৩৮ মা পেলেন রত্নগর্ভা অ্যাওয়ার্ড
পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট এর অতিরিক্ত ডিআইজি সালমা ইসলাম নিজের মায়ের গল্প বলতে গিয়ে বার বার বলছিলেন, সকল মায়ের চরিত্র একই। সকল মায়ের গল্প একই। সবাই জীবনের পুরোটা সময় ত্যাগ-তিতীক্ষার মধ্য দিয়ে পার করেছেন। সন্তানকে ভালো রাখতে, মানুষ করতে নিজের জীবনের সবটুকু বিলিয়ে দিয়েছেন।
আজ সেই মাকে রত্নগর্ভা মা হিসেবে অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে আজাদ প্রোডাক্ট। যেসকল মা এই অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হচ্ছে হচ্ছেন তারা প্রত্যেকেই একেকজন সফল মা। নিজের জীবনের সব কিছু দিয়ে তারা সফলতা অর্জন করেছেন। এই মায়েদের ঋণ কোনোদিন পরিশোধ হবে না।
শুধু সালমা ইসলাম নয়, তার আরও অনেকেই নিজেদের মায়ের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে চোখ ভিজিয়েছেন নিজের অজান্তেই। সামনে থাকা অসংখ্য মায়ের চোখও ছলছল করছিল তাদের কথায়।
রবিবার (৮ মে) আজাদ প্রোডাক্ট (প্রা.) লিমিটেডের উদ্যোগ আয়োজিত রত্মগর্ভা মা ২০২১ এর অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে মোয়েদের গল্প নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অনেকে। ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ক্লাবের সভাপতি খন্দকার মশিউজ্জামান রুমেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর বিক্রম)। অতিথি ছিলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি এন্টি টেররিজম ইউনিটের সালমা বেগম, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সবুর খান, সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন আজাদ প্রোডাক্টস এর কর্ণদ্বার আবুল কালাম আজাদ। বক্তব্য রাখেন তানজিনা আজাদ ও জিয়াউর রহমান আজাদ ডায়মন্ড।
স্বাগত বক্তব্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর আমরা এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান করতে পারিনি। এবার মায়েদের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দিতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছে। আমি আনন্দিত।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, আজাদের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এরমধ্য দিয়ে মায়েদের সম্মান দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আজাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আজাদকে পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তার মা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির তিন দিন পর সন্তানের দেখা পান। সেই অনুভূতি বলে বুঝানো যাবে না। সন্তানের প্রতি মাযের যে ভালোবাসা সেটা কেমন, সেদিন আজাদকে কাছে পাওয়ার পর তার মা-ই বুঝেছেন।’
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, মায়েদের পাশাপাশি বাবাদেরকেও অ্যাওয়ার্ড প্রদান করারে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার বলেন, সমাজ পাল্টাচ্ছে, সব কিছু পাল্টাচ্ছে। কিন্তু পাল্টাচ্ছে না একজন। সেই একজন হচ্ছেন মা।
তিনি বলেন, ‘আজাদ সাহেব যেটা করছেন সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকারি উদ্যোগেও এমন আয়োজন করা যেতে পারে। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব এমন উদ্যোগ যেন নেওয়া হয়।’
বক্তব্য পর্ব শেষে মাকে নিয়ে গাওয়া শামীম আরা মুন্নির একটি গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত মায়েদের প্রতি সম্মান জানানো হয়। এরপর শিল্পী মমতাজ দুটি গান পরিবেশন করেন।
এরপর মায়েদের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। এবারের অনুষ্ঠানে আজাদ প্রোডাক্টস রত্নগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ড ২০২১ প্রদান করা হয়।
এতে সাধারণ ক্যাটাগরিতে ২৫ জন এবং বিশেষ ক্যাটাগরিতে ১৩ জন মা’কে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া মাই ড্যাড ওয়ান্ডারফুল অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় শিল্পী মুস্তফা মনোয়ারকে।
অ্যাডয়ার্ডপ্রাপ্ত মায়েরা হলেন-সাধারণ ক্যাটাগরিতে মিসেস আমেনা বেগম, মিসেস লতিফা বেগম, মিসেস পুনুয়ারা বেগম, মিসেস মর্জিনা সাখাওয়াত, মিসেস সামসুন নাহার, মিসেস আয়েমা খাতুন, রোকশনা আহম্মেদ, নাফিসা বেগম, ফারমিদা সাত্তার, সেলিমা খাতুন, রেহানা শফিক, অ্যাডভোকেট হাজেরা পারভীন, সুরাইয়া খানম, মাফিয়া আক্তার, খোশনূর, পারুল বেগম, নাজমা আনিস, ফরিদা ইয়াসমিন, রওশনয়ারা বেগম, সিদ্দিকা বেগম, শাতিল আবেদা, ফয়েজুন্নেছা বেগম, মমতাজ খানম ও মমতাজ বেগম।
বিশেষ ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত মায়েরা হচ্ছেন মিসেস হমিদা বেগম, মাহমুদা বেগম, জাহানারা বেগম, সফুরা খাতুন, মাহমুদা খাতুন, মাইমুনা আক্তার খাতুন, মাজেদা বেগম, আশা বড়ুয়া, খালেদা খানম, মাফিয়া বেগম, জাহানারা হোসেন, নাজিমা বেগম ও জান্নাতুল ফেরদৌসী।
এনএইচবি/এমএমএ/