পাতাল রেল নিয়ে ‘ধীরে চলো নীতি’কে স্বাগত জানাল আইপিডি
প্রতীকী ছবি
ঢাকার পাতাল রেল প্রকল্প নিয়ে ‘ধীরে চলো নীতি’কে স্বাগত জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) আইপিডির এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকা পাতাল রেল (সাবওয়ে) প্রকল্প উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষসহ (বিবিএ) সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করেছে, যাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে আইপিডি। বিবিএর সাম্প্রতিক বোর্ড সভায় ঢাকা নগরে পরিবহন সংক্রান্ত মেট্রোরেলসহ চলমান বিভিন্ন প্রকল্প ও আশু উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের পর পরবর্তীতে অধিকতর পরিকল্পনাগত প্রভাব ও উপযোগিতা বিশ্লেষণপূর্বক ঢাকায় পাতাল রেল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানা গেছে।
ইতোপূর্বে আইপিডির পক্ষ থেকে ঢাকায় পাতাল রেল প্রকল্প সংক্রান্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে বলা হয়েছিল পাতাল রেল প্রকল্প ঢাকা নগরীর আর্থ-সামাজিক-পরিকল্পনাগত বিবেচনায় ব্যয়বহুল, উচ্চাভিলাষী ও অপরিণামদর্শী।
আইপিডি গুরুত্ব দিয়ে বলেছিল, পাতাল রেল প্রকল্পের মত ব্যয়নির্ভর, ঝুঁকিপূর্ণ ও উচ্চাভিলাষী প্রস্তাবনা নিয়ে পরিকল্পনা করার জন্য ঢাকা নগরী এখন প্রস্তুত নয়। বরং ঢাকার যানজট সমস্যা নিরসনসহ টেকসই পরিবহন পরিকল্পনা গড়ে তোলার জন্য কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি), সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি), ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এ প্রদেয় প্রস্তাবনাগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ বেগবান করা দরকার।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা অবগত আছি যে, ঢাকায় পাতাল রেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে ৩২১ কোটি টাকার সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা প্রায় শেষের পথে। ইতোপূর্বে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন করতে ১১০ কোটি টাকার সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষে প্রকল্পটিকে বাস্তববায়নের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। অনুরূপ পরিণতি হয়েছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে উড়াল এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক পথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ৯৮ কোটি টাকার, যেই প্রকল্প পরবর্তীতে বাতিল হয়ে যায়।
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর প্রকল্প লাভজনক বলে বিবেচিত না হলে প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়টি সরকার ও রাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক। এতে ব্যয়বহুল ও উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থ ও সম্পদের অপচয় থেকে রাষ্ট্র রক্ষা পায়।
অন্যদিকে, এই ধরনের ব্যয়বহুল ও আমাদের আর্থ-সামাজিক-পরিকল্পনাগত বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যবিহীন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গিয়ে রাষ্ট্রের ও জনগণের মূল্যবান অর্থের যে অপচয় হচ্ছে সে ব্যাপারে রাষ্ট্র ও সরকারের গভীর দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে আইপিডি মনে করে। এই ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নামে কারো অনৈতিক উদ্দেশ্য ও অর্থযোগ হচ্ছে কিনা, তার ও নির্মোহ বিশ্লেষণ রাষ্ট্রের করা প্রয়োজন।
একইসঙ্গে এই ধরনের উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন পরিকল্পনার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পূর্বে দেশের পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আন্তরিক আলোচনা ও প্রাক-সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ (প্রি ফিজিবিলিটি স্টাডি) করলে এই ধরনের অর্থের অপচয় এড়ানো যাবে বলে আইপিডি মনে করে।
সরকারের তরফ থেকে সম্প্রতি উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি ও বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণের আগে সামগ্রিক উপযোগিতা গভীরভাবে যাচাই করে প্রকল্প গ্রহণের জন্য দেওয়া নির্দেশনা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরগুলো মেনে চলবে বলে আশা করছে আইপিডি। একই সঙ্গে এই ধরনের বৃহৎ পরিকল্পনা উদ্যোগ ও বড় প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে সরকার বৃহত্তর জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে আগামীতেও সুচিন্তিত ও সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নেবে বলে প্রত্যাশা করে আইপিডি।
আরইউ/আরএ/