রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১০

একদিন একরাত আসোয়ানে নীল নদের উপরে ভেসে থাকলেও ফিলাই এবং আবু সিম্বেলের পুরাকীর্তি এবং শহরের প্রধান সড়ক ছাড়া তেমন কিছুই দেখা হয়নি। আসোয়ান ছেড়ে যাবার পরেই প্রথম দেখলাম নীলের তীরে বহুতল ভবন, সুদৃশ্য মসজিদ এবং সবুজ গাছপালার ওপারে শহরের সীমানা ছাড়িয়ে  দূরে ধূসর পাহাড়ের সারি। আসোয়ান থেকে জলপথে লাক্সরের দূরত্ব দুশ কিলোমিটারের কিছু বেশি। 

ছবি: নীলনদ থেকে আসোয়ান

নীলের উৎপত্তি নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। লেক ভিক্টোরিয়া নাকি লেক অ্যালবার্ট, কোথায় থেকে মূলধারা প্রবাহিত হয়েছে, তা খুঁজে বের করতে পণ্ডিতেরা কয়েক শতক থেকেই বিস্তর ঘোরাঘুরি এবং গবেষণা করে চলেছেন। এতোসব খোঁজ খবর না নিয়ে সোজাসুজি বলতে পারি আমরা এখন যাচ্ছি দক্ষিণ থেকে উত্তরে ভূমধ্য সাগরের দিকে, সেখানেই শেষ পর্যন্ত নীল নদের বয়ে চলার পরিসমাপ্তির ঘটেছে। সারা জীবন পদ্মা মেঘনা যমুনাসহ দেশের সকল ছোট বড় নদীকে উত্তর থেকে দক্ষিণে বয়ে যেতে দেখেছি। অন্য অনেক দেশেই দানিয়ুব, ভ্লাতাভা, রাইন কিংবা হাংগাং কোনো দিকে প্রবাহিত হচ্ছে ভেবে দেখিনি, ফলে আমার ধারণা ছিল পৃথিবীর সব নদীই বোধয় দক্ষিণে বয়ে যায়। কিন্তু এই প্রথম উত্তরে ভাটির দিকে ভেসে যাচ্ছি। 

ডাইনিং হলে টেবিলে বসে খেতেই দেখছিলাম নদীপারের দৃশ্য। শহর থেকে দূরে সরে যেতেই খেজুর গাছের সারি, ফসলের ক্ষেত এবং অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ঝোপঝাড় লতাগুল্মের জঙ্গল নীল নদের দুই পাড় সবুজে ছেয়ে রেখেছে। আমাদের দেশের নদীর মতো পাড়ভাঙা ঢেউ নেই, ফলে পাড়ে কোনো ভাঙনের চিহ্ন নেই। নদী তীরে ধু ধু বালুর চর চোখে পড়ে না। তবে কোথাও কোথাও চারিদিকে জল পরিবেষ্টিত চরভূমি জেগে আছে, সেখানেও লক্ষ করা যায় সবুজের সমারোহ। নদীর কূল ঘেষে ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের ডগায় অজ্র ফুল ফুটে আছে। কাশফুলের মতো দীর্ঘ সারিতে সবুজের ডগায় ফোটা ফুল আকারে ছোট হলেও সুন্দর এই পুষ্পসম্ভার নদীর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কোথাও ঘন বন বিস্তুত হয়ে বহুদূর চলে গেছে আবার কোথাও ঘাসে ভরা মাঠে গরু ছাগল, এমন কি গোটাকয়েক ঘোড়া মনের সুখে কচি ঘাস চিবিয়ে পেট ভরাচ্ছে। পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া জাহাজের দিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ছোট জলযান ফালুকার যাত্রীরাও হয়তো ঈর্ষাবশত আমাদের বড় জাহাজের যাত্রীদের দিকে ফিরে তাকায় না। তবে বড় কোনো জাহাজ পাশ দিয়ে যাবার সময় যাত্রীরা হাত নাড়ে, তাদের হৈ চৈ শোনা যায়।

ছবি: কোম ওম্বো মন্দির

প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা ভেসে চলার পরে হঠাৎ করেই চোখের সামনে দেখা দিল কোম-ওম্বো মন্দির। ফারাও রাজত্বকালের অন্যান্য মন্দিরের তুলনায় কোম-ওম্বোর তফাৎ হলো এটি সম্রাট  বা সম্রাজ্ঞীর উদ্দেশ্যে নয় বরং উৎসর্গ করা হয়েছিল কুমির দেবতার উদ্দেশ্যে। কোম-ওম্বো কথাটির আভিধানিক অর্থ ‘সোনার পাহাড়’। টলেমির রাজত্বকালে আসোয়ান ও এডফুর মাঝখানে কোম ওম্বো নগরী অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। তবে পরবর্তী সময়ে বন্দরটি তার সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। ঘাটের সাথেই পুরাকীর্তি কোম-ওম্বো মন্দির। কাজেই টুইয়া ঘাটে ভেড়ার পরপরই নেমে পড়েছিলাম। আমাদের নতুন গাইড মোস্তফা যখন শিক্ষার্থীদের ইতিহাসের পাঠ দিচ্ছেন, তখন কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখলাম জাহাজের অনেকেই লাইন ধরে প্রত্ম এলাকায় ঢুকে পড়ছে। আমি ঢুকতে গিয়ে বাধা পেলাম, টিকেট প্লিজ! আগে খেয়াল করিনি, সবার হাতেই ভেতরে যাবার ছাড়পত্র। এখানে ঢুকতেও টিকেট কিনতে হবে নিশ্চয়ই। আবার কয়েক ধাপ নেমে টিকেট ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি, টিকেট কিনে ঢুকে পড়বো, নাকি গাইডের জন্যে অপেক্ষা করবো, এই সময় মোস্তফা তার দলবলসহ হাজির। মোস্তফা নিজেই আমাদের হয়ে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করার পরে বুঝলাম, এটির আমাদের প্যাকেজের অন্তর্ভূক্ত, অর্থাৎ কুমিরের মন্দির দেখতে এসে একশ চল্লিশ পাউন্ড দিয়ে টিকেট কিনে ফেলাটা নেহায়েতই নির্বোধের কাজ হতো।  

ছবি:পিলারের ফাঁকে চাঁদ

কোম-ওম্বো মন্দির চত্বরে সন্ধ্যাবাতি জ্বলে উঠেছে। বিভিন্ন কোন থেকে সুপরিকল্পিতভাবে আলো ফেলে দর্শকের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়েছে পুরো প্রত্ম-এলাকা। মোস্তফা তার আরবি ভাষাভাষিদের পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বয়ান দিতে শুরু করে আমরা ডান দিকের বিপুল স্তম্ভগুলোকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগোতে শুরু করলাম। কোম-ওম্বোর বর্তমান মন্দিরটি  যিশুখ্রিস্ট জন্মের ২০৫ থেকে ১৮০ বছর আগে সম্রাট পঞ্চম টলেমির সময়কালের। রোমানদের রাজত্বকাছে কিছু সংস্কারও করা হয়েছে। এরও অন্তত হাজারখানেক বছর আগে রাজা তৃতীয় তুথমোসিস এবং রাণী হাতসেপসুর শাসনামলে এই জায়গাতেই আরো একটি মন্দির ছিল বলে জানা গেছে। তবে ধ্বংসাবশেষের অস্তিত্ব থাকলেও আজকাল গবেষকরা ছাড়া কেউ আর তার খোঁজ করে না। কোম-ওম্বোর দ্বৈত মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো এর দুপাশে বিস্তৃত পুরোপুরি সিমেস্ট্রিক্যাল ডিজাইন। প্রাচীন মিশরিয় স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য অনুসারে কেন্দ্রীয় অক্ষের দুপাশে একই ধরনের হলঘর এবং কক্ষের অবস্থান। এর কারণ হলো মন্দিরটি ব্যবহার হতো দুটি দেবতার উপসানায়। একদিকে কুমির মাথাওয়ালা দেবতা সোবেক আর অন্য দিকে রাজ্যের প্রথম আরাধ্য দেবতা বাজপাখির মাথাওয়ালা হোরাস দ্য এলডার। এ ছাড়া চাঁদের দেবতা খনসু এবং দেবী হাথরও জায়গা করে নিয়েছেন মন্দিরে, তবে তাদের অবস্থান সম্ভবত গৌণ! 

ছবি: সুদৃশ্য ম্যূরাল 

আমরা মূল হলঘরের ডাইনের পথ ধরে চিত্রিত দেয়ালগুলো ধরে সামনে এগিয়ে যাই। এক জায়গায় ছোট্ট প্রকোষ্ঠ লোহার শিক দিয়ে ঘেরা, তবে ভেতরে দৃশ্যমান কিছু নেই। হয়তো কখনো কোনো দেবতা বা দেবী মূর্তি ছিল। সেখান থেকে বাঁ দিকে ঘুরে আরো দু-তিনটি একই ধরনের ছোট ছোট কক্ষ দেখে হলঘরের পেছন দিক থেকে ভেতরে ঢুকে পড়ি। চমৎকার আলোক বিন্যাসের কারণে সব জায়গা থেকেই পুরো ভবন, বিশাল স্তম্ভের সারি এবং বিশেষ করে দেয়ালে ও পিলারে সুক্ষ্ম সুদৃশ্য রিলিফের কাজ খুব ভালো দেখা যায়। ভবনের ভেতরটা আলোকিত থাকলেও উপরের দিকে তাকালে চোখে পড়ে পিলারের ফাঁকে গাঢ় নীল আকাশে আলো ছড়াচ্ছে সপ্তমীর চাঁদ। 

ছবি: চিত্রিত পিলার ও দেয়াল

মন্দিরের মাঝখানের অংশ দশটি সুদৃশ্য চিত্রিত স্তম্ভ দিয়ে ঘেরা একটি চত্বর। এখানে দেয়ালগুলোতে সংরক্ষিত রিলিফ এবং ম্যূরালে  সে যুগের ইতিহাস, নানা অকথিত কথা এবং দৃশ্য উৎকীর্ণ করা। রিলিফের কাজে প্রধান বিষয়বস্তু হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে দেবতাদের উদ্দেশ্যে টলেমিক সম্রাটদের নৈবেদ্য উপহার। দৃশ্য সজ্জায় সিলিংগুলোও বাদ যায়নি। স্তম্ভ শীর্ষে চোখে পড়ে ফুলের পাপড়ি কিংবা পাতার কারুকাজ এবং সিলিংয়ে উড়ন্ত শকুনির পেইন্টিং। রাজকীয় প্রবেশ পথের পাশে বাহান্ন লাইনে দীর্ঘ ইতিকথা লেখা আছে হাইরোগ্লিফিক লিপিতে। সে ভাষা পড়ে কার সাধ্য! অতএব আমরা ইতিহাসের পাঠ বাদ দিয়ে ডান দিকের দেয়ালে বাজপাখির মাথাওয়ালা হোরাস এবং বাঁ দিকের দেয়ালে কুমিরের মাথাওয়ালা সোবেকের নানা রূপ দেখে সামনে এগেয়ে যাই। এক সুন্দরী তরুণী চত্বরের মাঝখানে বর্গাকার বেদীর চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছিল। আসলে দেখছিল নাকি কোনো মন্ত্র উচ্চারণ করছিল জানি না। এইসময় মোস্তফা কোথাও থেকে তার দুই দুবাই এবং দুই মরোক্কো সঙ্গে করে এসে হাজির। একটি দেয়ালে লম্বা সারিতে উৎকীর্ণ করা ফারাও যুগের ক্যালেন্ডার দেখিয়ে সে তার ইতিবৃত্ত বর্ণনা করছিল। কিন্তু মোস্তফার আরবি উচ্চারণের ইংরেজি আর কিছুটা অতিকথনের জন্য তার বেশিরভাগ কথাই আমার মাথায় ঢোকেনি। 

ছবি: নিলোমিটার

প্রফেশনাল গাইড হলেও মোস্তফার কথায় আস্থা রাখা কঠিন। মন্দিরের বাইরে পূর্ব দিকের চত্বরে চৌবাচ্চার মতো একটি বাধানো জলাধারের কাছে দাঁড়িয়ে সে জানালো, ‘এই যে এটাই হচ্ছে ক্লিপেট্রার সুইমিংপুল। কোম-ওম্বোতে থাকাকালীন এখানেই সাঁতার কাটতেন সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রা।’ সে এতোটাই নিশ্চয়তার সাথে কথাটা বলছিল যেনো ক্লিওপেট্রার জলকেলির সময় মোস্তফা স্বয়ং সেখানে উপস্থিত ছিল। তার কথিত সুইমিংপুলের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ দেখে এটাকে বড়জোর বাথটাব বলা যেতে পারে। রানাভাই বিস্তর পড়াশোনা করা মানুষ। তিনি ধরে বসলেন, ‘ক্লিওপেট্রা কি তার জীবদ্দশায় কখনো কোম-ওম্বোতে এসেছিলেন? কবে কোন রাজত্বের আমলে?’ আসলে ক্লিওপেট্রা দ্য সেভেন্থ টলেমি রাজবংশের কন্যা হয়েও কখনো তাঁর আদি পিতৃভূমিতে এসেছিলেন কিনা সে সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে জনপ্রিয় মিথ হিসাবে স্থানীয় গাইডেরা ক্লিওপেট্রার কাহিনি বলতে উৎসাহিত বোধ করে আর পর্যটকেরাও আনন্দ পান। ফলে মোস্তফার কাছে কোনো স্বদুত্তর পাবার আশা না করে আমরা মন্দিরের উত্তর পশ্চিম কোনার দিকে এগিয়ে গেলাম।     উত্তর পশ্চিম কোণে রয়েছে একটি বৃত্তাকার কুয়া যা নীল নদের জওর স্তর পরিমাপের জন্য নিলোমিটার হিসাবে ব্যবহার করা হতো। নীলের বন্যার সময় এই প্রযুক্তি প্রাচীন মিশরে ফসল উৎপাদন ও সেচ ব্যবস্থানার ক্ষেত্রে সাফল্যের সাথে কাজে লাগানো হয়েছে। সে যুগে নীল নদের পানির স্তর দেখে বন্যা খরার সময় ফসলের উৎপাদন অনুমান করে কৃষকদের উপর কম বা বেশি ট্যাক্স আরোপ করা হতো। রানাভাইয়ের তথ্য থেকে বোঝা গেল নিলোমিটার সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই পড়াশোনা করে এসেছেন। কাজেই মোস্তফার বিবরণ শোনার চেয়ে কূপের চারিদিকে ঘুরে এবং ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে এর কর্মপদ্ধতি বোঝার বৃথা চেষ্টা করে কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা বাইরের পথে পা বাড়ালাম।

মন্দির চত্বরের বাইরে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় দিকের চলাচলের পথে দেয়ালেও রয়েছে মিশরীয় এবং রোমান দেবতাদের রিলিফের কাজ। এ সব কাজ ভেতরের সুক্ষ্ম ও শৈল্পিক কাজের তুলনায় অনেকটা সাদামাটা, তাছাড়া অনেক কাজই মনে হয় অসমাপ্ত। বাইরের উত্তর পশ্চিম দেয়ালে দেবতার চরণতলে হাঁটুগেড়ে বসা এক রোমক সম্রাটের অর্ঘ্য নিবেদনের স্বাভাবিক চিত্রের পাশাপাশি কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামের দৃশ্য বিস্ময় সৃষ্টি করে। এইসব দৃশ্যচিত্র থেকে খ্রিষ্ট জন্মের কয়েক শত বছর আগের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতোটা উন্নত ছিল এবং এই উৎকর্ষ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের গুরুত্ব অর্জন করেছিল তা ধারণা করা যায়। 

ছবি: কুমিরের জাদুঘরে 

 

মূল কোম ওম্বো টেম্পল থেকে বেরিয়ে যাবার মুখেই হাতের ডাইনে মিউজিয়াম অফ ক্রোকোডাইলস। পশু-পাখির চিড়িয়াখানা বা মমি করা জীবজন্তু দেখার ব্যাপারে আমার তেমন আগ্রহ নেই। তারপরেও কুমিরের জাদুঘরের কুমির তো আর যে সে কুমির নয়, কুমির দেবতা, তাও আবার আড়াই থেকে তিন হাজার বছরের পুরোনো! জাদুঘরে ঢুকতে ভিন্ন করে টিকেটও কিনতে হবে না, অতএব ঢুকেই পড়লাম ক্রোকোডাইল মিউজিয়ামে। এতোদিন পবিত্র উট এমন কি মহাপবিত্র উটের কাফেলার কখা শুনেছি। এখানে এসে প্রথমবারের মতো পবিত্র কুমিরের দর্শন পেলাম। পরম পূজনীয় কুমির দেবতা  সোবেক মানুষের মনে ভীতি এবং সম্ভ্রম ছড়ানো  অন্যসব দেবতার মতোই ফারাওদের ক্ষমতার প্রতীক। কুমিরের জাদুঘরে পাথর বা ধাতব পদার্থে তৈরি বিভিন্ন নানা আকার আকৃতির কুমিরের সমাবেশ ঘটেছে। কুমির দেবতার সমাধিতে অথবা দেবতার উদ্দেশ্যে নির্মিত মন্দিরের অলঙ্কৃত প্রস্তরফলকে সোবেকের প্রতিকৃতি এবং নিবেদনকারী ভক্ত আশেকানের নামসহ সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা খোদাই করে লেখার রীতিও চালু ছিল। কোম-ওম্বোর মন্দির এবং আশেপাশের এলাকা থেকে উদ্ধার করা শতিনেক কুমিরের মমির মধ্যে থেকে বেশ কয়েকটা এই কুমিরের মিউজিয়ামে ঠাঁই পেয়েছে। 

কুম্ভীর দর্শন শেষ করে আমরা যখন বাইরের চত্বরে এসে দাঁড়ালাম তখন আমাদের নির্ধারিত সময় শেষ, তারপরেও রানাভাইয়ের দেখা নেই। মোস্তফা তাড়া দিচ্ছিল, জাহাজ ছেড়ে যাবার নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, আমরা ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত টুইয়া অপেক্ষা করবে। অবশেষে কুমিরের জাদুঘর থেকে রানাভাই যখন বেরিয়ে এলেন তখন টি-শার্ট, স্কার্ফ এবং চিত্রিত প্যাপিরাসের বিক্রেতারা ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া’ বলে আমাদের ঘিরে ধরলো। আমরাও ‘নো ইন্ডিয়া নো ইন্ডিয়া’ বলে তার পাশ কাটিয়ে জাহাজে উঠে পড়লাম। জাহাজ ছাড়লো আরো অনেক পরে, তখন আমাদের নৈশ্যভোজের সময় হয়ে গেছে। 

 


চলবে...     

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২

ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মধুপুরে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে টাঙ্গাইল-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুর পৌর এলাকার কাইতকাই রূপালী ফিলিং স্টেশনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ধনবাড়ী উপজেলা পৌর এলাকার চরভাতকুড়া গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে সিএনজি চালা হেলাল উদ্দিন (৫৫)। অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তিনি সিএনজি যাত্রী ছিলেন।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে মধুপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. মনজুরুল হক এ বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতে দুর্ঘটনা কবলিত সিএনজি ধনবাড়ীর দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজির চালক ঘটনা স্থলে মারা যান। এ সময় গুরুতর আহত হয় এক যাত্রী।

এরপর তাকে উদ্ধার করে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে রাতেই হাসপাতালে তিনি মারা যায়।

এ ব্যাপারে মধুপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. মনজুরুল হক জানান, নিহত সিএনজি চালকের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

অপরদিকে, অজ্ঞাত ওই যাত্রীর পরিচয় পাওয়া যায়নি, শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন।

Header Ad
Header Ad

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজ ফ্লাইট শুরু আগামী মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল)। ওই দিন ৪১৯ জন সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। হজের প্রথম ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

চলতি বছর ৮৭ হাজার ১০০ জন পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ২০০ জন হজযাত্রী সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮১ হাজার ৯০০ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করবেন।

প্রথম ফ্লাইটটি রাত ২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। হজ ব্যবস্থাপনাকে নির্বিঘ্ন করতে সরকারি পর্যায়ে ১১২ জন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৭৪৩ জন গাইড দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি ৭০ জন মোয়াল্লেম হজযাত্রীদের সার্বিক সহায়তা করবেন।

হজযাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ তিনটি এয়ারলাইনস। ৩১ মে পর্যন্ত হজের ফ্লাইট চলবে। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ১০ জুন এবং শেষ হবে ১০ জুলাই।

পবিত্র হজ উপলক্ষে এ বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালনা করবে ১১৮টি, সাউদিয়া ৮০টি এবং নাস এয়ারলাইনস ৩৪টি ফ্লাইট।

হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা, যা ৯ জিলহজ মসজিদে নামিরা থেকে প্রদান করা হয়। এবারও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে হজের খুতবা, এবং তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হবে ২০টি ভাষায়। 

যেসব ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হবে সেগুলো হলো- বাংলা, ফরাসি (ফ্রেঞ্চ), মালয়, উর্দু, ফারসি, চাইনিজ, তুর্কি, রাশিয়ান, হাউসা, ইংরেজি, সুইডিশ, স্প্যানিশ, সোয়াহিলি, আমহারিক, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, বসনিয়ান, মালায়লাম, ফিলিপিনো এবং জার্মান। 

উল্লেখ্য, ১৪৪৬ হিজরির ৯ জিলহজ (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ৫ জুন) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

Header Ad
Header Ad

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহিদ রাজিতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত এই বন্দরে ঘটে বিপর্যয়টি।

ইরানের জরুরি সেবাবিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বার্তাসংস্থা আইএলএনএ-কে জানান, একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তবে সেগুলোতে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।”

সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট পরিসরে আগুন লাগার পর তা দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম এবং পরিবেশে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনারগুলোর মধ্যে সালফারজাতীয় রাসায়নিক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও কনটেইনারগুলোর সুনির্দিষ্ট উপাদান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, শহিদ রাজি বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজ প্রণালির উত্তরে, বন্দর আব্বাস থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, ফলে এ বন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

টাঙ্গাইলে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২
হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা
ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার