মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে পররাষ্ট্রসচিবের হতাশা প্রকাশ
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কোনো পূর্ব আলোচনা ছাড়াই র্যাব কর্মকর্তাদের উপর মার্কিন প্রশাসন একতরফাভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারের কাছে হতাশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে এই হতাশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রসচিব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।
'গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’র অভিযোগে র্যাবের সাবেক প্রধান, বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদসহ বাকিরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না।
এই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কোনো পূর্ব আলোচনা ছাড়াই মার্কিন প্রশাসন একতরফাভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, যে বিষয়গুলোর কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেগুলি সক্রিয় আলোচনার অধীনে রয়েছে।
মার্কিন সরকার বাংলাদেশের একটি সংস্থাকে দুর্বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ, মাদকপাচার এবং অন্যান্য জঘন্য আন্তঃদেশীয় অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রভাগে ছিল সংস্থাটি; যাকে ধারাবাহিক মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে অগ্রাধিকার হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
এতে বলা হয়, কিছু নির্দিষ্ট ঘটনার জন্য র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো করা হয়েছে। সেগুলোর ব্যাখ্যা বিভিন্ন সময় দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর যেকোনো অন্যায়ে 'জিরো টলারেন্স' দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে অন্যায়ের অভিযোগ মোকাবেলা করতে আইনি ও প্রশাসনিক পদ্ধতির একটি সেট অনুসরণ করে। র্যাবের ক্ষেত্রে এটি ব্যতিক্রম নয়।
পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির মধ্যে বিপথগামী সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহার করলে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপানো হয় না।
রাষ্ট্রদূত মিলার বাংলাদেশ সরকারের উত্থাপিত উদ্বেগের কথা নোট করেন এবং তার রাজধানীতে তা জানানোর আশ্বাস দেন। সংলাপ ও উচ্চ পর্যায়ের সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বহুমুখী সম্পর্ক আরও গভীর করা যেতে পারে বলে তিনি একমত হন।
পারস্পরিক স্বার্থের ইস্যুতে আগামী দিনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকতে মার্কিন সরকারের ইচ্ছার কথা জানান রাষ্ট্রদূত মিলার।
এ তালিকায় বেনজীর আহমদের সঙ্গে কক্সবাজারে র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতা উদ্দিন আহমেদের নাম এসেছে। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হওয়ায় বেনজীর আহমদ ও মিফতা উদ্দিন আহমেদ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার পাবেন না বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
২০১৮ সালে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হককে ‘বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সম্পৃক্ততরার জন্য’ তাদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে আলাদাভাবে বিভিন্ন দেশের ১২ কর্মকর্তার নাম যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করার কথা জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্টের আওতায়ে ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ তালিকায় বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ছাড়াও সাবেক ও বর্তমান আরও পাঁচ কর্মকর্তার নাম রয়েছে।
তারা হলেন– র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান।
আরইউ/এএস