বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে ইউনেস্কোর বইয়ে যা বলা হয়েছে
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মাধ্যমে আধুনিক ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি বিয়াত্রিস কালডুন।
সোমবার (৭ মার্চ) রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ওপর বই ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ফিল্ড উইথ কালার’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিয়াত্রিস কালডুন একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বইটি নিয়ে বিয়াত্রিস কালডুন একটি প্রেজেন্টেশেন দেন। সেখানে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড' হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্তির পর আরেক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কোরিয়াস্থ ইউনেস্কো ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডকুমেন্টারি হেরিটেজ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে সচিত্র গ্রন্থ ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ফিল্ড উইথ কালার’।
এসডিজি লক্ষমাত্রা-১০ বা অসাম্য নিরসনের আলোকে এই ভাষণের গুরুত্ব ছবি ও বক্তব্যের মাধ্যমে গ্রন্থে উপস্থাপিত হয়েছে জানিয়ে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি বলেন, নবীন পাঠকরা বইটি কীভাবে ব্যবহার করবে সেই নির্দেশিকাও রয়েছে গ্রন্থে। বাংলাদশের আধুনিক ইতিহাসের সূচনা বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মাধ্যমেই হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নয়টি ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ নিয়ে বই প্রকাশ করা হয়েছে। এর একটি হলো বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। এ প্রসঙ্গে ভূমিকায় বলা হয়েছে-
গণতন্ত্র, অহিংস আন্দোলন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য সংগ্রাম
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হলো ১৯৪৭ সালে। এতে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিয়ে ভারত এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়। শুধু ধর্মীয় কারণে বাঙালিরা সংস্কৃতি, জাতিসত্তা এবং বিভিন্ন দিক থেকে পাকিস্তানের বাকি অংশের সঙ্গে অমিল থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানে যোগ দেয়।
পাকিস্তানের এই দুই অংশের মাঝখানে ছিল ভারত। এক অংশ থেকে আরেক অংশের দূরত্ব ছিল ১২০০ কিলোমিটার। এটি পূর্ব পাকিস্তানকে প্রান্তিকতার দিকে ঠেলে দেয়।
তাই শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা হয় পূর্ব পাকিস্তানে। এবং শেখ মুজিবের নেতৃত্বে একটি শান্তিপূর্ণ অহিংস আন্দোলন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল।
বাংলার জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ অর্জনের জন্য একত্রে সংগ্রাম করেছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন শাসকরা গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত ছিল না।
এই ব্যাপক পটভূমি থেকে ৭ মার্চের বক্তৃতা পুরো পরিস্থিতিকে ধারণ করেছিল। যাই হোক, পাশবিক ইতিহাস চলতে থাকে। পাকিস্তান আর্মি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যামূলক আক্রমণ শুরু করে।
এই গণহত্যা ছিল বাঙালিদের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট যা শান্তিপূর্ণ অহিংস আন্দোলনকে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে রূপ দেয়।
পরদিন শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন যার ফলে বাংলাদেশের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তানি আর্মিকে পরাজিত করার মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
আলিঙ্গন এবং সমন্বয়
রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যপক বৈষম্যের চাষ হয় পূর্ব পাকিস্তানে। বাঙালিরা বুঝতে পারে পাকিস্তান সিস্টেমে তাদের অধিকার নিশ্চিত নয়। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আকাঙ্খা মানুষের মধ্যে বাড়তে থাকল।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল যে কীভাবে একটি জাতি গঠনের জন্য বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। শেখ মুজিবের বক্তৃতা উদার মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে এবং সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
শেখ মুজিব সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির সঙ্গে মিলিত হন, বাঙালি হোক বা না হোক। তিনি সব সম্প্রদায়কে এক সূত্রে গেঁথেছিলেন।সব সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য কমানোর কথা বলেছেন তিনি।
এই ঐতিহাসিক বক্তৃতার বার্তাটিতে সেই শব্দের চারপাশে থাকা ব্যক্তিদের জন্য জোর দেওয়া হয়েছে যারা অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং শেখ মুজিবের ভাষণ
সারাবিশ্ব মুজিবের বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি দেয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সদস্যরা ঢাকায় ছুটে আসেন এবং আড়ালে থাকা কূটনীতিকরা সেই বক্তৃতাটি আন্তর্জাতিক সমাজের সামনে তুলে ধরে। যেটা পরবর্তীতে ব্যাপক প্রচার পায়।
গণহত্যা ও অমানবিক কাজের মোকাবিলা ও মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার জন্য সারাবিশ্ব সংহতি প্রকাশ করে। এর ফলে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয় এবং পরের বছর একটি সংবিধান গৃহীত হয়।
আরইউ/এএস