বিএনপি নেতা জীবনই কি তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী লেদু?
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার মনোয়ার হাসান জীবন ওরফে লেদু, ডানের ছবিতে মাঝের ব্যক্তি (পতাকা হাতে)
মনোয়ার হাসান জীবন ওরফে লেদু হাসানকে বিএনপি নিজ দলের কর্মী বলে দাবি করেছে। কিন্তু এই ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলছে সে একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজীসহ অন্তত ২৮টি মামলা রয়েছে।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘ডিবি পুলিশ পরিচয়ে শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) সাদা পোশাকধারীরা ঢাকা মহানগর উত্তর আদাবর থানাধীন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হাসান জীবনকে তুলে নিয়ে গিয়ে এখনও পর্যন্ত তার কোন হদিস না দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সাদা পোশাকধারী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক মনোয়ার হাসান জীবনকে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং তার কোন খোঁজ না দেওয়ার ঘটনায় বর্তমান নিশি-রাতের সরকারের চলমান গুমের আরেকটি নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। মানুষকে নিখোঁজ করে দেওয়ার মতো নির্দয় ঘটনাকে বর্তমান অবৈধ সরকার তাদের টিকে থাকার গ্যারান্টি হিসেবে বিবেচনা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ’মনোয়ার হাসান জীবনকে ডিবি পুলিশই আটক করে নিয়ে গিয়ে এখনও কোন হদিস দিচ্ছে না। তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার পরিবারসহ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমি অবিলম্বে মনোয়ার হাসান জীবনকে জনসমক্ষে হাজির করার জোর দাবি জানাচ্ছি। ’
মনোয়ার হাসান জীবন ওরফে লেদু হাসানকে শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর র্যাব বলছে ভিন্ন কথা। তাদের মতে, লেদু হাসান ২০১৭ সালে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের ধরে এস আর পলাশকে হত্যা করেন। আদাবর থানায় তার বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা চলমান রয়েছে। একটি অস্ত্র মামলায় তার ১০ বছরের সাজা হয়েছে। তিনি মোহাম্মদপুর বেড়িবাধ এলাকায় একটি গাড়িতে আগুন দিয়ে দুজন মহিলাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন–যে মামলাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। সবমিলে তার নামে অন্তত ২৮টি মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: তালিকাভুক্ত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ লেদু হাসান গ্রেপ্তার
র্যাব জানায়, লেদু হাসান লক্ষীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৃত হারিছ চৌধুরী একজন কৃষক ছিলেন। লেদু হাসান ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯০ সালে তিনি লক্ষীপুর জেলা থেকে তার বাবার সঙ্গে ঢাকায় আসেন। তিনি ২০১০ সালে বহুল আলোচিত ওহিউদুজ্জামান হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় আসামি হিসেবে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লেদু হাসান আরও বেপরোয়া হয়ে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, লেদু অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। সাধারণ মানুষের সম্পত্তি দখল, জমি দখল, চাঁদাবাজি, চাঁদার জন্য হুমকি দেওয়া, মাদক ব্যবসা, জুয়ার কারবার প্রভৃতি অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত। এলাকায় নতুন কোনো ভবনের কাজ শুরু হলে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিতে হতো। অন্যথায় তিনি তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে কাজ বন্ধ করে দিতেন। জীবন মূলত অস্ত্রধারী হওয়ায় এবং প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ জনগণ তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে সাহস করতেন না এবং কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করলে অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখাত ও মারপিট করে গুরুতর জখম হতে হতো।
এনএইচ/এমএমএ/