শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা

মোহিনী মা বাবার একমাত্র সন্তান। মোহিনীর বাবা মোহসীন আহমেদ স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। বংশানুক্রমে তারা অভিজাত। তাঁর অর্থবিত্ত আর আভিজাত্যের কাছে নব্য ধনীরা একেবারেই নস্যি। যদিও নব্য ধনীদের হম্বিতম্বি দেখলে মনে হয় মোহসীন সাহেবরা বুঝি ক্ষুদে ব্যবসায়ী। তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েও কখনো টাকার গরম কখনো দেখাননি। খুবই সততার সঙ্গে ব্যবসা করে আসছেন। প্রায় বছরই সেরা ট্যাক্সদাতার পদক পান। মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করেন। নিজ এলাকায় অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন। আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডেও নিজেকে জড়িত রেখেছেন। মোহিনীর মা মনোয়ারা বেগমও সাধারণ মানুষকে সাহায্য করেন। বিপদ-আপদে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান। হৃদয়বান কিংবা আদর্শ মানুষ হিসেবে যদি কেউ পুরস্কার দেয়া হতো তাহলে মোহসীন আহমেদ পেতেন। অবশ্য সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি এবং মনোয়ারা বেগম অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।

ছোটবেলা থেকেই মোহিনী দেখে এসেছেন মা বাবার মানবিক কাজগুলি। তার মা বাবা তার কাছে আদর্শ। তিনি নিজেও ওই রকম মানবিক হতে চেয়েছেন। মানবিকতা ছাড়া কোনো মানুষই প্রকৃত মানুষ হয় না। মানুষ মানেই তো মানবিক। এ কথা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন।

এরকম পরিবার শুধু ঢাকা শহর নয়, পুরো দেশেই হয়তো হাতে গোনা। এই পরিবারে জন্ম নিয়ে মোহিনী নিজেকে ধন্য মনে করেন। মোহিনী কেন, যে কোনো মানুষই ধন্য মনে করতে বাধ্য। মোহিনীর মা বাবার মানবিকতার যেমন তুলনা হয় না; তারও সেরকমই। সেই মানবিকতার কারণেই হয়তো মোহিনী আরেফিনের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন। তা না হলে জেনেশুনে এরকম একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তানকে ভালোবাসবে কেন? শুধুই কি সামান্য উপকারের জন্য? সেই উপকারের বিনিময়ে তিনি তাকে টাকা দিতে পারতেন। কিংবা কোনো দামি উপহার! তার জন্য নিজেকেই সঁপে দিতে হবে কেন?

মোহিনী অসম্ভব এক আবেগী মেয়ে। একজন কৃতজ্ঞ মানুষও। সামান্য উপকারও তাকে কেউ করলে তা তিনি ভোলেন না। তিনি সব সময় তা মনে রাখেন। তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। মোহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। টানা এক মাস তিনি ক্লাসে যেতে পারেননি। সে সময় নোট দিয়ে মোহিনীকে সহায়তা করেন আরেফিন। আরেফিনের সহযোগিতার কারণেই পরীক্ষায় তিনি ভালো ফল করেন। সেই সহায়তার কথা ভুলতে পারেননি মোহিনী।

মোহিনী যখন আরেফিনকে বলেছিলেন, তুমি যে উপকার করলে তার কোনো বিনিময় মূল্য নেই। তারপরও আমি তোমাকে কিছু উপহার দিতে চাই। তুমি আমার কাছে কি চাও? তুমি যা চাইবে আমি সম্ভব হলে তাই দেবো। মন থেকে বলবে।

আরেফিন বলেছিলেন, তুমি অভয় দিলে বলতে পারি। যদিও চাওয়াটা অনেক বড়। বলতে পারো, আমি দুঃসাহস দেখাচ্ছি। তারপরও আমি বলতে চাই।

মোহিনী আরেফিনকে অভয় দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তুমি নির্ভয়েই বলো আরেফিন। আমি কিছু মনে করব না।

আরেফিন তার ভয়, লজ্জা সবকিছুকে দূরে ঠেলে বুকে সাহস নিয়ে বলেছিলেন, আমি তোমাকেই চাই। আর কিছুই আমি চাই না। শুধু তোমাকে।

মোহিনী খুব ভালো করেই জানতেন, আরেফিনের পরিবারে সে-ই একমাত্র শিক্ষিত। তার ভাইবোনরা কেউ হাইস্কুলের গণ্ডিতেও পা রাখতে পারেনি। দরিদ্র পরিবার বলে তার মা বাবা অন্য ভাইবোনদের পড়াতে পারেনি। ওই পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব কল্পনাতীত ব্যাপার। মোহিনী কখনোই ওর মা বাবাকে বলতে পারবেন না। তার মা বাবা কিছুতেই মানবেন না। তাদেরকে আরেফিনের পরিবার সম্পর্কে বললে তারা ভীষণ কষ্ট পাবেন। এই কষ্ট কখনোই তাদের মন থেকে যাবে না।

মোহিনী তার মা বাবাকে অসম্ভব পছন্দ করেন। তাদের কথার বাইরে কখনোই তিনি যাননি। কোনো কিছুই করেননি। মা বাবা তার অন্তপ্রাণ। সেই মা বাবাকে আরেফিনের পরিবারে কথা গোপন রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। তারপরও যখন তারা আরেফনের পরিবার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলেন তখন মোহিনী বলেছিলেন, আমি কি পরিবারকে বিয়ে করব; নাকি আরেফিনকে? পরিবার দেখার দরকার নেই। তোমরা আরেফিনকে দেখ।

এক রকম মা বাবার অমতেই মোহিনী আরেফিনকে বিয়ে করেন। মোহিনীর মা বাবা এতে ভীষণ কষ্ট পান। সেই কষ্ট সহ্য করেও মেয়ের ভালোলাগার বিষয়টি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তারা বলেন, মেয়ের ভালো লাগা মন্দ লাগা তার অভিরুচির ব্যাপার। সেখানে তো আমরা জোর খাটাতে পারি না! তারা জোর খাটানওনি। মেয়ে যাতে ভালো থাকে সেদিকটায় তারা নজর দিয়েছেন। মেয়েকে গাড়ি এবং ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন।

মোহিনী অবশ্য নিজের যোগ্যতা দিয়েই সু ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন। সেখান থেকে তিনি সামান্যই বেতন নিতেন। বলা চলে মাসিক সম্মানী। নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া তাও নিতেন না। মোহিনীর সম্মানীর বেতনের টাকা দিয়ে গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে। মোহিনীর বাবা জোর করে কিনিয়েছে; এই যা! বিষয়টি আরেফিন খুব ভালো করেই জানে। এটা জানার পর আরেফিন কেন যে কোনো ছেলেই মোহিনীকে মাথায় করে রাখবে। কিন্তু আরেফিন মাথায় করে রাখা তো দূরের কথা; তিনি তাকে রীতিমতো অবহেলা করছেন। এতো কিছুর পরও আরেফিন কেন অবহেলা করবেন? কেন তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেবেন? তাকে যদি কখনো অসম্মান করা হতো তাহলেও তিনি বলতে পারতেন!

মোহিনী আরেফিনের আচার আচরণে সত্যিই বিস্মিত। যে মানুষটিকে তিনি এতো ভালোবাসা দিয়েছেন; সে মানুষের এমন আচরণ সহ্য করার মতো নয়।

তাছাড়া আরেফিনের পারিবারিক দুরবস্থার কথা মোহিনী জানার পর তাকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু আরেফিনের বাবা তার ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাননি। কেন পাঠাননি তা নিয়ে অবশ্য মোহিনী আরেফিনের সঙ্গে দুচার কথা বলেছেন। মোহিনী কথা, আমি টাকা দিয়েছি তো তোমার ভাইবোন যাতে স্কুলে যায়; লেখাপড়াটা অব্যাহত রাখে সেজন্য। তাদের টাকা পয়সা আরো লাগলে বলতে পারতেন!

আরেফিন এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। মোহিনীও এর এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেননি। অথচ আরেফিন হঠাৎ করেই পাল্টে গেলেন। তার আচার আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো। তিনি মোহিনীর সঙ্গে এমন আচরণ শুরু করলেন যা মোহিনী মানতে পারেন না। যদিও প্রথম দিকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। আরেফিনকেও বুঝিয়েছেন, মোহিনীর কানটা পছন্দ আর কোনটা পছন্দ নয়। ওকে আসলে সভ্যতা ভব্যতা শেখানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আরেফিন গোবরে পদ্মফুলের মতোই। পরিবারের একমাত্র ‘গুণধর’ পুত্র। পরিবার থেকে যা শিক্ষা পাওয়ার কথা, তা তো পায়নি। তাই তিনি স্ত্রীর মর্যাদা দিতে জানেন না। এটাই মোহিনী তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন। আরেফিন তা মোটেই কানে তোলেননি।

মোহিনীর এক কথা, আরেফিন যদি তাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে তাহলে তো তার ত্রুটিগুলি শোধরানোর কথা। আরেফিন তার বদ অভ্যাসগুলো কেন পাল্টাতে পারছেন না। তিনি কি চেষ্টাই করছেন না! নিশ্চয়ই। চেষ্টা করলে না পারার কি আছে? মানুষের চেষ্টার অসাধ্য কি কিছু আছে?

মোহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি সরাসরি আরেফিনের সঙ্গে কথা বলবেন। তার জন্য সংসার করতে ভালো না লাগে তাহলে তিনি খোলাখুলি বলতে পারেন। অশান্তির সংসার শুধু শুধু টেনে নেয়ার মানে হয় না। কেন, কার জন্য?

মোহিনী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় বারটা। আজও আরেফিন বাসায় ফেরেননি। তার মোবাইলে ফোন দিয়েছেন কয়েকবার। ফোনটা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তার মানে পুরনো অভ্যাস। তিনি বাসায় ফিরতে দেরি করলেই ফোন বন্ধ রাখেন। একটা ফোন দিয়ে জানাতেও তো পারেন যে, তার দেরি হবে। না, তাও জানাবেন না। স্ত্রীকে উদ্বিগ্ন রাখতে তিনি মজা পান।

মোহিনী মনে মনে ভাবেন, না না! আমি দিনের পর দিন এটা সহ্য করব না। ও আজ ফিরুক। তারপর ওর সঙ্গে বোঝাপড়া হবে। আজ ওর একদিন, কি আমার একদিন!

মোহিনী শোবার ঘর থেকে বারান্দায় যান। বাইরের দিকে উঁকি দিতেই বর্জপাতের শব্দে তিনি লাফিয়ে ওঠেন। এমন শব্দ যেন কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার অবস্থা হয়। এরমধ্যে বিদ্যুতও চলে যায়। মোহিনী ভীষণ ভয় পেয়ে যান। তিনি ভয়ে ভয়ে অন্ধকার ঘরে ঢোকেন। আবারও আকাশ ভেঙেপড়া বর্জপাতের শব্দে তিনি দুই কানে হাত দিয়ে বসে পড়েন। ভয়, শঙ্কা আর অস্থিরতা তাকে পেয়ে বসে।

বাইরে থেকে বাতাসের সঙ্গে ধুলোবালি ঢুকতে থাকে। অন্ধকারে মোহিনী কী করবেন কিছুই বুঝতে পারেন না। তিনি এদিক সেদিক ছোটাছুটি করেন। তার চোখেও ধুলোবালির কণা ঢুকে পড়ে। তিনি ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে বলেন, ও মাই গড! এসব কী শুরু হলো! এ তো দেখছি মহাবিপদ! চার্জার লাইট কোথায় রেখেছি তাও তো মনে নেই। হায় আল্লাহ! কি করবো আমি এখন? আল্লাহ, তুমি রহমত করো!

অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর চার্জার লাইটটি পেয়ে মোহিনী ভীষণ খুশি। তিনি লাইট জ্বলিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, যাক বাবা, আলোটা তো পাওয়া গেলো! আগে জানালাগুলো বন্ধ করি। হঠাৎ এতো ঝড়! চৈত্র মাসে কালবৈশাখী!

মোহিনী জানালা বন্ধ করতে না করতেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। তুমুল ঝড়ের সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। যেন আকাশ ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টির ছাট আছড়ে পড়ছে জানালায়। জানালা দিয়ে সেই পানি চুইয়ে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিছানা ভিজে একাকার হয়ে গেছে। মোহিনী অনেক কষ্টে জাজিম তুলে দিয়েছেন। ততক্ষণে তোশক ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে।

কিছুক্ষণ পরপর ভয়ঙ্কর শব্দে বর্জপাত হচ্ছে। মোহিনী বর্জপাতের শব্দে চমকে চমকে উঠছেন। ভয়ে তার বুক কাঁপছে। এতো ভয় আগে কখনো পাননি তিনি। এ সময় আরেফিন বাইরে। তার ভীষণ বিরক্ত লাগছে। আবার খারাপও লাগছে। কোথায় আছেন আরেফিন তা নিয়ে দুশ্চিন্তাও হচ্ছে তার।

মোহিনী ওর মাকে ফোন দেয়ার জন্য টেলিফোন হাতে নেন। বাসার ল্যান্ডফোনটিও ডেড হয়ে আছে। তিনি এবার মোবাইল হাতে নিয়ে তার মাকে ফোন দেন। তার কাছে পরিস্থিতি জানতে চান।
মোহিনীর মা আনোয়ারা বেগম উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন, মা তুই কেমন আছিস মা! প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেছে দেড় ঘণ্টা আগে। কি যে অবস্থা!

আছি, ভালো আছি মা। আমার কেন জানি ভয় লাগছে। খুব ভয় লাগছে।
কেন মা?

মা মেয়ে কথা বলার সময়ও প্রচন্ড শব্দে বর্জপাত হচ্ছিল। আতঙ্কে তাদের কথা বলাই যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আনোয়ারা বেগম আরেফিনের কথা জানতে চাইতেই মোহিনী তার কথা এড়িয়ে যায়। সে তার বাবার কথা জানতে চায়।

আনোয়ারা বেগম মোবাইল ফোনটি মোহসীন আহমেদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, এই ধরো, মোহিনী কথা বলবে। ওর নাকি ভয় লাগছে।

মোহসীন আহমেদ ফোন ধরেই বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বললেন, কি রে মা! ভয় লাগছে তোর? আরেফিন নেই?

মোহিনী ওর বাবার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো তার কাছেই জানতে চাইলেন, বাবা, তোমরা কেমন আছো সেটা বলো?

আমরা ভালো আছি মা। শোন, দরজা-জানালা সব ভালো করে বন্ধ করে দে। ঝড়টা কিন্তু ভয়ঙ্কর!

হ্যাঁ বাবা। বন্ধ করেছি। তোমাদের ওই দিকে বৃষ্টি হচ্ছে?

হুম। বৃষ্টি হচ্ছে মানে! এতো বৃষ্টি আমি খুব শিঘ্র দেখিনি।

আমাদের এখানে বিদ্যুৎও নেই। কী যে অবস্থা! ডিনার করেছিস?

না বাবা।

যা অবস্থা দেখছি, এই ঝড় সহসা থামবে না। খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়।

এরমধ্যে ঘুম আসবে? আমার খুব অস্থির লাগছে। বুকটার মধ্যে কেমন ধরফর করছে। কিছুই ভালো লাগছে না।

আরেফিন বাসায় নেই?

বাবা, আমি এখন রাখছি। পরে কথা বলছি।

তড়িঘড়ি করে ফোন রেখে দেন মোহিনী। তিনি আরেফিনের জন্য চিন্তা করেন। তিনি এই ঝড়বাদলের মধ্যে কোথায় আছে তা নিয়ে ভাবেন। আবারও আরেফিনের মোবাইলে ফোন দিয়ে দেখেন। ফোন বন্ধ পেয়ে বিরক্তির সঙ্গে বলেন, কেন ও ফোন বন্ধ রেখেছে? এটা কোনো কথা হলো!

মোহিনী উদ্বেগ আর আতঙ্ক নিয়ে রান্না ঘরে যান। একটা প্লেটে ভাত, মাছ ও মুরগীর ঝোল নিয়ে নিজের ঘরে যান। খাবার টেবিলে বসে কোনো মতে খাবারটা শেষ করেন। তারপর তিনি নিজের ঘরে এসে বিছানার এক পাশে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকেন। নানা দুর্ভাবনা তার মনকে আচ্ছন্ন করে। এক পর্যায়ে তিনি ঘুমের ঘোরে তলিয়ে যান।

 

চলবে....

 

আরও পড়ুন:

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

 

Header Ad
Header Ad

পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’: ভারত

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গে সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রকাশের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লি থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মন্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বলেন, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে মন্তব্য এসেছে, তা ভিত্তিহীন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে নিপীড়ন চলে আসছে, তার প্রতি ভারতের দীর্ঘদিনের উদ্বেগের সঙ্গে এই বিষয়টির তুলনা টানার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা একেবারেই অসৎ প্রচেষ্টা। এমনকি যেসব অপরাধী ওইসব ঘটনায় জড়িত, তারা আজও বিচার এড়িয়ে চলেছে।”

এর আগে ৮ এপ্রিল, ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সুরক্ষা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

এই মন্তব্যকেই ‘হস্তক্ষেপমূলক’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশকে দায়ী করেছেন। গত ১৬ এপ্রিল নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে এক সভায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একসঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি ছড়িয়েছেন।”

প্রসঙ্গত, নতুন ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আগুন লাগানো, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সড়ক অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।

এই ইস্যু শুধু পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়—উত্তর প্রদেশসহ ভারতের আরও কিছু রাজ্যেও সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ এবং নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

Header Ad
Header Ad

দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা

পুলিশ কনস্টেবল শামীম হোসেন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত পুলিশ কনস্টবল শামীম হোসেন (৩০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে সহকর্মীরা শয়নকক্ষের জানালা দিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।

নিহত শামীম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে। তার কনস্টবল নং ৫৩২।

চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ এসআই রমজান আলী জানান, শামীম হত অক্টোবরে দর্শনা ইমিগ্রেশনে যোগদান করে। যোগদানের পর থেকেই গত ৬ মাস ধরে নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের ২য় তলার একটি কক্ষে বাস করে আসছিলেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় কয়েকজন সহকর্মী খোঁজ নিতে গেলে শামীম হোসেনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।

খবর পেয়ে সকালে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, সহকারী পুলিশ সুপার দামুড়হুদা -জীবননগর) সার্কেল জাকিয়া সুলতানা, দর্শনা থানার ওসি শহীদ তিতুমীর ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর বেলা ১১ টায় মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে আত্মহত্যা। তবে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

পুলিশ কনস্টেবল শামীম হোসেন ২০১৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে।

Header Ad
Header Ad

দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর আত্রাইয়ে বিষ প্রয়োগ করে দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে সানজিদা (১৬) নামে এক কিশোরীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন নিহত কিশোরীর স্বজনেরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত কিশোরীর মামা ফজলুর রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে ওই কিশোরীর মা খুশি বেগম, নানা মোসলেম প্রামাণিক, চাচা সাইফুল ইসলাম মন্ডল, মামা হামিদুল প্রামাণিক উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্য ফজলুর রহমান বলেন, নিহত কিশোরী সানজিদা আত্রাই উপজেলার আন্দার কোটা গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শামসুল মন্ডলের মেয়ে। সানজিদা উপজেলার ঘোষগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা কাজের সূত্রে দীর্ঘদিন ধরে সৗদি আরবে ও আরব আমিরাতে (দুবাই) অবস্থান করছেন। শামসুল মন্ডলের স্ত্রী খুশি বেগম মেয়ে সানজিদাকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে বাস করে আসছিলেন। শামসুল বসতবাড়ির বসতভিটার উত্তর পাশে বাবা মোসলেম মন্ডলের কাছ থেকে জমি কিনে নিয়ে ৪ বছর আগে মাটির বাড়ি তৈরি করেন। সেই বাড়িতেই সানজিদা ও তার মা বসবাস করতো। পরে ওই জায়গায় পাকা বাড়ি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করলে শামসুলের বাবা মোসলেম ও ভাই সাজিম মন্ডল বাঁধ সাজে। সানজিদার দাদা শামসুলকে বসতভিটার উত্তর পাশে পাকা বাড়ি না করে দক্ষিণ পাশে নীচু জায়গায় বাড়ি করার জন্য বলে আসছিল। এ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। সানজিদার বাবা ও ভাই বিদেশে থাকায় বাড়ি করা নিয়ে বিরোধের জেরে সানজিদা ও তার মায়ের সঙ্গে তাঁর দাদা মোসলেম ও চাচা সাজিমের প্রায় পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো। এই কলহের জেরে দাদা মোসলেম মন্ডল ও সাজিম মন্ডল হত্যার উদ্দেশ্যে গত ৯ এপ্রিল হত্যার উদ্দেশ্যে সানজিদার শরীরে বিষ প্রয়োগ করে। পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ এপ্রিল রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে সানজিদা বলে গেছে তার দাদা ও চাচা তাঁর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করেছে। তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করা আছে। এ ঘটনায় রাজশাহী রাজপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে মোসলেম মন্ডল ও সাজিম মন্ডল পলাতক রয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, গত ৯ এপ্রিল সকালে সানজিদা প্রাইভেট পড়ার জন্য ঘোষগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ে যায়। প্রাইভেট পড়ে সে বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে আসে। এ সময় সাংসারিক কাজে সানজিদার মা খুশি বেগম বাড়ির বাইরে ছিলেন। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে সানজিদার দাদা মোসলেম ও চাচা সাজিম সানজিদার ঘরের ভেতরে যায়। দাদা মোসলেম সানজিদার পাশে বসে একপর্যায়ে তাকে জাপটে ধরে এবং চাচা সাজিম পকেট থেকে বিষের ইনজেকশন বের করে তার বাম হাতের শিরায় জোর ইনজেকশন প্রয়োগ করে। তারা সানজিদাকে হুমকি দিয়ে বলে এ কথা কাউকে বললে তার মতো বাবা ও ভাইকেও হত্যা করবে। সানজিদার মা খুশি বেগম বাড়িতে এসে মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় মেয়েকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ওই দিনই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল রাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সানজিদার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত মোসলেম ও সাজিমের ফাঁসি দাবি করা হয়।

সাজিম মন্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে তা বন্ধ পাওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাবুদ্দীন বলেন, ‘যে মেয়েটি মারা গেছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় যোগাযোগ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় রাজশাহী রাজপাড়া থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। সেখানেই নিহত কিশোরীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’: ভারত
দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা
দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ
গত ৯ মাসে এক আকাশ ভালোবাসা অর্জন করেছি : প্রেসসচিব
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজে আগ্রহ দেখায়নি বেসরকারি চ্যানেল, দেখাবে বিটিভি
সন্ত্রাসী তালিকা থেকে তালেবানকে বাদ দিলো রাশিয়া
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, জানালেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
ব্রাজিলের ভক্তদের ‘বানরের’ সঙ্গে তুলনা, নিষেধাজ্ঞার মুখে আর্জেন্টিনা
নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?
জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ
সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক
কোলের সন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা
চুয়াডাঙ্গায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দু’জন নিহত
ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩৮
হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪
সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
গাইবান্ধায় মাদক মামলায় ৩ যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
তোপের মুখে ওয়াক্‌ফ আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
নিজেকে বরিশাল সিটির মেয়র ঘোষণার দাবিতে মামলা করলেন ফয়জুল করীম