধু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ আর ঘরোয়া আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রথম কয়েক মাস পার করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে আওয়ামী লীগকে যেভাবে দেখা গেছে সেভাবে আর কোনও দলকে পাওয়া যায়নি।
গেল বছরের প্রথম দুই মাস রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকলেও মার্চ মাসে উত্তাল হতে থাকে রাজনীতির মাঠ। বিশেষ করে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে শুরু হতে থাকে রাজনৈতিক উত্তাপ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বড় অনুষ্ঠান মালা সাজায়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে যোগদান করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি নরেন্দ্র মোদী। তার আগমনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপের শুরু।
নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন। তখন হেফাজতে ইসলাম মোদির সফরের বিরোধিতা করে বলেছিল, ‘ভারতের মুসলমানদের উপর নির্যাতনের দায় ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদির ওপর পড়ে এবং সেজন্য তারা তাকে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী বা মুজিববর্ষ উপলক্ষে এই দেশে স্বাগত জানাবেন না।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংঘর্ষের শুরু, পরে এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে সংঘর্ষে কয়েকজন নিহতও হন। এই ঘটনাকে ট্যাকল দিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে হিমশিম খায় আওয়ামী লীগ। তবে প্রশাসনিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয় দলটি।
মোদী বিরোধী আন্দোলন শেষ হতে না হতেই নারী নিয়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ফেঁসে যান হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় লোকজন। পরে রিসোর্টটিতে হামলায় চালিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান হেফাজত কর্মীরা। রিসোর্ট ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, বাজারের দোকানপাট, স্থানীয় যুবলীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রলীগ নেতার বাড়িঘর ভাঙচুর করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও তাণ্ডব চালায় তারা। গাড়ি ভাঙচুর ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ঘটনার পর সোনারগাঁও এলাকা পরিদর্শন করে আওয়ামী লীগের একটি টিম। সেখানে তারা হেফাজতে ইসলামকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার ঘোষণা দেন। পরে অবশ্য মামুনুল হকসহ হেফাজতের কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হেফাজতের এই ঘটনা থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই গত ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীর দিন কুমিল্লা শহরের নানুয়াদীঘির একটি পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ পাওয়া যায়। সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার শুরু হয় রাজনৈতিক উত্তাপ। ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে অন্য জেলাতেও। গাইবান্ধায় হিন্দু বাড়িতে আক্রমণ হয়। এভাবে রাজনৈতিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করলেও প্রশাসনিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগ সরকার।
এভাবে ছোট দলগুলো বড় নাড়া দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। তবে সবগুলো ঘটনা মোকাবিলায় তাদের প্রশাসনিক সহযোগিতা নিতে হয়েছে। এভাবে একের পর ছোটখাটো ঘটনায় বিব্রত হতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে।
এসএম/এএন