প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ শুরু, রাষ্ট্রীয় অতিথি পাঁচ দেশ
জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে শুরু হয়েছে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণিল কুচকাওয়াজ। এবারের এই বিজয়োৎসবে থাকছে বিমান বাহিনীর বিশেষ ফ্লাই-পাস্ট ও অ্যারোবেটিক এয়ার শো। থাকবে উড়ন্ত হেলিকপ্টার থেকে রজ্জু বেয়ে অবতরণ, প্যারাসুট জাম্পও। চলন্ত যান্ত্রিক সামরিক কন্টিনজেন্টের সালাম গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন রাষ্ট্রপতি।রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছেন পাঁচটি দেশ। দেশগুলো হলো- ভুটান, ভারত, রাশিয়া, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র।
আজ বৃহষ্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সকাল সাড়ে ১০টায় এ কুচকাওয়াজ শুরু হয়। এতে অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিএনসিসি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি এবং কারারক্ষীরা।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। বর্ণিল এই আয়োজনে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে যোগ দিতে ঢাকা সফরে আসা ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও কুচকাওয়াজে গেস্ট অব অনার হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
বাংলাদেশের এবারের বিজয় দিবসের প্যারেডে ১২২ জন ভারতীয় সৈনিক অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে আশা জ্যোতির্ময় নামের একজন প্যারাট্রুপার রয়েছেন, যিনি বিমান থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে লাফ দেবেন। ভারতীয় এই নারী উইং কমান্ডার চেন্নাইয়ের ২৩ ইডি, আভাদি বিমান বাহিনী স্টেশনে কর্মরত আছেন।
এর আগে মহান বিজয় দিবসসের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তখন রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন।
তাদের পর শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কুচকাওয়াজ শেষে মহান বিজয় দিবস ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ দিবস উপলক্ষে গণভবনে ডাক টিকিট অবমুক্ত করবেন সরকার প্রধান। একই সঙ্গে দুপুরে বাংলাদেশ পর্যটন ব্র্যান্ড নেম ‘মুজিব’স বাংলাদেশ’ লোগো উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ পরিচালনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল সাড়ে ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান।
উল্লেখ, গত বছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও বিজয়ের ৪৯তম ১৬ ডিসেম্বরে বৈশ্বিক মহামারি করোনা থাকায় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারেননি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
এনএইচ/এসআইএইচ/