‘একটা ভালো নির্বাচন দেশের মর্যাদা বাড়াবে’
একটা ভালো নির্বাচন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। ঢাকাপ্রকাশ-কে দেওয়া একান্ত সাৎক্ষাতকারে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা মনে প্রাণে চান আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক। এজন্য তিনি সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের এ বিষয়ে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকাপ্রকাশ: বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে আসবে না? বিএনপি ছাড়া কি নির্বাচন হবে?
ড. আব্দুর রাজ্জাক: আমরা বার বারই একটা কথা বলছি, আমরা কোন সময়ই বলি না বিএনপি কোন ছোট রাজনৈতিক দল। তাদের কোনো গুরুত্ব নাই, অবশ্যই জাতীয় রাজনীতিতে তাদের একটা গুরুত্ব রয়েছে। যদিও তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিপক্ষের দলগুলো, যারা প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে। অনেক বিষয়েই তারা এক সঙ্গে কাজ করে। বিএনপি একটা বড় রাজনৈতিক দল। জাতীয় পর্যায়ে তাদের অনেক গুরুত্ব আছে। রাজনৈতিক আদর্শ যাই হোক। একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে তাদের অংশগ্রহণ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি যে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দর নিরপেক্ষ হয়; সেরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা।
ঢাকাপ্রকাশ: তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে কোনো কাজ করছে সরকার?
ড. আব্দুর রাজ্জাক: না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। তবে সেদিন দেখলাম মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছে আসনের সুষম বন্টন হওয়া দরকার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে তারা নির্বাচনে আসবে। আন্দোলন তারা করে যাবে। আমরা শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা করব তাদের নির্বাচনে আনার জন্য।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, সামাজিকভাবে যারা প্রভাবশালী ব্যক্তি সবার সহযোগিতা চাই; যাতে দেশে সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন হয়। দেখা যাক, পরিবেশ সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশনও সেই লক্ষ্যে কাজ করবে।
ঢাকাপ্রকাশ: জাতীয় পার্টির মহাসচিব সম্প্রতি বক্তব্যে দিয়েছেন কাজটা কিন্তু রাতে হয়। এই বক্তব্য সরকারের জন্য বিব্রতকর কি না?
ড. আব্দুর রাজ্জাক: সেটা তো খুবই দুঃখজনক। সেটা প্রত্যাশিত না। সে কি প্রেক্ষিতে সেটা বলেছে তার বিষয়। আমার নির্বাচনী এলাকায় সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। তবে আমি মনে করি সবারই শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: বিএনপি তো নির্দলীয় সরকার চায়। সেই বিষয়ে কি সরকার...
ড. আব্দুর রাজ্জাক: পৃথিবীর কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাই। নির্বাচনকালীন সরকার আসবে না, কোনো ক্রমেই এটা হবে না। যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারই রুটিন কাজ করার দায়িত্বে থাকে। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা দেওয়া আছে। তারা যদি সেটা ব্যবহার করে, যেমন ভারতে করে, ওই রকম যদি তারা করে বাংলাদেশেও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার কথা। সংবিধানের ১২৬ ধারায় স্পষ্ট লেখা আছে প্রভাব মুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব ইসিকে দেওয়া আছে। এক্সিকিউটিভ প্রধানমন্ত্রী আর মন্ত্রীরা, এমপিরা এক্সিকিউটিভ না। কিন্তু সরকার একদম আইজিপি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সদস্য পর্যন্ত সবার উপর নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব থাকবে।
নির্বাচন কমিশন যদি শক্ত হয় এবং সেইভাবে প্রতিশ্রুতি দেয়, একটা আবহাওয়া সৃষ্টি করতে পারে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব। সুশীল সমাজ, সাংবাদিক তাদের অনুরোধ করব তারাও যেন বিএনপিকে বুঝান নির্বাচনে আসার জন্য। আমি মনে করি একটা ভালো নির্বাচন করতে পারলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে। দেশের উন্নয়নেও এটা সহায়ক।
ঢাকাপ্রকাশ: বর্তমান পরিস্থিতি কীভাবে দেখছেন?
ড. আব্দুর রাজ্জাক: ইউক্রেনের যুদ্ধটা বোঝা যাচ্ছে না। এই যুদ্ধের প্রভাব তো ব্যাপক। আমরা মনে করেছিলাম তাড়াতাড়ি শেষ হবে। একটা কিছু হবে, একটা সমঝোতা হবে। সেটা তো হচ্ছে না, আরও উত্তেজনা বাড়ছে। দুই পক্ষ অনেক উত্তেজনামূলক কথা বলছে। নতুন উপাদান তাইওয়ান যুদ্ধ। দূরত্ব আরও বাড়ছে। সমস্যা তো হবেই কিছু। সার, তেলের দাম দুইগুণ চার গুণ বাড়বে এর প্রভাব তো দেশেও পড়বে।
এনএইচবি/এমএমএ/