সিআরপি'র প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালরি টেইলরকে কুর্নিশ বিপ্লব বড়ুয়ার
সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালরি টেইলরকে কুর্নিশ জানিয়ে সন্মান দেখিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সাভারে সেন্টার ফর দি রিহ্যাবিলিটেশন অফ দি প্যারালাইজড(সিআরপি)'র ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে, 'সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালরি টেইলরকে কুর্নিশ জানাই, সালাম জানাই।'
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, প্রতিবছর এই সিআরপি থেকে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ সেবা পাচ্ছে। এখান থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে যারা তারা হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ।
সিআরপি'র প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি টেইলরের সংগ্রামী জীবন তুলে ধরে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, তিনি তার জীবনের শুরুতে বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার বেদনা দেখে তিনি যে কাজ শুরু করেছিলেন, যে আলো তিনি জ্বালিয়েছেন এই আলো আজকে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছেছে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের গল্প অনেকবার শুনেছি। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার সরকারের প্রথম মেয়াদে মিস্টার ভ্যালরিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছেন। কারণ তিনি জীবনের সবকিছু এই দেশের মানুষের সেবায়, দেশের প্রতিবন্ধী, পক্ষাঘাতগ্রস্থ মানুষের সেবায় বিলিয়ে দিয়েছেন। তাই তাকে বঙ্গবন্ধুকন্যা এই রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব প্রদান করে সম্মান দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা পদক প্রদান করেছেন।
আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি, অত্যন্ত আনন্দ বোধ করছি, গৌরব বোধ করছি আজকে এই প্রতিষ্ঠানে আসতে পেরে। এই প্রতিষ্ঠানের ৪২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপস্থিত থাকতে পেরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কয়েকবার এই প্রতিষ্ঠানে এসেছেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে এসে তার পরিবারের সদস্যদের জন্মদিন পর্যন্ত পালন করেছেন বলেও জানান বিপ্লব বড়ুয়া।
বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ২০০০ সালে যখন করোনা মহামারি, যখন আমরা ঘরবন্দি তখন আমাকে একদিন এই প্রতিষ্ঠান থেকে টেলিফোন করা হয়েছিল। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করার পর তিনি আমাকে দ্রুত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা পিপিপিসহ পরবর্তীতে ১০কোটি টাকা অনুদান দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, কোন কোন মানুষের কর্ম শুধু নিজের মধ্যে থাকে না, সমাজের মধ্যে থাকে না, একটা জাতির মধ্যে ছড়িয়ে যায় এবং সেই কর্মের সুফল সকলের হৃদয়ে গাঁথা হয়ে থাকে। আজকে ভ্যালরি টেইলর কাজটি সেটাই প্রমাণ করে।
সিআরপি হেড অফিস সাভারে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ভ্যালরি টেইলরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আই প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিদ মজুমদার বাবু, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, সিআরপি'র নির্বাহী পরিচালক ড. মো. সোহবার হোসেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালে একজন ব্রিটিশ ফিজিওথেরাপিস্ট ভ্যালেরি টেইলর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের দুটি পরিত্যক্ত গোডাউনে মাত্র চারজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী নিয়ে সিআরপি'র যাত্রা শুরু করেন ৷ দীর্ঘ ৪২ বছর কঠোর পরিশ্রম ও নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার মাধ্যমে সিআরপি বর্তমান অবস্থা পৌঁছেছে। তিনি যুক্তরাজ্যে তার আরাম-আয়েশের জীবন ত্যাগ করে বাংলাদেশের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার এই ত্যাগের বিনিময়েই সিআরপি আজ শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় পূর্ণবাসন সেবায় এক অতুলনীয় নাম হয়ে উঠেছে। ৪২ বছরের এই যাত্রায় সিআরপি'র হেড অফিস ব্যতীত সারাদেশে প্রায় ১১ টি শাখার বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। সিআরপি প্রতিবছর প্রায় ৮০ হাজার রোগীকে সেবা দিয়ে আসছে এবং এই সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এসএম/কেএফ/