বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

প্রেমের নদী আন্ধারমানিক

শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষ হয় তারানার। ভালোবাসার মানুষ পাওয়ার যে হাহাকার বুকের মধ্যে ছিল সেই দম-আটকানো অবস্থা আর নেই। এখন ওর বুকের গভীরে বয়ে যায় আন্ধারমানিক নদী। নদীর ধারে চুপচাপ বসে থাকে ও। নদীর দিকে তাকিয়ে বুক ভরে যায় তারানার। স্বামীর সংসারে এই নদী ওর আনন্দের সঙ্গী। আশেপাশের মানুষেরা জানে ও নদীর ধারে বসে থাকতে ভালোবাসে। তারেকের সঙ্গে প্রেম হওয়ার পরে এই বসে থাকা আরও গভীর আনন্দের হয়েছে। জীবনে এমন একটি সময় আসবে এমন ধারণা স্বপ্নেও ছিল না। ওকে নদীর ধারে বসে থাকতে দেখে একদিন তারেক ওর ছোট্ট নৌকাটা পাড়ে ঠেকিয়ে নেমে এসেছিল। কাছে এসে বলেছিল, আপনি আমাদের গাঁয়ের বউ। আপনার মতো নদীর ধারে এমন করে কেউ বসে থাকে নাই। আপনি নদী খুব ভালোবাসেন না?
- হ্যাঁ, খুব ভালোবাসি। আমার বাবার বাড়ির ধারে নদী ছিল না।
- আমি এই নদীতে মাছ ধরি।
- হ্যাঁ, জানি। আমি আপনাকে দেখেছি নৌকা নিয়ে চলে যেতে। আমার মনে হতো আমিও যদি এমন নৌকা বেয়ে যেতে পারতাম।
- খয়ের ভাইকে বলেন না কেন?
- ও এসব পছন্দ করে না। খালি ভাত রানতে বলে। কোথাও একটু বেড়াতেও নিয়ে যায় না।
- আমি নিয়ে যাব। যাবেন আমার সঙ্গে নদীতে ঘুরতে?
- যাব, যাব। অনেক দূরে যাব।
- কবে দিন ঠিক করেন।
- আচ্ছা দেখি।
- আজ আমি আসি। আমার খুব ভালো লেগেছে আপনার সঙ্গে কথা বলে। আপনি দেখতে যেমন সুন্দর, আপনার কথাও তেমন সুন্দর। আমি সুযোগ পেলে আপনার সঙ্গে বসে গল্প করব। আন্ধারমানিক দুচোখ ভরে দেখবে আমাদের।
- ঠিক। একদম ঠিক। আমি এমনই নদী চাই।
- আজকে যাই। আবার আসব। তারানার দু’চোখে উজ্জ্বল হাসি ছড়ায়। সেদিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায় তারেক। নৌকায় উঠে হাত নাড়ায়।

জমে ওঠে প্রেমের খেলা। তারানা রোজ বিকেলে এসে বসে নদীর ধারে। সূর্য পশ্চিম আকাশে চলে যায়। বিকেলের ফিকে আলো ছড়িয়ে থাকে চারদিকে। যতদূর দৃষ্টি যায় ফিকে আলোর স্নিগ্ধতা ওর মনোজগতে ভিন্ন আবেশ তৈরি করে। বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাস ওকে ছুঁয়ে ছড়িয়ে যায় চারদিকে। এখন ওর জীবনে অন্যরকম সময় এসেছে। জীবনের এমন মধুর সময় ও ছাব্বিশ বছরে পায়নি। এ এক পরম পাওয়া। আন্ধারমানিক নদীর দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে, নদীরে তুই আমার জীবনে এখন শুধু জোয়ার। আমার নদীতে ভাটির টান নাই। প্রেম তো জোয়ারই।
অনেক দূরে জেলেরা নদীতে মাছ ধরে। ও নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। নিজেকে বলে ওখানে আমার প্রেম আছে। আমি প্রেমের নদীতে ডুবে থাকি। আন্ধারমানিক নদীতে ভেসে বেড়াই আমি। তারেক আমার আন্ধারমানিক। ও আমার জোয়ারের জল। আমাকে বলে, তুমি আমার ফুলের কুঁড়ি। গাছের ছায়া। নানা উপমায় মন ভরিয়ে দেয় তারেক। দুজনের খুনসুটিতে ভরে ওঠে পড়ন্ত বিকেল। প্রতিদিন দেখা হয় না। চারদিকের লোক চলাচল দেখে তারেক আসে। নইলে মানুষের চোখে পড়বে ওদের সম্পর্ক।
একদিন তারেক জিজ্ঞেস করেছিল, খয়ের মিয়া তোমাকে কী নামে ডাকে?
তারানা শুকনো মুখে বলেছিল, হারামজাদী।
- কী বললে?
- হ্যাঁ, এই শব্দে ডাকে।
- যাক ভালোই হয়েছে। আমার প্রেমই তোমার জীবনে প্রথম।
- তুমি আমার আন্ধারমানিক। এই নদীর ধারে বসে আমার কাছে প্রেম এসেছে।
- একদিন বনের মধ্যে হাঁটতে যাব দুজনে। বুকে জড়িয়ে ধরব তোমাকে।
উচ্ছ্বসিত হাসিতে ভেঙে পড়ে তারানা। তারেক মৃদু হেসে বলে, তোমার হাসি নদীর স্রোতে। আজ যাই।
এভাবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে তারানার স্বস্তি। কেটে যায় কয়েক মাস।

তারেকের দিকে তাকালে ওর চোখ ফেরে না। তারেক নিজেও দুচোখ ভরে ওকে দেখে। পলকহীন তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটে মৃদু হাসি, যেন উড়িয়ে নিয়ে যাবে বুকে জড়িয়ে। হয়ে যাবে রঙিন প্রজাপতি। এই প্রথম নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। রঙিন দিনগুলো আলোর ফুলকি ছড়ায়। তারানা খুশিতে মাতোয়ারা হয়ে থাকে। নিজেকে অনেক কষ্টে আড়াল করে।
মাঝে মাঝে ধরা পড়ে যায় খয়েরের কাছে। ও চোখ গরম করে ক্রুদ্ধ স্বরে বলে, তোর কী হয়েছে? চেহারায় এত খুশি কেন?
- চেহারায় খুশি দেখা যায় নাকি? খুশি কী চোখে দেখার জিনিস?
- খবরদার, বেশি কথা বলবি না হারামজাদী।
স্বামীর মুখে গালি শুনে নিজেও রেগে ওঠে তারানা। চেঁচিয়ে বলে, তুইও একটা হারামজাদা। দশ বছর ধরে সংসার করলাম পোলাপানের দেখা নাই।
- তুই বাঁজা মাইয়ালোক।
- আমি বাঁজা না, তুই বাঁজা। হারামজাদা বেডা একটা।
ক্রুদ্ধ খয়ের বৌয়ের রণরঙ্গী মূর্তি দেখে থমকে যায়। আর কথা বাড়ায় না। ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয়। বারান্দায় বসে থাকে তারানা। স্মৃতির পাতায় ফুটে ওঠে বাবা-মায়ের সংসার। ও বিড়বিড়িয়ে বলে, বাবা-মায়ের প্রেমের সংসার। প্রেমের সংসারে হেসেখেলে ও বড় হয়েছে। এখন ও ছাব্বিশ বছর বয়সী। নদীর ধারে বসে জীবনের সুখ খুঁজে বেড়ায়। মাঝে মাঝে ভাবে, সুখ কী? আবার বাবা-মায়ের কথা মনে হয়। দুজনে কলেরায় মারা গেছে। ওর চোখের সামনে মাটিতে গড়াতে গড়াতে সকালবেলা মরে গেছে বাবা। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়েছিল ওর মা। ও নিজেও বাবার বুকের উপর শুয়ে পড়েছিল। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, বাজান গো, চোখ খোল, চোখ খোল। তোমার চোখের মণি দেখব।

বাবা চোখ খোলেনি। মা-ও কলেরায় তড়পাচ্ছিল। কথা বলতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত দুচোখ বন্ধ করে কাত হয়ে ঢলে পড়েছিল। চোখের সামনে বাবা-মায়ের মৃত্যু দেখা জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখের দিন। একদিনের সকাল-দুপুর ছিল তারানার জীবনের দীর্ঘতম সময়। এই সময়কে ও বুঝতে শিখেছিল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। সেদিন তারিখটা ছিল আটই ফাল্গুন। বসন্ত দিনের সুবাতাস ও প্রাণভরে নিজের নিঃশ্বাসে টেনেছিল। পাশাপাশি ব্যাকুল কান্নায় চিৎকার করে মাতিয়ে রেখেছিল ঘরবাড়ি। এই সময়ে ঘটে গেছে ওর পুরো জীবনের ঘটনা। যে ঘটনার রেশ গড়াতে থাকবে মৃত্যু পর্যন্ত। তখন তেরো বছরের বালিকা ছিল। প্রাইমারি স্কুলের পড়া শেষ হয়েছে। ওদের গ্রামে হাইস্কুল ছিল না, যেতে হবে পাশের গ্রামের সীমানায়। অনেক দূরে। একা একা এত দূরে পাঠাতে রাজি ছিল না ওর বাবা-মা। তাই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গাঁয়ের কেউ কেউ বলেছে, মেয়েটার মাথা ভালো। ওকে ঘরে বসায়ে রাখলি কেন? হোস্টেলে দিয়ে পড়ালেখা করা।
- দিনমজুরি করে ভাত ভাই। কেমন করে হোস্টেলের টাকা দিব? চুরি করতে বলবেন নাকি?
- যা, পাগলামি করতে হবে না।
- পাগলামি না আযম ভাই, কষ্ট। স্কুলের ক্লাসে ফার্স্ট হয়। মাস্টাররা সবাই ওর প্রশংসা করে। আমার কইলজা ভরে যায়।
- লাভ কী তাতে? মেয়েটাতো পড়ালেখায় আগাতে পারল না। ভালো একটা চাকরিও তো করতে পারবে না।
মাথা নিচু করে দুহাতে চোখ মুছেছিল ওর বাবা হানিফ। বাড়িতে ফিরে ওর মায়ের কাছে একথা বললে ওর মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে কেঁদেছিল। ওর বাবা মায়ের কপালে চুমু দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়েছিল। ও দাঁড়িয়েছিল পাশে। মায়ের কান্না থামে না দেখে ওর বাবা চোখের উপর চুমু দিয়ে ঠোঁট ধরে রেখেছিল। মা হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিল বাবার ঠোঁট। তারপর নিজেকে সরিয়ে নেয়। দুজনে বিষণ্ন মুখে তাকিয়ে থাকে। সেদিন ও বুঝেছিল দুজনে খুবই কষ্ট পাচ্ছে। একসময় আমিনা খাতুন জোরে জোরে বলে, হোস্টেলের খরচের জন্য আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করব।
- না, না। আমি তা হতে দেব না।

হানিফ ঘাড় নাড়িয়ে কথা বলে। ঢোক গিলে। নিজের চুলের ভেতর হাত ঢুকিয়ে চুল এলেমেলো করে।
- না, না কর কেন? কাজ করে টাকা তো থলিতে ভরব না। মেয়ের পড়ালেখায় খরচ হবে।
- মানুষের বাড়িতে কাজ করলেও হোস্টেলের টাকা হবে না গো-
- ধারদেনা কর। তাও ওর পড়ার খরচ চালাও। মেয়েটার মাথা ভালো, দেখতেও ফুটফুটা।
হা-হা করে হাসে হানিফ। হাসতে হাসতে বলে, মেয়েটার কপাল মন্দ।
- ঠিক বলেছেন বাজান।
তারানা উঁচু কণ্ঠে কথা বলে। নিজেও হেসে গড়িয়ে পড়ে। আমিনা খাতুন অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। পড়ালেখা হবে না। এ নিয়ে কি ওর দুঃখ নাই? হানিফ ওর মাথায় হাত রেখে বলে, মা রে তুই ছাড়া আমাদের তো আর পোলাপান নাই। তোরে-
- থাক বাজান থাক, কষ্টের কথা আর বলতে হবে না। আমি আপনাদের কাছে থাকব। আমিও দিনমজুরি করব। অন্য কোথাও যাব না।
- তাহলে তোকে হাইস্কুলে ভর্তি করে দেই। আমি তোকে পৌঁছে দিয়ে আসব। আবার নিয়ে আসব।
- ঠিক বলেছ। তোমার কাজ থাকলে আমি যাব। আমি ওকে স্কুল থেকে আনব।
- কেন? কেন আপনাদের যেতে হবে? আমিতো একাই স্কুলে যেতে পারব।
- না, তোকে একা যেতে দিব না। শয়তান পোলাপান তোর পিছে লাগবে। পাটক্ষেতে, ধানক্ষেতে টেনে নিয়ে যাবে। গায়ের জোরে তুই ওদের সঙ্গে পারবি না।
হানিফ বলে, তোর চেহারা নিয়ে আমরা খুশি না। আমরা দুইজনে গলা ধরে কান্দি।
তারানা বাবার কথা শুনে হাসে। রাস্তায় হাঁটলে লোকেরা বলে, ইস, মেয়েটা কী সুন্দর!
বাবা সঙ্গে থাকলে কড়া করে ধমক দেয়।
- খবরদার এমন কথা বলবে না। আমার মেয়ের দিকে তাকাবে না।
- দিনমজুরি করে বেটা দাপট দেখায়।
- কী বললি? দাঁড়া দেখাচ্ছি-
ছেলেটি দৌড়ে চলে যায়। তারানা বাবার হাত চেপে ধরে।
- বাজান আপনি ওদের পেছনে যাবেন না।
- তোর জন্য চিন্তায় মরে যাই।
- কেন আমার কী হবে?
- বড় হলে বুঝবি। চল যাই।
মেয়ের ঘাড়ে হাত রেখে হাঁটতে থাকে হানিফ মিয়া।

বাবা-মা মরে যাওয়ার পরে চাচার কাছে ছিল দেড় বছর। চাচা ওকে বিয়ে দেয় ওর চাইতে বয়সে দ্বিগুণ বড় খয়ের মিয়ার সঙ্গে। লোকটির বয়সের কথা শুনে ও যখন কাঁদছিল তখন চাচা বলেছিল, তুই তো আমার ঘাড়ে বোঝা হয়েছিস। খয়েরকে যৌতুক দিতে হবে না। বেঁচে গেছি, লোকটার বৌ মরে গেছে। পোলাপান নাই। ভালোই তো হবে সংসার। আরামে থাকবি। অভাবের কষ্ট পাবি না।
- আমি বিয়ে করব না।
- খবরদার, একথা বলবি না। বিয়ে দিয়ে দিব। চলে যাবি।
- আমাকে ভাত খাওয়াতে আপনাদের কষ্ট হচ্ছে?
- চুপ, কথা বলবি না। তোকে পাহারা দিতে আমার কষ্ট হচ্ছে। এখন স্বামীর কাছে যাবি। আমি রেহাই পাব।
- তাহলে যাই।
তারানা সেদিন দুহাতে চোখ মুছেছিল। শুধু বাবা-মায়ের কাছে ও প্রেমের স্বপ্ন দেখেছে। ঠিকমতো ভাত খাওয়া হয়নি বাবা-মায়ের কাছে, কিন্তু বুকভরা আনন্দ ছিল। এখন স্বামীর সংসারে পেট ভরা ভাত আছে, কিন্তু আনন্দ নাই। প্রেম নাই। শুধু শরীর নাড়াচাড়া আছে। প্রেম ছাড়া এই নাড়াচাড়ায় আনন্দ নাই। ও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলে, আমি ভালোবাসা চাই। ভালোবাসা।
তখন ঘর থেকে বেরিয়ে আসে খয়ের মিয়া। তারানাকে চোখ মুছতে দেখে থমকে দাঁড়ায়।
- কী হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেন?
- ভালোবাসার জন্য।
- কেন, তুই ভালোবাসা পাস না?
- না, পাই না।
- দিব এক লাত্থি।
খয়ের মিয়া ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালে ও দ্রুত সরে পড়ে। তারেকের মুখ ভেসে ওঠে। বুকের ভেতর ধ্বনিত হয় তারেকের কণ্ঠস্বর, ফুলকুঁড়ি আমার হাত ধরো। চলো আমরা ভেসে যাই। নদী থেকে সাগরে যাব। তারপর মহাসাগরে। আমাদের প্রেমের মহাসাগর। এমন ভাষা শোনার অপেক্ষায় ছিল ও। শিখেছিল বাবা-মায়ের জীবন থেকে। দুজনে ওর সামনে ভালোবাসার কথা বলে ওকে বুঝতে শিখিয়েছিল ভালোবাসা। কিন্তু খয়ের মিয়ার কাছ থেকে ভালোবাসার কোনো স্পর্শ পায়নি। বুকের শূণ্যতা কামড়ে ধরে থাকে রাত-দিন। বাবা-মায়ের মৃত্যু ওর জীবনে একদিনের সকাল-বিকেল।

তারেকের ভালোবাসা এই সকাল-বিকাল সময় ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে। সঙ্গে হৃদয়-জুড়ানো সৌরভ। ভাবে, বেঁচে থাকা কী সুন্দর! খয়ের মিয়ার গালমন্দ এখন ওকে আহত করে না। ওর সামনে নতুন দিনের চিন্তা। তারেকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে নতুন জীবনে ডুবসাঁতার দেবে।
একসময় দুজনের প্রেম গ্রামের মানুষের চোখে পড়ে। নানা কথা কানে আসে খয়ের মিয়ার। নিজেও নদীর ধারে দেখতে পায় দুজনকে।
একদিন নদীর ধার থেকে ওকে তুলে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নদীতে। বলে, যা মর। মরে ভূত হ হারামজাদী।
তারানা ডুবে যায় নদীতে। সাঁতার দিয়ে আবার মাথা তোলে। দেখতে পায় দ্রুত নৌকা চালিয়ে এগিয়ে আসছে তারেক। নৌকা কাছে এনে বলে, উঠে আস ফুলকুঁড়ি। আমার হাত ধরো।
নৌকায় উঠে পড়ে তারানা। ভিজে শাড়ি ঝাড়তে ঝাড়তে বলে, কী হলো আমাদের? খয়ের মিয়াতো আমাকে মরণে ঠেলে দিয়েছে। বলেছে মর।
- ভালোই করেছে। মরণের পরে আমরা এখন বেহেশতে আছি। আন্ধারমানিক আমাদের বেহেশত। খয়ের মিয়ার কাছ থেকে বেঁচে গিয়ে তোমার মরণ হয়েছে। তুমি এখন বেহেশতে। তোমার সঙ্গে আমিও বেহেশতে ঢুকেছি।
- বাহ, সুন্দর।
তারানা হাসিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। কলকলিয়ে বলে, আন্ধারমানিক আন্ধারমানিক। প্রেমের নদী আন্ধারমানিক।
কণ্ঠস্বর ভেসে যায় নদীর চারদিক। নদীতে এখন জোয়ারের ভরা টান।

এসএন

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া