মাসিকের সময় পরিচ্ছন্ন থাকার টিপস
মাসিক বা ঋতুচক্র নিয়মিত স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। এটি শারীরিক গঠন বা প্রক্রিয়ার অংশ। যদিও এখনো আমাদের অনেকের কাছেই এটি ট্যাবুর মতো। অনেকেই এটিকে গোপন বা লজ্জাজনক বিষয় মনে করেন। তাই এ সময় পরিচ্ছন্নতার থেকে বেশি নজর দেয় গোপনীয়তার দিকে। কেউ যদি বুঝে যায় তার মাসিক হয়েছে এই ভয়ে, অনেকেই ন্যাপকিন বদলাতেও চান না।
এমনও হয় সারাদিন একই ন্যাপকিন ব্যবহার করছেন। অথচ এ ন্যাপকিন বদলানোর নির্দিষ্ট সময় রয়েছে সে বিষয়ে অনেকেই জানেন না। বিশেষ করে গ্রাম ও ছোট শহরগুলোতে মেয়েরা এখনো তাদের মাসিকের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড়ের টুকরা বারবার ব্যবহার করে থাকে। মাসিক হওয়াকে এখনো অশুচি বা অপরিষ্কার হিসেবে মানা হয়। অথচ এ সময় নারীদের পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। মাসিকের সময় স্বাস্থ্যকর থাকার কিছু পরামর্শ বা টিপস জেনে নিই।
* আগে মাসিকের সময় নারীরা সাধারণত কাপড় ব্যবহার করলেও বর্তমানে নানা ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- স্যানিটারি ন্যাপকিন, ট্যাম্পনস ও মেন্সস্ট্রুয়াল কাপ। তবে এর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো স্যানিটারি ন্যাপকিন। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে মাসিকের প্রবাহমাত্রার উপর নির্ভর করে পদ্ধতি নির্বাচন জরুরি। ট্যাম্পন ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এটার সর্বনিম্ন শোষণ ক্ষমতা কত এবং তা আপনার প্রবাহমাত্রা বা প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত কি না। দ্রুত ব্র্যান্ড পরিবর্তন করা অনেক সময় অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কারণ প্রত্যেকটা ব্র্যান্ড আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে এবং আপনার সেটা পছন্দ নাও হতে পারে।
* একেক জনের মাসিকের স্থায়িত্ব একেক রকম হয়। তবে সবার ক্ষেত্রে মাসিকের শেষের দিকে যখন কম রক্তস্রাব হয় তখন শরীরের মাধ্যমে আক্রমণ হতে পারে। যদি ব্যবহৃত ন্যাপকিনটি স্যাঁতস্যাঁতে হয় তাহলে যোনির মধ্যে থাকা অণুজীবগুলো ঘামের মাধ্যমে যৌনাঙ্গে যেতে পারে। যখন অণুজীবগুলো উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ পায় তখন এরা বংশবৃদ্ধি করতে থাকে, যার ফলে ইউরেনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন ও স্কিন র্যাশ হতে পারে।
*প্যাড বা ন্যাপকিন পরিবর্তন করার সঠিক সময় ৬ ঘণ্টা পর পর। কিন্তু ট্যাম্পন বদলাতে হয় দুই ঘণ্টা পর পর। এটি পরিবর্তনের সময় আপনার প্রয়োজনের সঙ্গে সম্পর্কিত। কোনো নারীর রক্তপ্রবাহ বেশি হলে দ্রুতই পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, আবার কারো জন্য সেটা পরিমাণে অল্প হয়। আবার অনেক সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পন যদি পুরোপুরি না ভেজে বা ব্যবহৃত নাও হয় তবু নির্দিষ্ট সময় অন্তর আপনাকে অবশ্যই এটি পরিবর্তন করতে হবে। ট্যাম্পন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ভ্যাজাইনার ভেতর ঢুকানো থাকে যা দীর্ঘ সময় থাকলে টক্সিক শক সিন্ড্রোম বা টিএসএস-এর মতো অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে শরীরের ভেতর ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে মারাত্মক সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে।কখনো কখনো মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে।
* মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত ভ্যাজাইনা ও আশেপাশের ত্বকে লেগে থাকে যা অবশ্যই নিয়মিত ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে ভ্যাজাইনার আশেপাশে দুর্গন্ধ থাকেনা। সুতরাং এটি খুব জরুরি যে যখন প্যাড বা ন্যাপকিন পরিবর্তন করা হয় তখন অবশ্যই ভ্যাজাইনা ও ল্যাবিয়া ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যদি ধোয়া না হয় তাহলে ভেজা রুমাল বা টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে।
* ভ্যাজাইনা পরিষ্কার রাখার নিজস্ব কৌশল রয়েছে, যা এত ভালো কাজ করে যে ভালো ও খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলোর ভারসাম্য নিজেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। সাবানের ব্যবহার ভ্যাজাইনার ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলে এবং সংক্রমণের দিকে যাবার রাস্তা তৈরি করে। সুতরাং যোনি ও এর আশেপাশে নিয়মিত পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার রাখা গুরুত্বপূর্ণ এবং এক্ষেত্রে একটু উষ্ণ গরম পানি ব্যবহার করা প্রয়োজন। কিন্তু সাবান ব্যবহার করা যাবে না।
*ধোয়ার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন ভ্যাজাইনা থেকে মলদ্বার পর্যন্ত হয়। কখনোই বিপরীত অভিমুখে পরিষ্কার করা যাবে না। কারণ এতে মলদ্বারের ব্যাকটেরিয়া ভ্যাজাইনা ও মূত্রনালির পথে গিয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
* এক সময়ে কেবলমাত্র একটি পদ্ধতি বা মাধ্যম ব্যবহার করা জরুরি। যাদের মাসিকের রক্তপ্রবাহ অনেক বেশি থাকে তারা অনেকেই এ সময় কয়েকটা পদ্ধতিতে প্যাড বা ট্যাম্পন ব্যবহার করে থাকেন- দুইটা স্যানিটারি প্যাড, একটা ট্যাম্পন ও স্যানিটারি প্যাড, একটা স্যানিটারি প্যাড সঙ্গে একটা কাপড়ের টুকরা। এটি একেবারেই ভালো নয়। এতে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* প্রত্যেক নারীর মাসিকের জন্য আলাদা প্রস্তুতি থাকা জরুরি। এ সময় অতিরিক্ত স্যানিটারি প্যাড বা ট্যাম্পন একটা পরিষ্কার থলি বা পেপারের ব্যাগে সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া একটা নরম তোয়ালে, কিছু পেপার টিস্যু, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ছোট বিন ব্যাগ, কিছু স্বাস্থ্যকর নাস্তা, এক বোতল পানি, একটি অ্যান্টিসেপটিক টিউব, ব্যথার ওষুধ (ডাক্তারের পরামর্শ মতো) সঙ্গে রাখতে হবে।
এসএন