শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৬

বিষাদ বসুধা

আরেফিন অন্যভাবে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বললেন, আমার ক্যারিয়ারের জন্য খুব প্রয়োজন। যেতে রাজি না হলে আমার চাকরির জন্য সমস্যা হতো।


মোহিনী রেগেমেগে বললেন, রাখো তোমার ক্যারিয়ার! তোমার সংসার বড়ো নাকি তোমার চাকরি?

আরেফিন নরম গলায় বললেন, দুটোই বড়। তুমি এতোটা রাগবে তা আমি বুঝতে পারিনি মোহিনী। তুমি বোঝার চেষ্টা করো। আমি আসলে আমার ক্যারিয়ারের কথা ভেবেছি। আর আমার চাকরির সমস্যা হবে বলেই এটা করেছি।

তাহলে আমার সঙ্গে আগে থেকে আলোচনা করতে! আমাকে জানাতে যে, এ রকম একটা অফার তুমি পেয়েছ! এটা তো হুট করে আসেনি; তাই না? জাতিসংঘ একটা আন্তর্জাতিক সংস্থা। তারা তো আর হুট করে বলবে না। সময় দেবে।

আসলে তোমাকে জানাব জানাব করে আর জানানো হয়নি। আমার ভুল হয়ে গেছে মোহিনী। প্লিজ তুমি এবারের জন্য বিবেচনা করো। আমার আর এ রকম হবে না।
না। আমি এটা কিছুতেই মানব না। তুমি গেলে নিজ দায়িত্বে যাবে।

মোহিনী!
হ্যাঁ। তুমি গেলে নিজ দায়িত্বে যাবে। আমি অনেক সহ্য করেছি। আর না।

মোহিনীর কথা শুনে আরেফিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। তিনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। শেষ মুহূর্তে না গেলে ওর চাকরি থাকবে না। এসময় চাকরি গেলে চাকরি পাওয়া যাবে না। আরেফিন অসহায় হয়ে পড়বেন। তিনি যে প্রতি মাসে বাড়িতে টাকা পাঠান তাও বন্ধ হয়ে যাবে। বাড়িতে টাকা পাঠানো বন্ধ হলে সবাই না খেয়ে মরবে। এটা ভাবতেই তার গা শিউরে ওঠে।

আরেফিন চোখ বন্ধ করে পুরো বিষয়টা নিয়ে ভাবেন। একটা পর্যায়ে গিয়ে সে আর ভাবতে পারেন না। তিনি মোহিনীকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মোহিনী তার কোনো কথাই কানে তুলছেন না। এ বিষয়টি নিয়ে সে কোনো আলোচনাই করতে রাজি নন। সঙ্গত কারণেই আরেফিন আর আগান না। তিনি চোখে চোখে তার অসহায় মা বাবাকে দেখেন। তার অসহায় ভাইবোনকে দেখেন। আরেফিনের টাকায় যাদের অন্ন জোটে। তিনি মনে মনে ভাবেন, এই অসহায় মানুষগুলোর কি হবে? আমি কি মোহিনীর কাছে হাত পাতবো? সে অনেক দিয়েছে। যথেষ্টই দিয়েছে! তার কাছ থেকেই বা কত চাইব? না না! এ হয় না। নিজের চাকরি না থাকলে মানুষের কোনো ব্যক্তিত্ব থাকে না। পরমুখাপেক্ষি মানুষ ভিক্ষুকের চেয়েও অধম। মোহিনী আমার বউ; তাতেে কি? তার যত টাকাই থাকুক, আমার না থাকলে সে বেশি বেশি খোটা দেবে। অন্যের টাকার ওপর ভরসা করে মা বাবাকে টাকা পাঠাবো?

আরেফিন আবার ভাবে, মোহিনী খুব ভালো মেয়ে। আমি অনেক ভুল করেছি। মোহিনীকে অবহেলা করেছি। সে সেগুলো মনে রাখেনি। তার মেজাজ ঠাÐা হলে সব ভুলে যাবে। সে আমাকে ঠিকই যেতে দেবে। আমি যদি ভালো কিছু করি তাহলে নিশ্চয়ই সে খুশি হবে।

এরমধ্যে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। আরেফিনের বিদেশে যাওয়ার প্রসঙ্গটিও চাপা পড়ে যায়। হঠাৎ একদিন আরেফিন মোহিনীকে বললেন, সাতাশ ডিসেম্বর তিনি চীন যাবেন। বিকেলে তার ফ্লাইট।
একথা শুনে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকান মোহিনী। তিনি মনে মনে শুধু বললেন, এতোকিছুর পরও আরেফিন বিদেশে যাচ্ছে!

মোহিনী নিজেই আরেফিনকে বিমান বন্দর পৌছে দিতে যান। স্বাভাবিকভাবেই আরেফিনকে বিদায় দেন। মোহিনী তাকে বুঝতে দেননি যে, তিনি নিজেদের বাসায় ফিরে আসবেন। তিনি শুধু বিদায়ের সময় আরেফিনকে উদ্দেশ করে বললেন, ভালো থেকো। আর কোনো কথা হয়নি তাদের মধ্যে।

ইমিগ্রেশন পার হয়ে আরেফিন ফোন দিয়েছিলেন। একবার দুবার নয়, পাঁচ পাঁচবার। কিন্তু মোহিনী ফোন ধরেননি। পরে একাধিকবার আরেফিন মোহিনীকে এসএমএস করেছেন। তারও কোনো জবাব দেননি তিনি। ইচ্ছা করেই এটা তিনি করেছেন। এবার মোহিনী তাকে বুঝিয়েছেন, তার বিদেশ যাওয়া তিনি ভালোভাবে নেননি। ফোন না ধরার কারণে আরেফিন চিন্তায় পড়েছেন। কেন ফোন ধরছে না, কেন এসএমএসের কোনো জবাব দিচ্ছে না তা নিয়ে আরেফিনের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়।

আরেফিন ড্রাইভারকে ফোন দেন। সেও ফোন ধরছে না। পরে আরো কয়েকবার তাকে ফোন দেয়া হয়েছে। কিন্তু আরেফিন ফোন ধরেনি। এতে আরেফিনের দুশ্চিন্তা আরো বাড়ে। তিনি মনে মনে বলেন, কি ব্যাপার! ড্রাইভারও তো ফোন ধরছে না! কি ঘটনা?

আরেফিন এবার তার বন্ধু সওগাত আলীকে ফোন করেন। তাকে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। তিনি তাকে অনুরোধ জানান, মোহিনীকে ফোন করে বিষয়টা বোঝার জন্য। সওগাতের ফোন ধরলে আরেফিন বুঝতে পারবেন।

আরেফিনের অনুরোধে সওগাত মোহিনীকে ফোন করেন। সঙ্গে সঙ্গে মোহিনী তার ফোন ধরেন। তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সওগাত আরেফিনের কথা জানতে চায়। তিনি তার জবাবও ঠিকঠাক মতো দেন। পরে সওগাত আরেফিনকে ফোন করে বললেন, মোহিনীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলে তো নেগেটিভ কিছু মনে হলো না। স্বাভাবিক মনে হলো।
আরেফিন সওগাতের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে ফ্লাইট ধরার জন্য এগিয়ে যায়। যেতে যেতে তিনি ভাবেন মোহিনীকে নিয়ে। তিনি মনে মনে বলেন, মোহিনী সওগাতের ফোন ধরল! অথচ আমার ফোন কেন ধরছে না!

আনোয়ারা বেগম মোহিনীকে দেখে চমকে উঠলেন। মোহিনী এ সময় তাদের বাসায় যাবেন তা তিনি কল্পনাও করেননি। বিয়ের পর শুক্রবার কিংবা শনিবার ছাড়া তিনি তাদের বাসায় যাননি। ঈদের সময় দুটি ঈদ তিনি বাপের বাসায় করেছেন। আর দুটি ঈদ করেছেন দেশের বাইরে। ওদের বিয়ের বয়স চার বছর। মোহিনী তার সংসার এবং নিজের অফিস নিয়েই বেশি ব্যস্ত। তবে প্রতিদিন তার মা’র সঙ্গে কথা বলা তার অভ্যাস। সেটাও দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে। সেই সময়টা আনোয়ারা বেগম জানেন। অন্য সময় আনোয়ার বেগমও ফোন করলে বলেন, মা আমি এখন ব্যস্ত। পরে কথা বলি!

মা মেয়ের সম্পর্কটা খুবই চমৎকার। কিন্তু সময় বুঝে তারা কথা বলেন। আনোয়ারা বেগম জানেন, তার মেয়ে একটা অফিস চালায়। তাকে তার অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। সেই ব্যস্ততার মাঝে আনোয়ার বেগম কখনোই মেয়েকে ফোন করেন না। বিশেষ প্রয়োজন হলে এসএমএস করে ফ্রি আছে কি না জানতে চান। তারপর ফোন করে কথা বলেন। বিয়ের পরও এই রুটিনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি জানেন মেয়ের নিজের সংসার হয়েছে। সে তার অফিসের কাজের বাইরে স্বামীকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। সেই সময়ে তিনি ভাগ বসাতে চান না।

আনোয়ার বেগম বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে চান, মোহিনী তুই!
কেন মা? তোমাদের বাসায় বুঝি আমার আসতে মানা?
আরে কি বলিস তুই? আমাদের বাসায় মানে! এটা তোরও তো বাসা! আর আসতে মানা হবে কেন? বিয়ের পর তোকে এরকম অসময়ে তো দেখিনি!
তোমাকে দেখতে এলাম মা।
মেয়ের কথা শুনে হাসি ছড়িয়ে দিলেন তিনি। তারপর বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, তুই আসবি না তো কে আসবে বল! কেমন আছিস মা?
মোহিনী স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে বললেন, ভালো আছি মা।
তুই একা! আরেফিন কোথায়?
ও চীনে গেছে। উহানে ওদের দুই মাসের কর্মশালা আছে।
দুই মাস! বলিস কী! এতোদিন কিসের কর্মশালা?
কি জানি। জানি না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার বাসায় আপাতত যাচ্ছি না। তোমাদের এখানেই থাকব।
বিস্ময়ের সঙ্গে আনোয়ারা বেগম বললেন, মানে! হ্যারে মা, তোরা ঝগড়াঝাটি করিসনি তো?
না মা। তেমন কিছু না। তবে আমি আপাতত তোমাদের এখানেই থাকব।

আনোয়ারা বেগম চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি মেয়ের পাশে গিয়ে বসেন। বোঝার চেষ্টা করেন। আরেফিনের সঙ্গে সত্যিই কিছু হয়েছে কিনা তা বুঝতে চান তিনি। বিয়ের সময়ই তিনি আপত্তি করেছিলেন। মোহিনীর বাবাও চাননি আরেফিনের সঙ্গে ওর বিয়ে হোক। মোহিনী জোর করে তাদেরকে রাজি করিয়েছেন। তিনি তার মা বাবাকে বলেছেন, তোমরা আমাকে নীতি নৈতিকতা শিখিয়েছ। মানবিকতা শিখিয়েছ। মনুষ্যত্ববোধ, কৃতজ্ঞতাবোধ আমার ভেতরে ঢুকিয়েছ। আমি তার বাইরে যাই কি করে বলো! আমি আরেফিনের পরিবার দেখিনি। ওর কি আছে না আছে সেদিকে নজর দিই না। আমার প্রতি আমার যে অন্ধ ভালোবাসা; তাও নয়। আমি শুধু কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে ওকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।

মোহিনীকে কিছুতেই বোঝানো যায়নি যে, অশিক্ষিত, নীচু পরিবার থেকে উঠে আসা কোনো ছেলে মেয়ে, যতই শিক্ষিত হোক, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাল্টাবে না। মানসিকতা পাল্টাতে পারবে না। কথায় বলে না, গোবরে পদ্ম ফুল। মেধার গুণে গোবরে পদ্মফুল ফুটতেই পারে। কিন্তু তার মানসিকতা পদ্মফুলের মতো হবে না।

মোহিনী দাম্পত্য জীবনের দূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে হারে হারে উপলব্ধি করছেন যে, তিনি কতবড় ভুল করেছেন! দাম্পত্য জীবনের জটিল অংক মেলাতে গিয়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুন্দরভাগে এগিয়ে গিয়েও হঠাৎ যেন থমকে গেছে। মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠছে। কখনো কখনো মানসিক চাপ অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। সেই চাপ তিনি আর নিতে পারছেন না।

মোহিনী তার মা’র কাছে অকপটে তার ভুলের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, এমন ভুল তিনি করেছে যা শোধরাবার নয়। তবে ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার আছে। জীবনকে তিনি থমকে দিতে রাজি নন। জীবন চলমান নদীর মতো। নদী যেমন সব ধরনের ঝড়ঝঞ্জা মারিয়ে এগিয়ে চলে, মোহিনীও তেমনি করে এগিয়ে চলতে চান। তিনি তার ব্যবসার হালটাকে শক্তভাবে ধরতে চান।
মোহিনীর কথায় আনোয়ারা বেগম ভীষণভাবে আপ্লুত হন। তিনি মনে মনে বলেন, এই না হলে আমাদের মেয়ে!

আনোয়ারা বেগম চুপ করে আছেন দেখে মোহিনী বলেন, মা তুমি চুপ করে আছো যে! কিছু বলছ না যে! আমি থাকলে তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে? অসুবিধাবোধ করলে আমি চলে যাবো।
মোহিনী, তুই এমনভাবে বললে আমি খুব কষ্ট লাগে। তুই আমার একমাত্র মেয়ে। তুই ছাড়া আমাদের আর কে আছে? আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা এতো সম্পদ দিয়েছেন, এসব কে খাবে? কে দেখবে? তোকেই তো সব দেখতে হবে!

ধন্যবাদ মা। আমি এখন অফিসে যাবো। আমার রুমটা ঠিকঠাক করিয়ে রেখো।
ঠিক আছে। তুই অফিসে যা।

চলবে....

 

আরও পড়ুন

 

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

 

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত