খাদ্য সংকটের শঙ্কা, প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ
সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থা। তাদের সেই কথায় বাংলাদেশও সংকটের আশঙ্কা থেকে আগামীর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) দুপুরে সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাই কমিশনার লিলি নিকলস। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ শঙ্কার কথা প্রকাশ করেন কৃষিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি ও সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রে একটা বিরাট সংকটের আশঙ্কা করছে সবাই। ইতোমধ্যে বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, কৃষি ও খাদ্য সংস্থা তারাও বলছে ভয়াবহ খাদ্য সংকট হতে পারে।’
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে খাদ্য নিয়ে নানা রকম জটিলতার কথা শুনছি। যেহেতু কানাডা আমাদের কৃষি ক্ষেত্রেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার এবং তারা আমাদের এখানে খাদ্য শস্য সরবরাহ করে থাকে, এ পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা হয়েছে কানাডার হাই কমিশনারের সঙ্গে।
এ ব্যাপারে কানাডার হাই কমিশনার আস্বস্ত করেছেন উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, যদি দেশে খাদ্যের কোনো সংকট হয় সেই সংকটের ক্ষেত্রে কানাডা যাতে আমাদের বিশেষ বিবেচনায় খাদ্য শস্য সরবরাহ করে সে ব্যাপারে আলোচনা করেছি। তারাও বলেছেন অবশ্যই বাংলাদেশ বিশেষ বিবেচনায় খাদ্য শস্য আমদানি করতে পারবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ-কানাডার সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা তৈরি হয়েছে। আমরা অনেক কৃষিপণ্য আমদানি করি সেখান থেকে। বিশেষ করে মসুর ডাল, গম কানাডা থেকে আমদানি করি। এ ছাড়া কানাডা থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উপকরণ আমদানি করা হয়।
দেশের কৃষি ক্ষেত্রে প্রধানত তিন ধরনের সার ব্যবহৃত হয় উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পটাশিয়াম, ইউরিয়য়া (নাইট্রোজেন) ও ফসফরাস। পটাশিয়ামটা পৃথিবীর তিনটা দেশ থেকে বিশ্ববাজারে সরবরাহ করা হয়। সেই দেশগুলো হচ্ছে বেলারুশ, রাশিয়া ও কানাডা। কানাডা থেকে জি টু জি পদ্ধতিতে আমদানি করা হয়। প্রতি বছর তারা ভালো পরিমাণ সরবরাহ করে।
কৃষির অন্যতম উপকরণ পটাশিয়াম সারের বড় সংকট হতে যাচ্ছে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বেলারুশে নিষেধাজ্ঞা আছে যে কারণে বেলারুশ থেকে পটাশিয়াম আনতে পারছি না। রাশিয়া থেকে আনতাম ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সেটাও বন্ধ হয়েছে। এ মুহূর্তে কানাডার উপর সবাই নির্ভর করছে। তারপর চায়নাসহ বিভিন্ন দেশ ‘পেনিক কেনাকাটা’ দুর্যোগকালীন কেনাকাট শুরু করেছে। চায়না বেলারুল, রাশিয়া থেকে নিতে পারবে তাদের সিস্টেমের মাধ্যমে, তাদের হয়তো সমস্যা হবে না। কিন্তু আমাদের বেলায় বিরাট সমস্যা। তাই আমরা কানাডাকে অনুরোধ করছি যতটা সম্ভব প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম যেন দেওয়া হয়।’
মন্ত্রী বলেন, আলু উৎপাদনের জন্য অক্টোবর-নভেম্বরে পটাশিয়াম সারটা খুব দরকার হবে। আমরা টেন্ডার দিয়ে পটাশিয়াম কেনার চেষ্টা করছি। সেখানে কিছুটা অনিশ্চয়তাও দেখছি। কারণ যারা টেন্ডার দিয়েছে তারা সরবরাহ করতে পারবে কি-না? কীভাবে করবে? কানাডা ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে সরাসরি আনা সম্ভব না। অন্য কোনো দেশের মাধ্যমে যদি আমাদের সরবরাহ করে তাহলে হয়তো পাব। কিন্তু সেটা করতে গেলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য প্রস্তুতিমূলক আলোচনা করেছি কানাডিয় হাই কমিশনারের সঙ্গে।
খাদ্য সংকট নিয়ে কথা বললে আতঙ্ক ছড়াবে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, খাদ্য সংকটের কথা আমি বলছি না, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে। তবে আমাদের সংকট হওয়ার মতো অবস্থা নেই। মাঠে ভালো ফসল আছে। হাওর এলাকার ধান পুরোটা ঘরে তুলতে পারিনি। সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে হাওরের ৯০ ভাগের বেশি ধান কাটা হয়ে গেছে। ছোট খাটো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব সময় হয়। আমার মনে হয় সংকট হওয়ার মতো অবস্থা বাংলাদেশে নেই। প্রকৃতি যদি চরমভাবে বিরুপ না হয়, এ ধরনের সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না। সেদিক দিয়ে আমরা খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছি। ধানে এখন মাঠে যা আছে, প্রকৃতিক দুর্যোগ হওয়ার কথা না। ধান যদি ঘরে তুলতে পারি আগামী বোরো মৌসুম পর্যন্ত সমস্যা হওয়ার কথা না।
এসএম/এসএন