জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ব: প্রধানমন্ত্রী
দেশবাসীকে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দেশের মানুষের শান্তি চাই, নিরাপত্তা চাই। উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে চাই। এই উৎসব আমাদের আগামী দিনের চলার প্রতিজ্ঞা। আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব।
বৃহস্পতবিার (১৬ ডসিম্বের) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিজয়ের সুর্বণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে দু’দিনের অনুষ্ঠানমালা সাজিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে সফররত সম্মানিত অতিথি ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলক হক, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তিনি তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের জনগণের জন্য। বাংলাদেশের মানুষ যারা একেবারে গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ে পরে আছে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। সেই সাথে তিনি একটি বিষয়ে সব সময় লক্ষ্য রেখেছেন যে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। আর সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তান নামে রাষ্ট্রটি আমাদের মাতৃ ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তিনি তখন বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দেবার সংগ্রাম শুরু করেন। সেই ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম, এই পথ দিয়েই তিনি একে একে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধিকার আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন করে আমাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যান। আমাদের একটি জাতি রাষ্ট্র উপহার দেন।
তিনি বলেন, একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ। ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের উপর গণহত্যা শুরু করে জাতির পিতা তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা গ্রেফতার করে এবং পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ফাঁসির হুকুমও দিয়ে দেয় তারা। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপে বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধী তখন আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রচার করে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রচণ্ড চাপের মুখে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
এই ১৬ ডিসেম্বর আমার মা এবং ছোট বোন রেহানা, ছোট ভাই রাসেল, আমরাও কিন্তু বন্দিখানায় ছিলাম। আমার ছেলে জয়। জয় এর জন্ম এই বন্দিদশায়। আমরা কিন্তু মুক্তি পাইনি ১৬ ডিসেম্বর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন আত্মসমর্পন করেছিল আমরা তখনও বন্দিদশায়। ১৭ ডিসেম্বর সকালে ভারতের মেজর অশক তারা আমাদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিকট থেকে মুক্ত করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘১০ জানুয়ারি জাতির পিতা দেশে ফিরে আসেন। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার তৃণমূল পর্যায়ে নেওয়ার জন্য তৃণমূল মানুষের ভোটের অধিকার এবং তাদের জীবন উন্নত করার জন্য তিনি যখন পদক্ষেপ নিলেন। অর্থনৈতিক কর্মসূচি এবং দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন, ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রিকরণ করে গ্রামের মানুষকে ক্ষমতাসীন করার পদক্ষেপ নিলেন, তখনই ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করল। জাতির পিতার হত্যার পর দেশে ১৯টা ক্যু হয়, অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আমরা ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে ছিলাম। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসি তারপর থেকে চেস্টা করেছি জাতির পিতার আদর্শে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের পর ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছি। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করা এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ৫০ বছর আমাদের স্বাধীনতা আমরা কতটুক এগুতে পেরেছি সেটাই হচ্ছে বড় কথা। দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আজকে প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছি। বাংলাদেশের গৃহহারা মানুষকে বিনা পয়সায় ঘর দিচ্ছি। এ লক্ষ্য আমরা পূরণ করতে পারব ইনশাআল্লাহ। যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল, জাতির পিতা চেয়েছিলেন দুঃখী মানুষের মধ্যে হাসি ফোটাতে আমাদের সেটাই লক্ষ্য। আজকের বাংলাদেশ আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৪৪ মার্কিন ডলারে উন্নত হয়েছে। যদিও কোভিডের কারণে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, তারপরেও আমরা করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি। গ্রামীন অর্থনীতিকে উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এদেশে সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে বা পালন করছে সেটা আমরা নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হবে। আজকে সেটা আমরা অর্জন করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস মাদক নির্মূল করার জন্য জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছি।
এসএম/এএস