রেদোয়ান মাসুদ
একগুচ্ছ কবিতা
জোছনা রাতের মেয়ে
এই যে শোনো মন ভুলানো জোছনা রাতের মেয়ে
নীল আকাশে রাতের বেলা কেমনে আছো চেয়ে।
চোখের কোণে করছে জ্বলজ্বল মুখে চাঁদের আলো
চুল উড়ছে দমকা হাওয়ায় লাগছে কতো ভালো।
নীল শাড়িটি করছে পতপত হৃদয়ে দেয় দোলা
এমন দৃশ্য কখনো কী মন থেকে যায় ভোলা?
ঠোঁটটি আজ কাঁপছে তোমার অনুভুতির খেলা
দূর আকাশে তাকিয়ে যে চলে যাচ্ছে বেলা।
কানে দুলছে সোনার ঝুমকা নাকের উপর নাকফুল
চেয়ে দ্যাখো নদীর বাকে ফুটে আছে কাশফুল।
কাশফুলের ঐ নরম ছোঁয়ায় হৃদ-মাঝারে ঝড়
এমন দিনে চলো হারাই মেঘনা নদীর চর।
চারিদিকে হাসনা-হেনা ছড়াচ্ছে কী গন্ধ
মন উদাসে চোখ দুটি তাই হয়ে যাচ্ছে বন্ধ।
খুলে দ্যাখো চোখ দুটি আজ দাঁড়ানো কে ঠায়
কার নৌকাতে উঠেছে আজ কে নৌকাটি বায়।
আকাশে নেই মেঘের দেখা তারারা তাই হাসে
উপর থেকে পড়ছে উল্কা কোথায় তেড়ে আসে।
ভয় পেয়ো না ওগো তুমি হাত রেখেছি কাঁধে
উল্কা আসুক বজ্র পড়ুক মরবো দুজন সাধে।
কীর্তিমান
ফুল বলে ওরে ভ্রমর—মধুর কেমন স্বাদ?
ভ্রমর বলে তোর বুকে থেকেই তো মিটাই আহ্লাদ।
ফুল হেসে বলে, মিটাস বলেই তো চাইলাম জানতে
ভ্রমর বলে ওরে বলদ মধুর স্বাদ জানিস না এ কথা পারি না মানতে।
হঠাৎ ফুলটি যখন ছিঁড়ে নিলো বাগানের মালি
ভ্রমর কেঁদে বলে আগে জানলে তোকে দিতাম না গালি।
ফুল কেঁদে বলে মরার সময় একি তুই বললি
ভ্রমর চোখ মুছে বলে মধুর স্বাদ বুঝেছি তুই যখন চললি।
ফুল বলে ওরে গাধা দেশ প্রেমিক খায় না দেশের সম্পদ
ভ্রমর বলে দাও গালি পারি নাই দিতে খেয়েছি রসদ।
ফুল হেসে বলে, আমরা জন্মেছি শুধু দেওয়ার জন্য
ভ্রমর কেঁদে বলে, জানতাম না বলেই তো করি নাই গন্য।
ফুল বলে ওরে ভ্রমর মৃত্যু ডাকছে এবার যাই
ভ্রমর বলে না খেয়ে দিয়েছিস আমাদের তোদের মৃত্যু নাই।
ফুল হেসে বলে, সময় থাকতে বুঝলিনা তবুও নেই কোনো অভিমান
ভ্রমর বলে এজন্যই মৃত্যুর পরেই বেঁচে থাকিস, তোরা কীর্তিমান।
পথিক
পথ হারিয়ে ক্লান্ত পথিক এদিক ওদিক চায়
আশেপাশে আছে কী কেউ যদি পাওয়া যায়।
হঠাৎ করে নীল আকাশে কালো ঘোড়া নাচে
তাইতো দেখে পথিক এবার পালিয়ে যেন বাঁচে।
পথ হারিয়ে এভাবেই সে দিশে হারা আজ
এমন সময় কেনই-বা মেঘ দিলো কালো সাজ।
এরই মাঝে হঠাৎ করে হলো বজ্রপাত
বজ্রপাতের বিকট শব্দে মাথায় পড়লো হাত।
শব্দ শুনে কোথা থেকে যেন কারা এলো
এই বিপদে পথিক এবার মানুষ পেয়ে গেল।
অবশেষে তাঁরা তাকে পথ দেখিয়ে দিলো
বিপদ যেন বিপদ থেকে উদ্ধার করে নিলো।
বিপদে তাই করোনা কেউ পথিকের ঐ ভয়
একটি বিপদ তাড়াতে যে অন্য বিপদ হয়।
হিসেব
ভেঙ্গে গেলে কাঁচের আয়না শব্দ আসে কানে
মনের আয়না ভাঙলে কজন-বা তার খবর জানে।
মনতো থাকে অন্ধ ঘরে চোখে দেখা যায় না
দেখা বস্তুই চিনে না কেউ অদেখার তো দায় না।
যার ভেঙেছে সেই জানে মন ভাঙার কী দায়
জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে সব কয়লা হয়ে যায়।
দেখতে যদি নাইবা পাও তবু রেখো শুনে
ভাঙবে যেদিন তোমার মনে হিসেব নিবো গুনে।