বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় জিয়ার নাম না থাকার কারণ জানালেন প্রধানমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত বলে আবারও জানালেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘রশিদের সাক্ষাৎকারে আছে জিয়াউর রহমান এই খুনের সঙ্গে ছিলেন। ইনডেমনিটি যখন প্রত্যাহার করলাম তারপর যখন মামলা করতে গেলাম আমি বললাম জিয়াউর রহমানের নামও থাক, কারণ তিনিই আসল খুনি। আমাকে এটাই বলা হয়েছিল যেহেতু তিনি এখন মৃত, তাকে আসামী করে লাভ নাই। তখনকার স্বরাষ্ট্র সচিব আমাকে এটাই বলেছিলেন ‘আসামী করা যাবে না। তিনি বললেন নামটা দেওয়া ঠিক হবে না, যেহেতু তিনি মৃত। সে কারণে জিয়ার নামটা বাদ দেওয়া হয়।’
বুধবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভাকে ধন্যবাদ জানাতে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয়। সেই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে সংসদ নেতা একথা বলেন।
প্রায় ৩ ঘণ্টা ব্যাপী আলোচনা শেষে দেশের জনগণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভাকে ধন্যবাদ দেয় সংসদ।
জয় বাংলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, সিরাজুল আলম খান যে শ্লোগান দিয়েছেন সেটাও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্টেজে বসে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্লোগান ধর, তারপর সিরাজুল আলম খানের স্লোগান ধরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে। এরপর সেই স্লোগান হয়ে যায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, তাদের মুখে ছিল জয় বাংলা স্লোগান। জয় বাংলা শ্লোগান আলাদা উদ্দীপনা সৃষ্টি করত।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে বন্ধি ছিলাম, আমরা কিন্তু সব সময় জয় বাংলা স্লোগান দিতাম। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেন আমরা তখনও বন্দি। আমরা কিন্তু তখনও মুক্তি পাইনি, মুক্তি পেয়েছিলাম ১৭ ডিসেম্বর, কিন্তু ওই বন্দীখানায় আমরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছি। এরপর ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর জয় বাংলা স্লোগান সম্পূর্ণ বন্ধ নিষিদ্ধ। এই স্লোগান দিতে গিয়ে আমাদের ছাত্রলীগের কত নেতাকর্মীর জীবন দিয়েছেন। এই শ্লোগান দিলেই নানান ধরনের কথা বলতো, অনেক অপপ্রচার করত। ঠিক পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যারা সেই সময় বাংলাদেশে গণহত্যা চালাচ্ছে।
বাংলাদেশের মেয়েদের তুলে নিয়ে ক্যাম্পে নির্যাতন করছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে ছাড়খার করছে, ঠিক তারা যে কথাগুলো বলত, তারা যে সমস্ত ব্যঙ্গ করত ‘৭৫ এর পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ঠিক সেই কাজই করেছে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের অনুসারীরা এখনও আজকেও এই সংসদে বিএনপি এক নেতা হারুনুর রশীদ বক্তব্য দিলেন তার বক্তব্যে বোঝা গেল তাদের মানসিকতা। তার বক্তব্য প্রমাণিত, এরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করে না এদের অন্তরে এখনো পেয়ারে পাকিস্তান রয়ে গেছে। পাকিস্তানের গোলামীটাই তারা পছন্দ করে, ওটাই তাদের প্রিয়। হারুন সাহেবের বক্তব্যে বোঝা গেল তাদের হৃদয়ে যে পেয়ারে পাকিস্তান সেটিই প্রমাণিত হয়েছে।
জিয়াউর রহমানকে খুনি বলায় হারুন ক্ষোভ প্রকাশ করলে তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিকে কেন খুনি বলবে না। ১৯৮৭ সালে খালেদা জিয়া এবং কর্ণেল ফারুক ফোনে কথা বলছে সেটার ছবি আছে। রশিদের সাক্ষাৎকারেও আছে জিয়াউর রহমান এই খুনের সঙ্গে ছিল। যখন মামলা হয়। আমি যখন মামলা করতে গেলাম আমি বললাম জিয়াউর রহমানের নামও থাক, কারণ সেই আসল খুনি। কিন্তু মৃত ব্যক্তি বলে তখন নাম দিতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু সমস্ত প্রসিডিংস যখন শুরু হয়, স্বাক্ষী নেওয়া হয় তখন কিন্ত এটা স্পষ্ট যে জিয়াউর রহমান এই হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই যদি না হবে খন্দকার মোস্তাক তাকে একেবারে সঙ্গেই সেনা প্রধান করবেন কেন? এগুলোতে রেকর্ডেড। এটা যতই অস্বীকার করুক। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই।
সংসদ নেতা বলেন, স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করেছিল। আমাদের জয় বাংলা স্লোগান ধ্বংস করেছিল। জাতির পিতার নাম নিষিদ্ধ করেছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। আজকে তা আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। আজকে বাংরাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণকে এটাই বলব যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তখনই বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। কারণ আমরা দেশের সাধারণ মানুষের উন্নতি চাই। স্বাধীনতা বিরোধী ক্ষমতায় থাকলে এ দেশতো উন্নতি করবে না। জয় বাংলা স্লোগান জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে মর্যাদা পেয়েছে। এজন্য জাতিকে ধন্যবাদ, জনগণকে ধন্যবাদ। এই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে ফেলতে পারবে না।
এসএম/এমএমএ/