হুন্ডি বন্ধে মালদ্বীপে সরকারি ব্যাংকের শাখা চান বাংলাদেশিরা
মালদ্বীপে বসবাসকারী বাংলাদেশি শ্রমিকদের আয়ের একটা বড় অংশই কেটে রাখে সেই দেশের ব্যাংক। দেশে টাকা পাঠাতে গেলেই ১০০ ডলারে ২৫ ডলার লোকসান দিতে হয়। বছরের পর বছর ধরে এই সংকটের কারণে বেশিরভাগ বাংলাদেশি শ্রমিকদের দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই হুন্ডির আশ্রয় নিতে হয়। আর এই হুন্ডির কারণে বাংলাদেশ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বছরের পর বছর।
মালদ্বীপে বসবাসকারী বাংলাদশিরা বলছেন, মালদ্বীপের সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে যদি বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকের একটা চুক্তি বা সমঝোতা থাকত, তাহলে তাদের দেশে টাকা পাঠাতে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হতো না।
দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে পাঁচ লাখ। এর বাইরে দেশটিতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বাংলাদেশি। যারা গত কয়েক বছর ধরে কর্মসূত্রে মালদ্বীপে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মালদ্বীপের রাজধানী মালে কিংবা পাশের হুলহুমালে শহরে হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসা করছেন। অনেকে চাকরি করছেন।
মালে শহরে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক এম নাছির হোসেন গত কয়েক বছর ধরে হোটেল ব্যবসায় জড়িত। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘মালদ্বীপ থেকে দেশে টাকা পাঠাতে গেলে সেই টাকার একটা বড় অংশই কেটে রাখে স্থানীয় ব্যাংক। এই সমস্যার কারণে দেশে টাকা পাঠাতে হুন্ডির আশ্রয় নিতে হয়।’
একই কথা জানালেন, আল আমিন হোসেন নামে আরেক বাংলাদেশি। দিন-রাত পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করা অর্থ ব্যাংক সমস্যার কারণে মালদ্বীপের ব্যাংক কেটে নিচ্ছে। তাই বাংলাদেশি ব্যাংকের শাখা সেখানে খোলার দাবি জানান তারা।
প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মালদ্বীপে বসবাসকারী সজীব হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকা বৈধভাবে দেশে পাঠাতে; কিন্তু মালদ্বীপের স্থানীয় সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকের কোনো সমঝোতা না থাকায় দেশে টাকা পাঠাতে গেলেই স্থানীয় ব্যাংক মোটা অংকের চার্জ কেটে রাখে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশেই বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকের শাখা আছে। ফলে সেসব দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা সহজেই দেশে টাকা পাঠাতে পারেন। এতে করে দেশে টাকা পাঠানো যেমন সহজ হয়, তেমনি সরকারও রাজস্ব পায়; কিন্তু মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে বাংলাদেশের কোনো সরকারি ব্যাংকের শাখা নেই। এমনকি স্থানীয় সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশি ব্যাংকের কোনো সমঝোতাও নেই। ফলে দেশে টাকা পাঠাতে গেলে বাংলাদেশিদের ১০০ ডলারে ২৫ ডলার স্থানীয় ব্যাংককেই দিতে হয়।’
মালেতে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা বলছেন, দেশে টাকা পাঠানোর রাস্তা সহজ করতে দুই দেশের সরকারি ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ সফরকালে এই বিষয়টি যদি গুরুত্বসহকারে দেখা হয়, তাহলে মালদ্বীপে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানো বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে আমাদের দেশের সরকারও লাভবান হবে। কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকার একটা বড় অংশ মালদ্বীপের ব্যাংকের দিতে হবে না।
বাংলাদেশি কোনো সরকারি ব্যাংকের শাখা মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে স্থাপন করা গেলে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে ব্যাংকিং পদ্ধতিতে দেশে টাকা পাঠালে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। বাংলাদেশ সরকার যেন বিষয়টি বিবেচনায় নেয় সেই প্রত্যাশা করছেন মালদ্বীপে বসবাসকারী ৬০-৭০ হাজার বাংলাদেশি।
এনএইচবি/এসএ/