যা আছে বৈষম্য বিরোধী বিলে
সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য নিরোধে মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২’ উত্থাপন করেছেন।
বিলটি পরীক্ষা করে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বৈষম্য নিরোধে একটি মনিটরিং কমিটি থাকবে। যার সভাপতি হবেন আইনমন্ত্রী। এ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এর সদস্য হবেন।
বিলে বলা হয়েছে, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের অধীনে একটি বৈষম্য বিরোধী সেল থাকবে বলে প্রস্তাবিত আইনে বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, বৈষম্য বিরোধী জাতীয় ও স্থানীয় কমিটি গঠনেরও বিধান রাখা হয়েছে।
বৈষম্যমূলক কাজ কী
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র জাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ভাষা, বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক, মানসিক বা তৃতীয় লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্ম, পেশা এবং অস্পৃশ্যতার অজুহাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিচের কাজগুলো করলে তা বৈষম্যমূলক কাজ বলে গণ্য হবে-
- কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সর্বসাধারণের স্থলে প্রবেশ বা উপস্থিতিতে বাধা প্রদান, নিয়ন্ত্রণ অথবা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা;
সরকারি আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি অফিসের সেবা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত করা; - কোনো পণ্য বা সেবা আইনানুগভাবে উৎপাদন, বিক্রয় অথবা বিপণন করতে বাধা দেওয়া বা আইনে নির্ধারিত কোনো সুবিধা বা পণ্য বা সেবা গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা;
- উপযুক্ত কারণ ব্যতীত পিতা-মাতার পরিচয় প্রদানে অসমর্থতার কারণে কোনো শিশুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি বা অমত বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা বাধা দেওয়া বা সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান বা অবস্থানের ক্ষেত্রে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধি-নিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার বা অন্য যেকোনো ধরনের বৈষম্য করা;
- প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ার কারণে কোনো শিশুকে পরিবারে প্রতিপালন না করে বিশেষ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা বা প্রতিবন্ধিতার অজুহাতে পরিবারে বসবাসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা;
- কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো বৈধ পেশা বা চাকরি গ্রহণ বা বৈধ ব্যবসা পরিচালনা থেকে নিষিদ্ধ করা;
- কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানের আয়োজন ও তাতে প্রবেশ ও অংশ নেওয়ার বা নিজস্ব ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রবেশ ও অংশগ্রহণ বা নিজ ধর্ম অনুযায়ী দাফন বা শেষকৃত্য বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা সৎকার সম্পাদন ও যোগদানে বাধা প্রদান করা;
- সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ, ছুটি, পদোন্নতি, বদলি, বেতন-ভাতা-মজুরি বা সুযোগ-সুবিধাদি প্রাপ্তিতে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধি-নিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ বা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা বা চাকরিচ্যুত করা;
- কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বাড়ি ভাড়া না দেওয়া বা বসবাসের স্থান প্রদানে অস্বীকৃতি বা অমত প্রদান করা বা আবেদন অনুমোদন না করা বা কঠিন শর্ত আরোপ করা;
- কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে তার বা তাদের বাসস্থানের অভ্যন্তরে প্রবেশে বাধা দেওয়া, বাসস্থান বা এলাকা থেকে উচ্ছেদ বা এলাকা বা বাসস্থান ত্যাগে বাধ্য করা;
- গ্রাম্য সালিস বা সামাজিকভাবে বা ধর্মীয়ভাবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে এক ঘরে করা, সামাজিকভাবে বয়কট করা বা হয়রানি করা;
- তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বৈষম্যমূলক আচরণ করা;
- কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বা রীতি-নীতি পালন করা থেকে বিরত রাখা বা তাদের অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ ও পালন বা ত্যাগ করতে বাধ্য করা;
- কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আইনানুগভাবে সম্পত্তি অর্জনে ও হস্তান্তরে বাধা প্রদান করা এবং সম্পত্তিতে অধিকার বা উত্তরাধিকার বঞ্চিত করা;
- স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা।
বিলটি সংসদে তোলার আপত্তি জানিয়ে বিএনপির হারুনুর রশীদ ‘পাবলিক প্লেসের’ সংজ্ঞায় ধর্মীয় উপাসনালয় রাখার বিরোধিতা করে বলেন, ‘ধর্মীয় উপাসনালয় পাবলিক প্লেস নয়। মসজিদে ভিন্ন ধর্মের কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। বিলে বলা হয়েছে ধর্মীয় স্থানে প্রবেশ করতে না দিলে বৈষম্য হবে–এর ব্যাখ্যা চাই।’
প্রস্তাবিত আইনের ৩(ঘ) ধারার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুর পরিচয় থাকতে হবে। পিতৃ পরিচয়ে সমস্যা থাকলে মাতৃ পরিচয় থাকতে হবে। নানী-নানা তো থাকবে। এই বিধান থাকলে ব্যাভিচারকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে।’
বিলের ওই ধারায় বলা হয়েছে, উপযুক্ত কারণ ব্যতীত পিতা-মাতার পরিচয় প্রদানে অসমর্থতার কারণে কোনো শিশুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি বা অমত বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা বাধা দেওয়া বা সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান বা অবস্থানের ক্ষেত্রে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধি-নিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার বা অন্য যে কোনো ধরনের বৈষম্য করা যাবে না।
এসএ/