রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৪

কর্নাক থেকে লুক্সর ফেরার পথে মোস্তফা একটা গলি পথে এসে গাড়ি থামিয়ে বললো, ‘ইউ মে হ্যাভ আ লুক!’ আমি নামার আগেই তাকিয়ে দেখলাম নিয়ন সাইনে জ্বলছে ‘নিউ ডেলটা প্যাপিরাস’। বুঝলাম প্যাপিরাসে আঁকা চিত্রকর্মের বিপনী বিতান, সঙ্গে প্যাপিরাস তৈরির কারখানাও থাকতে পারে। নিউ ডেলটা প্যাপিরাসের মতো আলো ঝলমলে দোকানে কিছু কেনা আমাদের সাধ্যে কুলাবে না জেনেও গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। আন্তরিক সম্ভাষণের সঙ্গে শীতল পানীয়ের আপ্যায়ন অনেকটা উপেক্ষা করেই পৌঁছলাম একটা কাউন্টারে। সেখানে সুদর্শন তরুণ সেলসম্যান তাঁর মোটামুটি বোধগম্য ইংরেজিতে প্যাপিরাসের ইতিহাস বর্ণনা শুরু করেছিলেন। বিদেশে গাইডের তত্ত্বাবধানে দল ধরে কোথাও ঘুরতে গেলে এই এক বিড়ম্বনা। সকলেই দাসযুগ থেকে সবকিছুর বিবরণ দিতে শুরু করে। ইংরেজি পেপার শব্দটি যে আসলে প্যাপিরাস থেকেই এসেছে তা আরও একবার তাঁর কাছে শুনলাম। সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের পরে তাঁকে থামিয়ে দিলে তিনি প্যাপিরাস গাছের একটি কাণ্ড হাতে তুলে নিয়ে দেখালেন কাগজ তৈরির প্রাগৈতিহাসিক পদ্ধতি।



ঢাকার বলধা গার্ডেনে বছর কুড়ি আগে দু তিনটি প্যাপিরাস গাছ দেখেছিলাম। আমাদের নগরায়নের ঠেলায় সেগুলোর অস্তিত্ব এখনো আছে কিনা আল্লা মালুম। সেই গাছ দেখে আমার ধারণা হয়েছিল কাগজ তৈরি হয় প্যাপিরাস গাছের মণ্ড থেকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল প্যাপিরাসের সবুজ শরীর থেকে ছুরি দিয়ে পাতলা করে ছাল ছাড়িয়ে পরপর লম্বা করে সাজিয়ে তার উপরে আরেক দফা আড়াআড়ি রেখে চাপ প্রয়োগ করে পরস্পরের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে তৈরি হয় প্যাপিরাসের ছোট ছোট পাতা। অতীতকালে পাতাগুলো দীর্ঘ সময় ভারি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হলেও বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুটি কাঠের পাটাতনের মাঝে ফেলে যান্ত্রিক চাপে চ্যাপ্টা হয়ে বেরিয়ে আসে এক একটি প্যাপিরাসের কাগজ। আজকাল নাকি কলা গাছের ছাল বাকল তুলেও তৈরি হচ্ছে নকল প্যাপিরাস!

আসল নকলের তফাৎ বোঝাটা আমাদের সাধ্যে কুলাবে না, কিন্তু ‘নিউ ডেলটা প্যাপিরাস’ থেকে তাদের কথিত আসল প্যাপিরাসের চিত্রকর্ম যথোপোযুক্ত মূল্য পরিশোধ করে কেনা যে আমাদের মতো পর্যটকের পক্ষে সম্ভব নয়, তা বুঝতে পেরে দ্রুত বেরিয়ে পড়া ভালো মনে হলো। বেরোতে চাইলেও সহজে বের হওয়া যায় না। অন্ধকার কক্ষে প্যাপিরাসের উপর জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা শিল্পকর্ম, আধুনিক ক্যালিগ্রাফি ও হায়রোগ্লিফিক লিপি এবং ফারাও যুগের সম্রাট থেকে ক্রীতদাস পর্যন্ত নানা কথা ও কাহিনির রঙিন দৃশ্যপট এবং তার সঙ্গে বিক্রেতা পক্ষের আহবান কেবলই প্রলুদ্ধ করতে থাকে। তারপরেও শ পাঁচেক ঈজিপশিয়ান পাউন্ডের বিনিময়ে সবচেয়ে ছোট আকারের চিত্রিত প্যাপিরাস সংগ্রহ করা দুঃসাধ্য বলেই শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে পড়লাম। শেষতক দেখা গেল বাহরাইন মরোক্কো তো বটেই, দুবাইওয়ালারাও দিরহাম খরচ করে কাগজ কিনতে রাজি নয়। মোস্তফার আধাঘণ্টার ব্যর্থ মিশন শেষে গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো লুক্সরের পথে।

রাতের লুক্সরের পথে পথে জ্বলে উঠেছে সন্ধ্যাবাতি। নীল নদের পূর্ব তীর ধরে এক পাশে নদীকে রেখে আমরা শহরের দিকে এগোতে থাকলে ক্রমেই আলোর উজ্জ্বলতা এবং রঙের বৈচিত্র্য বাড়তে থাকে। আলো ঝলমলে বিপনী বিতানগুলো তাদের পশরা সাজিয়ে বাইরে নিয়ন সাইন জ্বালিয়ে আকর্ষণ সৃষ্টি চেষ্টা করলেও ক্রেতার তেমন ভিড় নেই। নীলনদের পশের ফুটপাথে মাথা ভর্তি সবুজ পাতার সারি সারি গাছ এবং ছোট ছোট ছাউনি দেখে নীলের তীর ধরে হাঁটতে ইচ্ছে করে। কিন্তু নদীর পাড়ে পায়ে চলার পথেও তেমন চলাচল চোখে পড়ে না। মিশরীয় তরুণ তরুণীরা কি দুদণ্ড অবসর কাটাতেও এ মুখো হয় না! শহরের পথে ধীর গতির অলস টাঙ্গা এবং মধ্য গতির গাড়ির পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে ফারাও যুগের সারি সারি স্তম্ভ, প্রাচীন ভবনের ধ্বংসাবশেষ এবং পাথরের স্তূপ দেখে লামিয়ার কথার সত্যতা আরও একবার বুঝতে পারি। লুক্সর শহরটা আসলেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত মিউজিয়াম।

আধুনিক লুক্সর শহরের প্রাণকেন্দ্রের লুক্সর মন্দিরটি মিশরীয় ভাষায় ‘ইপেত রিসাইত’ নামে পরিচিত, যার অর্থ দাঁড়ায় দক্ষিণের পবিত্রভূমি! যুগে যুগে পবিত্র ভূমি, পবিত্র পীঠ বা পবিত্র উপাসনালয়ের স্থান বদলেছে, সংজ্ঞাও বদলে গেছে। কিন্তু লুক্সর এখনো পবিত্র তো বটেই! তা না হলে শতকরা নব্বই ভাগ সুন্নি মুসলমানের দেশে ফেরাউনের পবিত্র মন্দির এখনো এতো যত্নে এতোটা সতর্কতার সঙ্গে কেউ সংরক্ষণ করে! ফারাও যুগে একটি বার্ষিক উৎসব ছিল এই পবিত্র মন্দিরের প্রধানতম আকর্ষণ। উৎসবের সময় আমুন, মুত ও খনসুর মূর্তি এবং স্ফিংসের সারি কর্নাক থেকে লুক্সরে এনে জড়ো করা হতো। সাধারণত নীল নদের প্লাবনের সময় মূর্তি স্থানান্তরের কাজ করা হলেও সেই অযান্ত্রিক যুগে পাথরের বিশাল মূর্তিগুলো কিভাবে বয়ে আনা হতো, ভাবতেও অবাক লাগে! সারা মিশরের সবগুলো সংরক্ষিত পুরাকীর্তির মধ্যে লুক্সর মন্দিরের সংরক্ষণ কাজ সম্ভবত সবচেয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। তিন হাজার বছর আগের বিস্তৃত অবকাঠামো, সারি সারি দীর্ঘ স্তম্ভ, সুবিশাল মূর্তি এবং চমৎকার খোদাই ও রিলিফের কাজ এখনো পর্যটকদের বিস্ময় জাগায়। লুক্সরের মন্দির না দেখে দেশে ফিরে গেলে আসলে মিশর ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

আমাদের বাহন এসে লুক্সর মন্দিরের প্রবেশ পথে এসে থামলে আমরা নেমে যাই। অন্য সকল প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় যেমন ভেতরে প্রবেশের আগে একটা দীর্ঘ চত্বর দেখেছি তেমন কোনো উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ এখানে নেই। হতে পারে শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে বলে বাড়তি জায়গা বের করা সম্ভব হয়নি। কাজেই মোস্তফা টিকেট নিয়ে আসার পরে পায়ে হাঁটার কোনো প্রয়োজন হলো না। আমরা সরাসরি মন্দিরের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। ফ্লাড লাইটের উজ্জ্বল আলোয় চারিকি ঝকঝক করছে। তবে সংস্কার কাজের জন্য ভেতরের পায়ে চলার পথের অনেকটাই প্লাস্টিকের চাদরে মোড়া আবার কোথাও পথ বন্ধ করে ডাইনে বাঁয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা দল বেধে ঢুকলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যে যার মতো এগোতে থাকি। মূল মন্দিরের বিশাল তোরণ পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশের পরে আমার কানে আসে কোরআন থেকে তেলাওয়াতের সুর। দুপাশে দ্বিতীয় রামেসেসের প্রকাণ্ড প্রস্তর মূর্তি রেখে আরও সামনে এগোলে সুরেলা কণ্ঠে কোরআনের পরিচিত সুরার আবৃত্তি স্পষ্ট হতে থাকে।

কোরআন তেলাওয়াতের উৎস খুঁজতে এদিক সেদিক তাকিয়ে চোখে পড়ে এক জায়গায় মন্দিরের একটি অংশে ঢুকে পড়েছে মসজিদ। উঁচু মিনার আলোকমালায় সাজানো আর সেখান থেকেই ভেসে আসছে তেলাওয়াতের সুর। নুবিয়া থেকে বয়ে আনা বেলে পাথরে নির্মিত লুক্সর মন্দিরে চারিদিকে ইটের তৈরি দেয়াল ঈশ্বর এবং মানুষের জগৎকে পৃথক করে রেখেছিল। সম্ভবত মিশরে ইসলামের আবির্ভাবের পরে গড়ে উঠেছিল মসজিদ আর তখনই সেই আভিজাত্যের দেয়াল ভেঙে মন্দিরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে মসজিদ। মানুষের প্রার্থনার জন্যে নির্মিত হলেও এটিও তো আসলে ঈশ্বরেরই ঘর। ফারাও দেবতাদের প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ার পরে ইসলামের পতাকাবাহীরা যে পুরো মন্দিরে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়নি সে জন্য পুরো মানব সভ্যতা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

তবে মন্দিরটি প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সকল ভাব গাম্ভীর্য এবং বিশালতা নিয়ে নির্মিত হলেও লুক্সরের মন্দিরটি কোনো বিশেষ সম্রাট বা দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত নয়, বরং ফারাও রাজত্বের পুনরুত্থানকে মহিমান্বিত করতেই এটি নির্মিত হয়েছিল। অনেক অনেক সম্রাটের অভিষেক হয়েছিল এই মন্দিরে, হয়তো কখনো তা বাস্তবে আবার কখনো কেবলই ধারণায় কল্পিত আনুষ্ঠানিকতায়। অনেকেই দাবী করেন আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটকেও মুকুট পরানো হয়েছিল এখানে লুক্সরের মন্দিরে। কিন্তু বাস্তবতা হলো তিনি কখনোই প্রাচীন নগরী মেমফিস অর্থাৎ বর্তমানের কায়রো শহরের দক্ষিণে আসেননি।

দ্বিতীয় রামেসেসের অতিকায় মূর্তির পায়ের কাছে দাঁড় করিয়ে যখন আমার সফর সঙ্গিনীর ছবি তোলার চেষ্টা করছি তখন একজন জোব্বাধারী একাধিকবার ইশারা করে আমাদেরকে একটু বাঁ দিকে সরে ভেতরের দিকে এসে ছবি তোলার জায়গা দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। এই জোব্বাধারীরা আর্কিওলজিক্যাল সাইটের এক ধরনের নিরাপত্তা প্রহরী। রামেসেসের পায়ের কাছে রাতের অপর্যাপ্ত আলোর কারণে ভাবলাম যাই দেখি জোব্বাধারী নির্দেশিত জায়গায়। জায়গাটা আরও বেশি অন্ধকার বলে ছবি তোলার তো প্রশ্নই ওঠে না, কিন্তু রাজ প্রহরী এবারে তার হাতের বৃদ্ধঙ্গুলি এবং তজর্নীতে ঘষা দিয়ে ইশারায় কিঞ্চিত বখশিশ দাবী করে বসলো। জায়গাটা আলো আঁধারি, তাই তাড়াতাড়ি আলোয় এসে বাংলায় বললাম, ‘তোমার উদ্দেশ্য মহৎ হলে কিছু বখশিশ দেওয়া যেতো, কিন্তু তুমি লোকটা খুব সুবিধার না।’ এরপরে দ্রুত তোরণ পার হয়ে পৌঁছলাম পরবর্তী প্রাঙ্গণে।

প্রাচীন মিশরের অন্যতম প্রধান স্থপতি ফারাও তৃতীয় আমেন হোটেপ লুক্সর মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন। পরবর্তী ফারাও বংশধরদের মধ্যে তুতেনখামেন এবং হোরেমহেব নির্মাণ এবং সম্প্র্রসারণে যুক্ত থাকলেও কাজটি সম্পন্ন করেছেন আবার সেই দ্বিতীয় রামেসেস। সম্রাট তাঁর দীর্ঘ রাজত্বকালে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছেন, নতুন নির্মাণ করেছেন, পুরাতনের সংস্কার করেছেন সন্দেহ নেই। তবে তিনি একই সঙ্গে নিজের বীরত্ব, খ্যাতি ও গৌরবগাথা ইতিহাসে যুক্ত করার আকাক্সক্ষা থেকে বিদ্যমান অনেক মূর্তি ও পুরোনো ুনির্মাণ থেকে অন্যদের হটিয়ে দিয়ে নিজের মূর্তি পুনঃস্থাপন করেছেন। ফলে মূর্তি, দেয়াল চিত্র এবং খোদাইয়ের কাজের প্রায় সবটা জুড়েই আছেন দ্বিতীয় রামেসেস। অর্থাৎ ক্ষমতা হাতে পেলে পুরাতন স্থাপনা, সড়ক, সেতু কিংবা মাঠ ময়দানের নাম বদলে দেওয়া বা পুরোনা কীর্তিমানদের ভাস্কর্য সরিয়ে দিয়ে নিজেদের অহংকারের ইতিহাস তুলে ধরার যে সংস্কৃতি চারিদিকে দেখা যাচ্ছে, হাজার বছর আগেও তা বেশ প্রচলিত ছিল বলেই মনে হয়।

লুক্সরের মন্দিরের ভেতরে পুরো চত্বর জুড়ে অস্থায়ী কিছু নির্মাণ কাজ, বা আরও স্পষ্ট করে বললে বলা যায় সাজসজ্জার কাজ চলছে। কাঠের কাঠামো এবং হার্ডবোর্ড ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে তোরণ, আঙ্গিনা জুড়ে পাতা হয়েছে ঢাকনা দেওয়া বিলাসবহুল কুরসি। রাতেও কাজ চলছে বলে মিস্ত্রিদের হাতুড়ি ঠোকাঠুকির শব্দে কারো কথাই ঠিক শোনা যায় না। তাই রানা ভাই যখন বললেন, ‘সিসি আসছেন, তাই সাজ সাজ রব’ কথাটা প্রথমে বুঝতেই পারলাম না। এরপর রানা ভাই কাছে এসে খোলাসা করে বললেন,ও লুক্সর থেকে কর্নাকের প্রাচীন সড়ক সংস্কারের পরে নতুন করে উদ্বোধন করতে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ সাঈদ হুসেন খলিল এল সিসি মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ সাঈদ হুসেন খলিল এল সিসি লুক্সর আসবেন, তারই প্রস্তুতি চলছে।’ নামের বাহার দেখে মনে হলো প্রেসিডেন্ট হবার উপযুক্ত নামই বটে! যে কোনো মহামহিমের শুভাগমন উপলক্ষে আমাদের দেশে যেমন তোরণ, মঞ্চসজ্জা, ব্যানার ফেস্টুন সামিয়ানা এবং চামচা মোসাহেবদের সদর্প পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে, এ্যারাব রিপাবলিক অফ ঈজিপ্টই বা তার ব্যতিক্রম হতে যাবে কেন!

লুক্সরের মন্দিরটি ফারওদের নব রাজত্বের যুগের অনেক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। বিশাল হল ঘর, তিন দিক বেষ্টিত স্তম্ভের সারি, হল পেরিয়ে অপরিসর প্রবেশ দ্বারের ওপারে পাথরের চওড়া দেয়াল ঘেরা অভ্যন্তরীন কক্ষ। দেয়াল এবং স্তম্ভগুলোর চিত্রমালায় ফুটে উঠেছে সে যুগের বীরত্বগাথা, নানা যুদ্ধ জয়ের কাহিনি। আমরা একের পর এক ছোট বড় নানা প্রাসাদ প্রাকার অতিক্রম করে শেষ প্রান্তে পৌঁছে দেখতে পাই পিলার ঘেরা প্রাসাদের বাইরেও সাজানো রয়েছে হাজার হাজার বছর আগের ছোট বড় ভাস্কর্যের ভগ্নাবশেষ, চিত্রিত প্রস্তর খণ্ডের ছোট বড় টুকরো ও শিলালিপি। অপর্যাপ্ত আলো এবং সময়ের স্বল্পতার জন্যে এই অবহেলিত অংশ পুরোটা ঘুরে দেখা সম্ভব হলো না। মোস্তফার বেধে দেওয়া সময় অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তারপরেও বাইরে এসে দুই দুবাইবাসীর জন্যে গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে হলো আরও মিনিট দশেক।

চলবে...

এসএ/

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১১

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১০

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad

রেকর্ড এডিট দাবি, দশ লাখ টাকার চেক নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা

দশ লাখ টাকার চেক নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁয় বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল আলম খানকে হত্যার হুমকি দিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন সৌখিনের বিরুদ্ধে।

বুধবার (৬ নভেম্বর) রাত থেকে ওই দুই নেতার কথোপকথনের ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এর আগে উপজেলার গোবরচাঁপা বাজারে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ এনে ৫ নভেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল আলম খানসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে স্থানীয় থানায় মামলা করেন বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন সৌখিন। এ মামলায় আরও ১২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে "এডিট করা ফেক মোবাইল কল" সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে তার এবং দলীয় ইমেজ ক্ষুণ্ন করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাময়িক বহিষ্কৃত ওই বিএনপি নেতা।

রবিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে বদলগাছী সাংবাদিক সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন সৌখিন।

এসময় তিনি বলেন, বিগত ২০১৩ সালে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলকভাবে আওয়ামী লীগ দুইটি মামলা করে। একটি বিষ্ফোরক ও একটি দ্রুত বিচার আইনে। আমাকে গ্রেফতার করা হয় ক্লিন হার্ট অপারেশনে। সেখানে আমাকে অনেক নির্যাতন করা হয় শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতি করার জন্য। আমি জানতে পেরেছি যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম খানের সাথে আমার একটি কল রেকর্ড প্রকাশিত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যা সম্পূর্ণ এডিট করা ফেক মোবাইল কল। কল রেকর্ডটি আগস্ট মাসের।

প্রকৃত তথ্য এই যে, শামসুল আলম খান ইতঃপূর্বে তার একটি ব্যাংক চেক গচ্ছিত রেখে আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করেন। যার নম্বর: CD /A- ২৮৮৫০৯২ (ডাচ বাংলা ব্যাংক)। এভাবে তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আরও অনেকের কাছ থেকেই তিনি টাকা ধার করেছেন বলে লোকমুখে জেনেছি। অতি সম্প্রতি জানতে পারি যে, তিনি কিছু কিছু পাওনাদারদের ধারের টাকা পরিশোধ করছেন। এ কারণে আমি তার নিকট আমার পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য কল করেছিলাম। এছাড়া আমার পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য তার সামনাসামনি হলে সে আমাকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার ভয় দেখাতো। আমি গত ২০১৪ সালের ৫নভেম্বর আওয়ামী লীগের বিস্ফোরক মামলার বিবাদী হওয়ার কারণে আগস্ট মাসের কল রেকর্ডটি নতুন করে "এডিট" করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। আগস্ট মাস থেকে এখন পর্যন্ত শামসুল আলম খানের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি।

এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, পাওনা সংক্রান্ত ও কল রেকর্ডটি এডিট করে যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেটা আবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশও করা হয়েছে। শুধুমাত্র আমাকে এবং আমার দল বিএনপিকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্যই ফেক কল রেকর্ডটি ছেড়ে দেওয়া দেয়। মর্যাদাহানি করার জন্যই তারা এই মিথ্যা এবং বানোয়াট রেকর্ড ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মামলার বিবাদী হওয়ার কারণেই আগস্ট মাসের আমার টাকা সংক্রান্ত রেকর্ডটি ছেড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং সেই সাথে দুষ্কৃতিকারীদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল আলম খান বলেন, ঘটনার দিন নওগাঁয় আদালতে একটা কাজে গিয়েছিলাম। ওই সময় একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। নিজেকে চাংলার সৌখিন পরিচয় দিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা দাবি করা হয়।

Header Ad

পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮২

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবারপাখতুনখাওয়া প্রদেশে শিয়া ও সুন্নি মতাবলম্বীদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে পৌঁছেছে। গত তিন দিন ধরে চলা এই সহিংসতায় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ১৫৬ জন।

রোববার (২৪ নভেম্বর) প্রদেশের স্থানীয় এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।

আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সুন্নি ও শিয়া মুসলমানদের মাঝে গত কয়েক মাস ধরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) প্রদেশটিতে শিয়া যাত্রীবাহী গাড়িতে বন্দুকধারীদের হামলায় ৪৩ জনের প্রাণহানির পর নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছেন, গত ২১, ২২ ও ২৩ নভেম্বরে শিয়া-সুন্নিদের সংঘর্ষ ও গাড়িতে হামলার ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে পৌঁছেছে। এই সংঘাতে ১৫৬ জন আহত হয়েছেন।

শনিবার প্রদেশের কুররাম জেলার প্রায় ৩০০ পরিবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ওই দিন গভীর রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় হালকা ও ভারি অস্ত্র নিয়ে সংঘাতে জড়িয়েছেন স্থানীয়রা। তবে রোববার সকালে নতুন করে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় ওই কর্মকর্তা বলেছেন, কুররাম জেলাজুড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থগিত করা হয়েছে এবং প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অতীতে খাইবার পাখতুনখোয়ার এই জেলা আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ছিল; যেখানে বছরের পর বছর ধরে চলা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

গত মাসে কুররাম জেলায় সাম্প্রদায়িক সংঘাতে তিন নারী ও দুই শিশুসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গত জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে একই ধরনের সংঘাতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

Header Ad

হত্যা মামলায় গ্রেফতার ডিসি মশিউর ও এডিসি জুয়েল বরখাস্ত

মশিউর রহমান ও জুয়েল রানা। ছবি কোলাজ: ঢাকাপ্রকাশ

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান ও ডিএমপির সাবেক এডিসি জুয়েল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার।

রোববার (২৪ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখার সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনের সই করা পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ডিবির সাবেক ডিসি (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ও বর্তমানে পুলিশ সুপার হিসেবে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত মশিউর রহমানকে নিউমার্কেট থানার মামলায় গ্রেফতার করে ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেহেতু, মশিউর রহমানকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন) এর ৩৯ (২) ধারার বিধান অনুযায়ী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।

আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগের এডিসি (সুপারনিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত)) জুয়েল রানাকে নিউমার্কেট থানার মামলায় গ্রেফতার করে ১৮ অক্টোবর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সেহেতু, জুয়েল রানাকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন) এর ৩৯ (২) ধারার বিধান অনুযায়ী ১৮ অক্টোবর থেকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন জুয়েল রানাকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন।

এর আগে, ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতাকে হত্যার পর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

গত ২ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থেকে ডিবি পুলিশ কাফীকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতাকে হত্যার পর আগুনে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ রয়েছে।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

রেকর্ড এডিট দাবি, দশ লাখ টাকার চেক নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা
পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮২
হত্যা মামলায় গ্রেফতার ডিসি মশিউর ও এডিসি জুয়েল বরখাস্ত
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে রেকর্ড মৃত্যু, শনাক্ত আরও ১০৭৯
আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার পান্ত
আরও এক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান
সৌদি আরবে এক সপ্তাহে ২০ হাজার অবৈধ প্রবাসী গ্রেপ্তার
আমাদের নিয়ত সহি, জাতিকে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই: সিইসি
৫ বিসিএস থেকে নিয়োগ পাবেন ১৮ হাজার ১৪৯ জন
শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ নির্বাচন কমিশনার
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে থানায় জিডি করলেন নওশাবা
আইইউটির ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত
বাংলাদেশ-বেল‌জিয়ামের রাজনৈতিক সংলাপ আজ
রাজধানীতে সিলিন্ডার গ্যাস বিস্ফোরণে শিশুসহ দগ্ধ ৭
জোড়া উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করলো বাংলাদেশ
সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন আর নেই
এশিয়া কাপ খেলতে দেশ ছাড়লো বাংলাদেশ
আমাকে স্যার বলার দরকার নেই, আমি আপনাদের ভাই : উপদেষ্টা নাহিদ
দুই দিনের ব্যবধানে আবারও বাড়ল সোনার দাম
বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস