আসক’র উদ্বেগ, পরিবারের নিরাপত্তা দাবি
বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের জামিন দুইবার প্রত্যাখ্যান!

মুন্সিগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে স্কুল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁর জামিনের জন্য দু’বার আবেদন করা হলেও জামিন মঞ্জুর করা হয়নি। শিক্ষকের পরিবার তীব্র আতংক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আসক উক্ত শিক্ষকের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছে। একইসাথে নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। পাশাপাশি আসক শিক্ষকের পরিবারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহবান জানাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ ও দাবি জানানো হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, গত ২০ মার্চ ২০২২, মুন্সীগঞ্জে জেলা সদরের বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক- হৃদয় চন্দ্র মন্ডল দশম শ্রেণির মানবিক শাখার ক্লাস নিচ্ছিলেন। সেখানে একটি বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের পক্ষে-বিপক্ষে কথোপকথন হয়। একপর্যায়ে এক শিক্ষার্থী ওই কথোপকথন রেকর্ড করে যা পরবর্তীতে এলাকার অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে স্কুল থেকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে একপর্যায়ে সেখানে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বাইরে থেকে এসে লোকজন অংশ নেয় বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়। আরো জানা যায়, স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘ধর্ম অবমাননা’র নামে মামলা করেন।
শিক্ষক হৃদয়ের পরিবারের অভিযোগ যে উক্ত শিক্ষককে ফাঁসানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ‘ধর্ম অবমাননা’র ন্যায় স্পর্শকাতর অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর পরিবার বর্তমানে চরম ভীতি ও আতংকের মধ্যে রয়েছেন। সামাজিকভাবে হয়রানির ভয়ে উক্ত শিক্ষকের ছেলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
আসক-এর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এটি স্পষ্ট যে এ ঘটনায় একটি অপশক্তির ইন্ধন রয়েছে যারা ধর্মকে পুঁজি করে বিদ্বেষ আর উত্তেজনা তৈরি করছে। আসক মনে করে, গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে অবিলম্বে মুক্তি প্রদান এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি এ ঘটনার সাথে কারা জড়িত, এক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা কি ছিল- সে বিষয়টি দ্রুততার সাথে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয়। এ ধরণের ঘটনা শিক্ষকদের মধ্যে শঙ্কা ও উদ্বেগের উদ্রেক ঘটাবে, যা বিজ্ঞান শিক্ষা, জাতির বিকাশ ও উন্নয়নে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আরও পড়ুন : বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের মুক্তি ও দোষীদের শাস্তি দাবি নির্মূল কমিটির
সাম্প্রতিক ধর্মান্ধতার ঘটনায় বিশিষ্ট নাগরিকদের উদ্বেগ
এপি/
