অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা ২০২০ ঘোষণা
প্রতি বছরের মতো এবারও অনন্যা বর্ষব্যাপী আলোচিত-আলোকিত দশ কৃতী নারীকে সম্মাননা প্রদান করতে যাচ্ছে নারী বিষয়ক পত্রিকা পাক্ষিক। প্রতি বছর নিজ নিজ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ১০জন বিশিষ্ট নারীকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক ও প্রকাশক তাসমিমা হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ১০ জনের তালিকা ও তাদের অবদানের বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে।
আগামী মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় রাজধানীর খামারবাড়িস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটোরিয়ামে ‘অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা ২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন:
১. কামরুন্নাহার জাফর, রাজনীতি
‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’ বৈপ্লবিক এই প্রকল্প কামরুন্নাহার জাফরের নেতৃত্বে বাংলাদেশের তৃণমূল স্তরে ক্লিনিক করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সালের ঘটনা। তিনি বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য, জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এরপর তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে শ্রম, সমাজকল্যাণ এবং জনশক্তি উন্নয়নের উপমন্ত্রী এবং ১৯৮২ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন।
২. শাহীদা বেগম, উদ্যোক্তা
৩২ বছর ধরে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন ফরিদপুরের শাহীদা বেগম। ২০০৪ সাল থেকে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। তাঁর পেঁয়াজ বীজ দেশসেরা। গত বছর চার কোটি টাকার পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করেছেন তিনি। শাহীদা বেগম কেবল সফল কৃষক নন, তাঁর মাধ্যমে তৃণমূল স্তরের শত নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
৩. লাফিফা জামাল, প্রযুক্তি
কম্পিউটার সায়েন্ড অ্যান্ড ইঞ্জিয়ারিং নিয়ে পড়ার সময় রোবটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করেছেন অধ্যাপক লাফিফা জামাল। ২০১৬ সালে কর্তৃপক্ষ লাফিফা জামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগ গড়ার দায়িত্ব অর্জন করেন। তাঁরই নেতৃত্বে ২০১৮ সালে ফিলিপাইনে আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো যোগ দিয়ে লাভ করে স্বর্ণপদক। দেশের ছেলে-মেয়েরা ২০২০ সাল থেকে যুক্ত হতে পারে বাংলাদেশের দুটি রোবট অলিম্পিয়াডের সঙ্গে।
৪. অল্পনা রানী, কৃষি
সারা দেশে যখন বইছে হাইব্রিড বীজে চাষাবাদের জোয়ার তখন সাতক্ষীরার অল্পনা রানী মিস্ত্রী চলেছেন বিপরীত স্রোতে। দেশি বীজ সংগ্রহ করে চাষবাদ করছেন তিনি।
দেশীয় বীজে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সাতক্ষীরার অল্পনা রানী মিস্ত্রী। শুধু নিজেই দেশীয় বীজে চাষাবাদ করছেন না অন্যদেরও উদ্ধুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করছেন।
৫. চয়নিকা চৌধুরী, নাট্যনির্মাণ
চলচ্চিত্র পরিচালক, নির্দেশক ও ছোটপর্দার জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্ত আছেন নাট্য নির্মাণে। এখন পর্যন্ত ১৫ ‘র বেশি নাটক লিখেছেন তিনি। পরিচালনা করেছেন ৪১৫টি একক ও ১৬টি ধারাবাহিক নাটক। ‘বিশ্ব সুন্দরী’ সিনেমার মাধ্যমে ২০২০ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তাঁর অভিষেক হয় বড় পর্দায়।
৬. স্বপ্না ভৌমিক, কর্পোরেট পেশা
স্বপ্না ভৌমিক ২০০৬ সালে মার্চেন্ডাইজার হিসেবে যুক্ত হন বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের সঙ্গে। ২০১৩ সালে তিনি এমঅ্যান্ডএসের বাংলাদেশের প্রধানের দায়িত্ব অর্জন করেন। তিনি যখন দায়িত্বটি নেন তখন ব্র্যান্ডটি বাংলাদেশ থেকে আমদানি করত ১৩ কোটি ডলারের পোশাক। স্বপ্নার নেতৃত্বে ইতিমধ্যে এমঅ্যান্ডএস বাংলাদেশ থেকে আমদানির পরিমাণ শত কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
৭. সেঁজুতি সাহা, বিজ্ঞান
সেঁজুতি সাহা ১১ বছর কানাডায় থাকার পর দেশের জন্য কিছু করতে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। উন্নয়নশীল বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে অনেক রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত হয় নবজাতক ও শিশুরা। এসব রোগ শনাক্তের সহজ উপায় খুঁজে বের করার ওপর জোর দিয়েছেন সেঁজুতি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে মেনিনজাইটিসের সংক্রমণ হঠাৎ অনেক বেড়ে যায়। সেই সময় সেঁজুতি শিশুদের জিনগত উপাদান বিশ্লেষণ করে এর রহস্য উন্মোচনে সক্ষম হন। বাংলাদেশে প্রথম সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্সিং করেন সেঁজুতি সাহার দল।
৮. তাসনুভা আনান, অধিকারকর্মী
তাসনুভা বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী, যিনি দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে সংবাদপাঠিকা হিসেবে কাজ করেছেন। তাসনুভা আনানের শৈশব আট-দশটা ছেলে-মেয়ের মতো কাটেনি। যখন থেকে তাঁর নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার বয়স শুরু হয়।
এপি/এসআইএইচ