বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শপথ
বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান বিজয় দিবস। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতিকে দিয়েছে আত্মমর্যাদা। বাঙালি জাতি আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে শিখেছে।
১৯৭১ সালে এই দিনের জন্য বাঙালি জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিল। বহু কাঙ্ক্ষিত সেই ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীন জাতিসত্তা নিয়ে এগিয়ে চলতে শেখে বাঙালি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না।’ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বঙ্গবন্ধুর সেই অমর বাণী যেন সত্যে পরিণত হয়েছে। বাঙালি আজ সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে চলা জাতি। সেই বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে চলার দৃপ্ত শপথ পাঠ করাবেন জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সারাদেশের মানুষকে শপথ পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার সাক্ষী হয়ে থাকলো পুরো বিশ্ব। শপথ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, সিটি কর্পোরেশন, থানা ওয়ার্ড সর্বস্তর থেকে মানুষ একযোগে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শপথ পাঠ করেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। এছাড়া সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অসম্প্রদায়িক চেতনার সকল শ্রেণি-পেশার জনগণকে অংশ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধাভরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। তারপর দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তিনি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ সদস্যদের স্মরণ করেন। ১৯৭৫ এর ৩ নভেম্বর কারাগারে শহীদ চার নেতাকে স্মরণ করেন।
এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংক্ষেপে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের নির্দেশ ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এরপর ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার সময় যে শেষ বার্তা পাঠিয়েছিলেন তা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী ”ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা,আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন।আমি বাংলাদেশের জনগনকে আহবান জানাইতেছি যে,যে যেখানে আছো,যাহার যা কিছু আছে,তাই নিয়ে রুখে দাড়াও,সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো।পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।”
এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ এবং ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি দেশবাসীকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শপথ নিতে বলেন। সারা দেশের মানুষ এ শপথে অংশ নেয়।
দেশবাসীকে যে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী: ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব বর্ষে দৃপ্তকণ্ঠে শপথ করছি যে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।”
প্রধানমন্ত্রীর শপথ বাক্য পাঠ করার সময় তার পাশে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
এসএম/এএন