কিছু আমলা মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত পান করছেন: শিল্পপ্রতিমন্ত্রী
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছু আমলা লুটেপুটে খাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিএসইসি (বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন) ভবনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘সরকারি সম্পদ ভাড়া দিয়ে বছরের পর বছর বেতন-বোনাস নিলেও কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন-কে আজও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হয়নি।'
কামাল আহমেদ মজুমদার সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, `স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করছি। একটি কথা বলতে পারবেন- কোন শিল্পকারখানা আপনারা লাভজনক করেছেন? পারবেন না। প্রত্যেকটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।’
তিনি বলেন, ‘একদল মানুষ পীপিলিকার গতিতে চলছে, আরেকদল রকেটের গতিতে বড়লোক হচ্ছে। রকেটের গতিতে যারা বড়লোক হচ্ছে তাদের গতি স্তিমিত করে সমাজের বৈষম্য দূর করতে হবে।’
তিনি ইস্পাত প্রকৌশল কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমার জানামতে অনেক কর্মকর্তা অবসরে গেছেন। তারা এখন কোটি টাকার মালিক।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা অনেক কিছু করছেন। রক্ত দিয়েছি আমরা, রক্ত দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, রক্ত দিয়েছেন ত্রিশ লাখ শহীদ, আর আপনারা আজ এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে লুটেপুটে খাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা ইস্পাত কর্পোরেশনের জমি ভাড়া দিয়ে বেতন বোনাস নিচ্ছেন। তাহলে আমরা কি ধরে নিতে পারি যে, আপনারা এখানে বসে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত পান করছেন? আপনারা দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন। কারণ, আপনারা কোনো পদক্ষেপ নেননি। আপনাদের আলোচনা সভা দেখেই বুঝা যায় আপনারা কি করতে পারবেন।’
কামাল মজুমদার বলেন, ‘ইস্পাত প্রকৌশল কর্পোরেশন একটি বড় সংস্থা। এখানে আলোচনা হবে জাতির পিতাকে নিয়ে, আলোচনা হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে। আপনারা প্রয়োজনে অডিটোরিয়াম ভাড়া নিবেন। সবার উপস্থিতিতে আপনারা আলোচনা করবেন, সাধারণ শ্রমিকদের আলোচনার সুযোগ দিবেন। কিন্তু আপনারা তা না করে গুটিকয়েক অফিসার এখানে সমবেত হয়েছেন। সাত-আটজন বক্তব্য দিয়েছেন। আপনাদের বক্তব্য শুনতে আমরা এখানে আসিনি।’
তিনি সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রীর পাঠ করানো শপথ বাক্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি প্রধানমন্ত্রীর পাঠ করানো শপথ বাক্যের কতটুকু আপনারা বাস্তবায়ন করবেন তা জানতে।’
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গত আড়াই বছরে দেখলাম, সরকারি কিছু আমলা আছেন, চাকরির শেষ বয়সে তাদের শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, কয়েকদিন পর তারা চলে যান। তার ভিতর অনেক ভালো লোকও আছেন। আবার অনেকে প্রমোশন পাওয়ার উপযুক্ত কিন্তু তাদের প্রমোশন দেওয়া হয়নি।’
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘নতুন চেয়ারম্যান সাহেব এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর রুম সাউন্ডপ্রুফ, তার রুমও সাউন্ডপ্রুফ করে ঢেলে সাজাতে হবে। লিফটের পরিবর্তন করতে হবে। কথা না শুনলে লোকজনকে বদলি করতে হবে।’
চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এসব না করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করুন। কোন প্রতিষ্ঠানের কি অবস্থা আমাদের লিখিতভাবে জানান। আপনার কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেন, সাজেশন দেন। কর্মচারীদের নিয়ে বসেন তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন।’
তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত বড় কর্পোরেশনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে আপনারা গুটিকয়েক ব্যক্তি বসে আলোচনা সভা করছেন। আপনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করছেন, আপনারা বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করছেন।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিজে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। আমরা সৌভাগ্যবান যে আমাদের এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের স্বপ্ন ছিল আমরা এই মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজাবো। কিন্তু ঢেলে সাজাবো তো দূরের কথা আপনাদের কথা বললেও আপনারা কথা শুনেন না।’
তিনি কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনারা আর বঙ্গবন্ধুর রক্ত পান করবেন না, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত পান করবেন না।’
কামাল মজুমদার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আয়, ব্যয় ভর্তুকির হিসাব লিখিত জানাতে বলেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূর মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ‘খেলে রাজার ভাণ্ডারও ফুরিয়ে যায়। আপনারা যে গতিতে কাজ করছেন তাতে আমার মনে হয় না ইস্পাত প্রকৌশল কর্পোরেশনের সংস্থাগুলো আগামীতে খুব একটা লাভজনক হবে। আমাদের কিন্তু জাতির কাছে জবাবদিহিতা আছে।’
বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেন শিল্পমন্ত্রী নূর মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শহীদুল হক ভূইয়া।
এএস/এএন